নির্বাচন কমিশন আগামী নভেম্বর থেকে পৌরসভা নির্বাচন করার ঘোষণা দেওয়ায় সীতাকুণ্ড পৌরসভায় মাঠে তৎপর হয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। দলীয় সমর্থন পেতে শুরু হয়েছে একাধিক প্রার্থীর দৌড়ঝাঁপ। চলছে নানা হিসেব নিকেষ। নিজে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি দলের শীর্ষ নেতাসহ এলাকার ভোটারদের কাছে প্রকাশ করছেন। দলীয় অনুসারী নেতাকর্মীদের নিয়ে ঘরোয়া বৈঠকের পাশাপাশি ওয়ার্ডের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়েও জনসংযোগ করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। দলীয় সমর্থন নিশ্চিত করতে প্রভাবশালী ও শীর্ষ নেতাদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
সীতাকুণ্ড পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তবে বিএনপি প্রার্থীরা এখনও সরাসরি মাঠে নামেননি।
জানা যায়, ১৯৯৮ সালে ১ এপ্রিল ২৮ বর্গমাইল আয়তন নিয়ে সীতাকুণ্ড পৌরসভা গঠিত হয়। ভোটার রয়েছেন প্রায় ২৮ হাজার। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর এই পৌরসভায় সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মেয়র পদে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মেয়র প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান মেয়র ও সীতাকুণ্ড পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব বদিউল আলম, সীতাকুণ্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম রব্বানী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ ইউসুফ, পৌরসভার কাউন্সিলর মাইমুন উদ্দিন মামুন, কাউন্সিলর সফিউল আলম চৌধুরী মুরাদ, কাউন্সিলর জুলফিকার আলী শামীম, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহেদ চৌধুরী ফারুক, পৌর যুবলীগের সভাপতি শাহ কামাল চৌধুরী।
বর্তমান মেয়র ও পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি বদিউল আলম এবারও দল থেকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি বলেন, আমি গত ৫ বছর এলাকার মানুষের সাথে কাটিয়েছি। দলের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নেও কাজ করে যাচ্ছি। বেশ কিছু কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। আসলেই একটি পৌরসভার সার্বিক উন্নয়নের জন্য ৫ বছর যথেষ্ট সময় নয়। পুনরায় নির্বাচিত হলে বাকি কাজগুলো সম্পন্ন করে সীতাকুণ্ড পৌরসভাকে মডেল পৌরসভায় রূপান্তর করবো। মাঠ পর্যায়ে আমার প্রস্তুতি খুব ভালো। আমি মনে করি, দল এবারও আমার কাজের মূল্যায়ন করবে।
মেয়র পদে মনোনয়ন চাইবেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও উত্তর জেলা আ.লীগের সদস্য গোলাম রব্বানী। তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের কর্মী। গতবারও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। তখন আর্থিকভাবে প্রস্তুত না থাকায় আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। এবার আমি সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছি। আমি মনে করি, দল আমার ত্যাগের কথা বিবেচনা করে এবার আমাকে মনোনয়ন দেবে।
বর্তমান পৌর কাউন্সিলর মাইমুন উদ্দিন মামুন এবার মেয়র পদে নির্বাচন করতে চান। তিনি জানান, আমি পরপর দুই বার কাউন্সিলর হিসেবে কাজ করছি। গত ১০বছর এলাকায় আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছি। এলাকায় আমার জনপ্রিয়তা রয়েছে। দল এবার আমাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
মেয়র পদে মনোনয়ন চান বর্তমান পৌর কাউন্সিলর সফিউল আলম চৌধুরী মুরাদ। তিনি বলেন, মেয়র পদে গতবার আমি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলাম। পরবর্তীতে দলের কথা ভেবে সমঝোতার মাধ্যমে আমি আমার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলাম। তখন আমাকে পরবর্তীতে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। আমি পৌরসভার পরপর দুইবারের কাউন্সিলর। এলাকায় আমার জনপ্রিয়তা রয়েছে। আশা করছি, মেয়র পদে দলীয় নেতৃবৃন্দ আমাকেই মনোনয়ন দেবেন।
কাউন্সিলর জুলফিকার আলী শামীমও এবার মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চান। তিনি বলেন, আমিও দুইবারের কাউন্সিলর। প্রথম ৫বছর আমি প্যানেল মেয়র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছি। এলাকায় আমার জনপ্রিয়তা রয়েছে। এবার আমি মেয়র পদে দল থেকে মনোনয়ন চাইবো।
মেয়র পদে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, প্রথম শ্রেণীর সীতাকুণ্ড পৌরসভায় উন্নয়ন নেই বললেই চলে। জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে পৌরবাসী মুক্ত হতে পারছেন না। রাস্তাঘাটের কোন উন্নয়ন নেই। এখানে যোগ্য প্রার্থীর বড়ই অভাব। যার কারণে পৌর এলাকার সার্বিক উন্নয়ন হয়নি। স্বৈরাচার ও সামপ্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। পৌরসভার উন্নয়নেও অবদান রাখতে চাই। তাই আমি মেয়র পদে মনোনয়ন চাইবো।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহেদ চৌধুরী ফারুক বলেন, ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে এপর্যন্ত দলের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছি। বিনিময়ে কোন কিছু চাইনি। আসন্ন সীতাকুণ্ড পৌরসভা নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন চাইব।
অপর মেয়র প্রার্থী যুবলীগ নেতা শাহ কামাল চৌধুরীও দলীয় মনোনয়নের জন্য শীর্ষ নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা অওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল বাকের ভুঁইয়া বলেন, বড় রাজনৈতিক দল থেকে একাধিক নেতা সমর্থন লাভের প্রত্যাশা করবেন এটা স্বাভবিক। তবে এলাকার উন্নয়নে নিবেদিত ব্যক্তিকেই মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে।
অন্যদিকে গতবার সীতাকুণ্ড পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি থেকে নির্বাচন করেছিলেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সম্পাদক মো. আবুল মুনসুর। তিনি বলেন, দল যদি নির্বাচনে যায় তাহলে অবশ্যই এবারও মেয়র পদে নির্বাচন করবো। দল নির্বাচনে যাবে কিনা এখনও জানি না। তবে দলের নেতাকর্মীদের পাশে সবসময় আছি। এছাড়াও পৌর বিএনপির সভাপতি ইউসুপ নিজামী, বর্তমান পৌর কাউন্সিলর ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ. কে.এম সামসুদ্দিন আজাদ, পৌর বিএনপি নেতা আলমগীর ইমরানও প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন। করোনাকালে নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকায় জনগণের পাশে তারা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন।