বাংলা সাহিত্যে যশস্বী ও শক্তিমান লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। ইতিহাস ও ঐতিহ্য সচেতন এই লেখকের অধিকাংশ রচনাতেই বাংলার গ্রামীণ জীবন, বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষের প্রাত্যহিক জীবনাচার ফুটে উঠেছে নিপুণভাবে। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের জন্ম ১৯৪৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধা জেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৪ সালে তিনি বাংলায় এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনে ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এবং ঢাকা কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। পাশাপাশি মগ্ন ছিলেন লেখালেখিতে। প্রগতিশীল রাজনীতি ও সংস্কৃতির সমর্থক ছিলেন ইলিয়াস। তাঁর রচনাতে সে পরিচয় সুস্পষ্ট। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের উল্লেখযোগ্য রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে: ‘অন্যঘরে অন্যস্বর’, ‘খোঁয়ারি’, ‘দুধভাতে উৎপাত’, ‘চিলেকোঠার সেপাই’, ‘দোজখের ওম’, ‘খোয়াবনামা’, ‘সংস্কৃিতর ভাঙা সেতু’ ইত্যাদি। ইলিয়াসের রচনাশৈলীর স্বকীয় বৈশিষ্ট্য আঞ্চলিক সংলাপের ব্যবহার। বিখ্যাত উপন্যাস ‘খোয়াবনামা’র জন্য তিনি ‘সাদত আলী আকন্দ’ পুরস্কার এবং কলকাতা থেকে ‘আনন্দ পুরস্কার’ লাভ করেন।
তাঁর বেশ কিছু রচনায় ফকির সন্ন্যাসী আন্দোলন, তেতাল্লিশের মন্বন্তর, পাকিস্তান আন্দোলন, সামপ্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতি ঐতিহাসিক বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে। শ্রেণি শোষণের মধ্যে আটকে যাওয়া সমাজব্যবস্থা কতিপয় সুবিধাবাদী গোষ্ঠী কী করে রাজনৈতিক ফায়দা লুণ্ঠনের অপপ্রয়াস চালায়, ধর্মকে ব্যবহার করে নিজ স্বার্থ উদ্ধারের হীন প্রচেষ্টায় তা ইলিয়াস তাঁর রচনায় ফুটিয়ে তোলেন নিপুণভাবে। তাই লেখকের রচনায় সমাজমনস্কতা ও কালচেতনা সম্পন্ন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় খুঁজে পাওয়া যায়। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৭ সালের ৪ জানুয়ারি আখতারুজ্জামান ইলিয়াস মৃত্যুবরণ করেন।