কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না বলে তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে গতকাল বুধবার এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ আছে। নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে নিবন্ধন স্ক্র্যাপ করেছে, বাদ দিয়েছে। সে জন্য আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
‘রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও উপেক্ষা নিয়ে’ প্রধান উপদেষ্টাকে পাঁচ মার্কিন আইনপ্রণেতা চিঠি দিয়েছেন বলে ব্রিফিংয়ে সে বিষয়ে প্রেস সচিবের মন্তব্য জানতে চান এক সাংবাদিক। জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ওই চিঠির বিষয়ে তিনি অবগত নন। এরপর আওয়ামী লীগের বিষয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন তিনি। খবর বাসস ও বিডিনিউজের।
বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, আমরা তার বাংলাদেশে ফেরাকে স্বাগত জানাই। তার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দলের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। প্রেস সচিব আরও জানান, সরকার তার নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়টি বিএনপির সঙ্গে পরামর্শ করছে এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শারিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের বিচারের বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, এ বিষয়ে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। আমরা গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পাচ্ছি এবং ঘটনার তদন্তে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। ইতোমধ্যেই কয়েক জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ময়মনসিংহে পোশাক শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, সরকার হত্যাকাণ্ডকে নিন্দা জানিয়েছে। ভিডিও বিশ্লেষণের মাধ্যমে অন্তত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা আজ উপদেষ্টা পরিষদকে জানিয়েছেন, দিপু হত্যার বিচার দ্রুত বিচার আইনের আওতায় সম্পন্ন হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি।
প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনার বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সমস্ত দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। দলটির নেতা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি ছিল অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের। ওই দাবিতে জোরালো আন্দোলনের মধ্যে গত ১২ মে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর সব কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
অভ্যুত্থান দমাতে ‘গুম, খুন, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, গণহত্যা, বেআইনি আটক, অমানবিক নির্যাতন, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাসী কার্য ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারার আওতায় এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এর অর্থ হল, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ আপাতত কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি বা প্রচার চালাতে পারবে না। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে দলটির নিবন্ধনও বাতিল হয়ে যায়।











