আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট উপদেষ্টাদের অপসারণ দাবি

চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৩ নভেম্বর, ২০২৪ at ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ

মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী এবং শেখ বশির উদ্দিনকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা করার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় নগরের জামালখান প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ, ছাত্রআন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়ক জুবায়ের আহমেদ মানিক, সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের সমন্বয়ক এজিএম বাপ্পী, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের আহমেদ সাইফ, মির্জা, আফরোজা, সাইফুর রুদ্র, আরমান শাহরিয়ার সৌরভসহ বেশ কয়েকজন সংগঠক বক্তব্য রাখেন।

এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীতে আওয়ামী মদদপুষ্টদের নিয়োগ, প্রশাসন কর্তৃক ছাত্র হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার না করা এবং শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের মূর্ত প্রতীক, যার ইতিহাস ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত আমরা জানি না, সেই শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিভিন্ন অফিসআদালতে রাখা হয়েছিল। যারা বলছে, কেন শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো হলোতাদের হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, আপনারা কোনোভাবে মুজিববাদকে সাপোর্ট করতে পারেন না। তিনি বলেন, আপনারা যদি কেউ তাকে আর বাংলাদেশে দেবতা বলে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন তাহলে আপনাদের আমরা দমন করব। আমরা কোনোভাবে মুজিববাদকে এ বাংলাদেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠা হতে দেব না। এ মুজিববাদ কেউ যদি বাংলাদেশে কোনোভাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেটা রুখে দেব। আমরা অতিদ্রুত স্বৈরাচারের দোসরদের উপদেষ্টামণ্ডলী থেকে অপসারণ চাই।

রাসেল আহমেদ আরও বলেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট পতিত শক্তি বিভিন্নভাবে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের দোসররা তাদের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পতিত শক্তির দালালেরা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ এখনো রাজপথে আছে। একটি সুশৃঙ্খল বাংলাদেশ বিনির্মাণ না করা পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা রাজপথে থাকবে।

তিনি বলেন, আপনারা শাপলা চত্বরে হেফাজতের ওপর বর্বোরোচিত হত্যাকাণ্ডের কথা জানেন। সেই হেফাজতের নেতাকর্মীরা চট্টগ্রাম থেকে যখন শাহবাগী ফারুকীকে উপদেষ্টামণ্ডলী থেকে বরখাস্তের আওয়াজ তোলে তখন তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অথচ জুলাই আন্দোলনে শহিদ ২ হাজার মানুষের হত্যাকারীদের এখনও পুলিশ প্রশাসন আটক করতে পারেনি। পতিত শক্তির বিরুদ্ধে যারা আওয়াজ তুলেছে তাদের ৫ জনকে তারা আটক করেছে। এ গ্রেপ্তারের সংখ্যা কখন ৫০০ বা ১ হাজার হয় আমরা জানি না।

প্রশাসনকে স্বৈরাচারের দোসর হয়ে কাজ না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা স্বৈরাচারের দোসর হয়ে কখনো কাজ করবেন না। যদি করেন তাহলে আপনাদের দায়িত্ব থেকে নামাতে আমরা কালক্ষেপণ করব না। যে বৈষম্যের জন্য আমাদের ভাইয়েরা রাজপথে রক্ত দিয়েছে, সে বৈষম্য এখনো হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলা থেকে একজনকেও উপদেষ্টামণ্ডলীতে নেওয়া হয়নি। এ কেমন বৈষম্য?

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়ক জুবায়ের আহমেদ মানিক বলেন, স্বাধীনতা মানে এ নয় যে, আপনারা যেরকম ইচ্ছা সেরকম করবেন। আমরা সিস্টেমের পরিবর্তন চেয়েছি। প্রশাসনকে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে। সন্দেহের ভিত্তিতে কাউকে ধরে তুলে নেওয়া যাবে না।

চট্টগ্রাম সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের সমন্বয়ক এজিএম বাপ্পী বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্রজনতার সরকার। জুলাই বিপ্লবের মতাদর্শের বাইরে কাউকেই এ সরকারে আনা যাবে না। এ ফারুকী শাহবাগী। সে আওয়ামী লীগের দোসর। শেখ বশির ছাত্র হত্যার আসামি। আমরা জানতে চাই, কীভাবে এ সরকারের প্যানেল ঠিক হয়। কোথা থেকে আসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্যানেল। আমরা এনজিও মার্কা সরকার চাই না। আমরা বিপ্লবী সরকার চাই। তিনি বলেন, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হুকুমদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। বর্তমান প্রশাসন নিয়ে আমরা হতাশ। ছাত্রলীগআওয়ামী লীগ গোপনে মিছিলমিটিং করছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কী করছে। তাদের কাজ কী? আমরা প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানাই, প্রশাসনকে বিপ্লবী প্রশাসন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

সমাবেশে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা স্বৈরাচার বিরোধী বিভিন্ন ধরনের স্লোগানের মাধ্যমে তাদের প্রতিবাদ জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচুরির টাকা ফেরত না দেয়ায় মাথায় ইটের আঘাত, ছোট ভাইয়ের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধএবার যুবদল নেতাকে বহিষ্কার