আওয়ামী লীগের ‘দুর্নীতিবাজ’ নেতার তালিকা পেলে দুদককে তদন্ত করতে দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল শনিবার দুপুরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাজেট প্রতিক্রিয়া জানাতে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
আপনাদের দলের অনেক নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে আসছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তাদের তালিকা দিন, আমরা দুদককে বলব তদন্ত করতে। যাদেরকে দুর্নীতিবাজ ভাবছেন, আপনারা তালিকা প্রস্তুত করুন। তালিকাটা দিন, আমরা দুদককে বলব তদন্ত করতে। খবর বিডিনিউজের।
বিএনপির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নিজেরাই হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে; বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে বসে–দণ্ডিত এই আসামি আরাম–আয়েশে দিন যাপন করছে। এই হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের হিসাব মির্জা ফখরুল সাহেবকে দিতে হবে।
ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি নিয়ে বিএনপি সোচ্চার হতে চায় বলে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি দুর্নীতিতে পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন; এটা বাংলাদেশের সবাই জানে। তারা বলছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেবে। যাদের মূল নেতারা দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত, তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেবে–এটা এই বছরের সেরা জোকস।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। আর খেলাপির স্থিতি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা আছে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে কাদের বলেন, অর্থনীতিবিদও এখন পোলারাইজড হয়ে গেছে; এখানে বিএনপি নামটা অর্থনীতিবিদ হয়েছে। তারা তাদের মনের যে ক্ষোভ, অসন্তোষ, ক্ষমতায় না থাকার যে বেদনা, ক্ষমতায় থাকলে যে সুযোগ সুবিধাপ্রাপ্তির ব্যবস্থা থাকে–সেটা ভেস্তে গেছে। ভেস্তে গেছে তাদেরই ভুলের কারণে। আমাদের উপদেষ্টাদের মধ্যে অর্থনীতিবিদ অনেকেই আছে, তারা সবাই একবাক্যে পরিণত ও সাহসী বাজেট বলেছেন। একটা চ্যালেঞ্জ আছে সেটা হলো বাস্তবায়ন।
তিনি বলেন, বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ আমরাও স্বীকার করি। এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করার জন্য সরকার ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। আমরা অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছি, ইনশাআল্লাহ আমরা এই চ্যালেঞ্জও অতিক্রম করতে পারব। দ্রব্যমূল্য, ডলার সংকট, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা, পারিবারিক কার্ডের মাধ্যমে এখন দেশের সংকট মোকাবেলা করার স্কিম রয়েছে নিম্ন আয়ের মানুষকে সাহায্য করার জন্য–এইসব পদক্ষেপ সরকার নিচ্ছে।
বাজেটে সরকার মুন্সিয়ানা দেখাতে পারেনি, একইসঙ্গে কালো টাকা সাদার করার সুযোগ দেওয়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছে সিপিডি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কাদের বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ ব্যাংকে আনার ব্যবস্থা করছি। ব্যাংকে আসলে ট্যাঙের সুবিধা আরও বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী যেটা বলছেন ‘মাছ ধরতে গেলে আধার দিতে হবে’, সেই কথাই বাস্তব। এখন সিপিডি কী বলল, টিআইবি কী বলল, সুজন কী বলল–এসব নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। ওরা সবাই বিএনপির সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলে। কথার সঙ্গে যাদের বাস্তবের কর্মকাণ্ডে মিল নেই।
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে কাদের বলেন, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন অংশের সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে এবারের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও আমরা সক্ষম হব বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এই বাজেটে মানুষের মৌলিক অধিকার, কৃষি, দেশীয় শিল্প ও সামাজিক নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে; যা দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করবে।