আকাশে ওড়ার স্বপ্ন যাদের

| বুধবার , ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১ at ১১:৫২ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের মেয়ে সানজিদা, ছোটবেলা থেকেই এরোপ্লেনের প্রতি আগ্রহটা ছিল বেশি। সবসময় বাবাকে বলতেন খেলনা এরোপ্লেন কিনে দিতে, আর কিনে দিলে তা নিয়ে সারাটা দিন কাটিয়ে দিতেন।

বড় হয়েও যেন এরোপ্লেন নিয়ে কাজ করতে পারেন এমনই স্বপ্ন ছিল তার। তাই কলেজ অব এভিয়েশন টেকনোলজিতে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ভর্তি হন। সফলভাবে কলেজ অব এভিয়েশন টেকনোলজি (ক্যাটেক) থেকে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে তিনি বর্তমানে বিশ্ববিখ্যাত জার্মান এয়ারলাইন্স লুফথানসা’র এমআরও কোম্পানি লুফথানসা টেকনিকে মালটা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে এয়ারক্রাফট ইঞ্জিনিয়ার পদে কাজ করছেন। সানজিদা তার বর্তমান অবস্থানের পিছনে কলেজ অব এভিয়েশন টেকনোলজির ভূমিকা নিয়ে বলেন, “এই এভিয়েশন কলেজটির শিক্ষার পরিবেশ খুবই সুন্দর। আমি এই কলেজে বিভিন্ন এয়ারক্রাফট সম্পর্কে প্রচুর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।

ঢাকার মেয়ে নাজীয়া, ছোটবেলায় বহু খেলনা উড়োজাহাজ বানিয়েছেন। কখনো খেলনা এরোপ্লেন কিনে সারাদিন তা নিয়ে সময় কাটিয়েছেন। বড় হয়েও যেন এই পেশায় সম্পৃক্ত হতে পারেন এমনই স্বপ্ন ছিল তারও। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়ে এইচএসসি পাস করার পর নাজীয়া কলেজ অব এভিয়েশন টেকনোলজিতে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ভর্তি হন। বর্তমানে নাজীয়া যুক্তরাষ্ট্রে চার লাখ টাকা বেতনে বিমান কোম্পানি প্লেইনফিল্ডে ইন্ডিয়ানা বিমানবন্দরে কাজ করছেন এয়ারক্রাফট অ্যাসোসিয়েট ইঞ্জিনিয়ার ফ্লাইট সায়েন্স পদে।

নাজীয়া তার বর্তমান অবস্থানের পিছনে কলেজ অব এভিয়েশন টেকনোলজির ভূমিকা নিয়ে বলেন, “এই এভিয়েশন কলেজটির বিএসসি ইন অ্যারোনটিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং হলো বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত চার বছরের অনার্স কোর্স যেখানে আট সেমিস্টার পড়াশোনা করে আপনি এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং, এভিওনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, এয়ারক্রাফট ইঞ্জিনিয়ারিং, এয়ারলাইন্স ইঞ্জিনিয়ারিং, এয়ারপোর্ট ইঞ্জিনিয়ারিং, এয়ারপোর্ট ডিজাইন এন্ড প্ল্যানিং, স্যাটেলাইট, স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং, রোকেট্রি, রাডার সিস্টেমস, রিমোট কন্ট্রোল সেন্সিং সিস্টেমস, হিউমান মেকানিক্স, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেমস, এয়ারক্রাফট মেইনটেনেন্স ম্যানেজমেন্ট, এয়ারক্রাফট ডিজাইন, গ্যাস টারবাইন ইঞ্জিন ডিজাইন এন্ড মেইনটেনেন্স, রেডিও ইলেকট্রিকাল সিস্টেমস, এয়ারক্রাফট ইন্টেরিওর , জেট ইঞ্জিন ডিজাইন, জেট ইঞ্জিন মেইনটেনেন্স, থার্মাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটেশনাল ফ্লুইড ডাইনামিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, স্পেসক্রাফট কনস্ট্রাকশন এন্ড ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারিং, পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, রাডার ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রপালশন ইঞ্জিনিয়ারিং, থার্মোডাইনামিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, রোবোটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, অটোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ারিং, এরোডায়নামিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটেশনাল ফ্লুইড ডায়নামিক্স, রেডিও টেকনোলজি, স্যাটেলাইট এন্ড টেলিকম্যুনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিসিএস, সরকারি ও বেসরকারি সেক্টরে কাজ করতে পারবে।”

এখানে বিএসসি ইন ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স এন্ড মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ৬০ ক্রেডিট অধ্যয়ন করলে ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স এন্ড মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বিসিএস, সরকারি ও বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে চাকরির সুযোগ পাওয়া যাবে।

বিজনেস স্টাডিজ বিভাগ থেকে জিপিএ পাঁচ পেয়ে এইচএসসি পাস করার পর কলেজ অব এভিয়েশন টেকনোলজিতে এভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে ভর্তি হন চট্টগ্রামের আরিফা আক্তার।

তিনি বলেন, “ছোটবেলা থেকেই মনে স্বপ্ন ছিল এয়ারলাইন্সে কাজ করার। তাই এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করেছি এবং বর্তমানে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে কাজ করছি।”

আরিফা বলেন, “বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে এভিয়েশন সেক্টরে দিন দিন ক্যারিয়ার প্রসারিত হচ্ছে। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে নিত্যনতুন বিষয়ও যোগ হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থায়। শিক্ষার্থীদের সামনে পেশাজীবনে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন সম্ভাবনা। তরুণরো খুঁজে পাচ্ছে নতুন দিকনির্দেশনা। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে বেশ কিছু বিষয়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বিবিএ (অনার্স) ইন এভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট।”

তিনি জানান, বিবিএ ইন এভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট হলো বিমানবন্দর, এয়ারলাইন্স,এভিয়েশন হসপিটালিটি, বিমান ম্যানেজমেন্ট বা ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত চার বছরের অনার্স কোর্স। এখানে আট সেমিস্টার পড়াশোনা সম্পন্ন করে আপনি বিমানবন্দর অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, অপারেশন, এয়ারলাইন্স মার্কেটিং, অ্যাকাউন্টিং, ফিন্যান্স, এয়ার হোস্টেস, এয়ারলাইন্স অপারেশন, বিমানবন্দরে যাত্রী সেবা, ই-কমার্স, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, এয়ারলাইন্স ব্যবস্থাপনা, বিমানবন্দরে কাস্টমস, ই-টিকেটিং সহ, জিডিএস প্রোগ্রামে বিসিএস, সরকারি ও বেসরকারি সেক্টরে কাজ করতে পারবেন। এখানে বিবিএ’র ৬০টি ক্রেডিট পড়াশোনা করবেন যা আপনাকে ব্যাংক, মোবাইল অপারেটর কোম্পানি, বীমা, বিক্রয় ও বিপণন, বিসিএস, সরকারি ও বেসরকারি সেক্টরে সব ধরনের চাকরি পেতে সুযোগ দেবে।

বিজনেস স্টাডিজ অথবা মানবিক অথবা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে শুধু এই বছর অথবা পূর্ববর্তী বছর এইচএসসি/‘এ’ লেভেল পাস করা শিক্ষার্থীর বিবিএ এভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট অনার্স কোর্সে আবেদন করতে এইচএসসিতে ন্যূনতম ৩.৫০ জিপিএ থাকতে হবে।

আগ্রহী প্রার্থীর এইচএসসিতে অ্যাকাউন্টিং অথবা বিজনেস অর্গানাইজেশন এন্ড ম্যানেজমেন্ট অথবা অর্থনীতি অথবা ফিন্যান্স, ব্যাংকিং এন্ড ইন্স্যুরেন্স অথবা প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট এন্ড মার্কেটিং অথবা স্ট্যাটিসটিক্স অথবা অর্থনীতি অথবা উচ্চতর গণিতের মধ্যে যেকোনো একটি বিষয়ে ন্যূনতম ৩.০০ থাকতে হবে।

কলেজ অব এভিয়েশন টেকনোলজিতে পড়াশোনা করে অনেক শিক্ষার্থী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জার্মানির বিভিন্ন স্বনামধন্য কোম্পানিতে চাকরি করছেন। অনেকে বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্কলারশিপে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করছেন।

এদেশে বিবিএ (অনার্স) ইন এভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট ও বিএসসি (অনার্স) ইন অ্যারোনটিক্যাল এবং এভিয়েশন সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সর্বপ্রথম চালু হয় কলেজ অব এভিয়েশন টেকনোলজিতে।

আগ্রহী শিক্ষার্থীরা বিস্তারিত তথ্যের জন্য ০১৯২৬৯৬৩৬৫৩ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন অথবা ক্লিক করতে পারেন www.facebook.com/Collegeofaviationtechnology

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুপুরে চালু, বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় রাতেই প্রত্যাহার
পরবর্তী নিবন্ধশিক্ষার্থী ও শিক্ষা ভাবনা