পোশাক শিল্পের আমদানিকৃত পণ্য চালান প্রাইভেট আইসিডির পরিবর্তে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস নেয়ার সুযোগ চায় পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। গতকাল মঙ্গলবার এ প্রসঙ্গে সংগঠনের নবনির্বাচিত সভাপতি ফারুক হাসান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি লিখেন।
চিঠিতে বলা হয়, গত ১৪ এপ্রিল সরকার করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করে। তবে রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পসহ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট পরিবহন লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পোশাক শিল্পের আমদানিকৃত পণ্য আগের মতো যথারীতি খালাস করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে না।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে আমদানিকৃত সকল পণ্য প্রাইভেট আইসিডি সমূহ থেকে খালাস নেয়ার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে মর্মে আমরা জানতে পারি। বর্তমানে প্রাইভেট আইসিডি সমূহে পর্যাপ্ত স্থান, ইক্যুইপমেন্ট ও শ্রমিক স্বল্পতায় মালামাল খালাসে দীর্ঘসূত্রিতাসহ প্রচুর সময়ক্ষেপণ হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে যেখানে দুই দিনের মধ্যে মালামাল খালাস করা যায়, সেখানে প্রাইভেট আইসিডি থেকে ৬-৭ দিন সময় প্রয়োজন হচ্ছে। এছাড়া প্রাইভেট আইসিডির প্রযোজ্য চার্জসমূহ চট্টগ্রাম বন্দরের চার্জ থেকে অনকে বেশি। অতিরিক্ত চার্জ প্রদান করে প্রাইভেট আইসিডি থেকে মালামাল খালাস করা বর্তমান সংকটময় মুহূর্তে সম্ভবপর নয়। ফলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ রপ্তানিতে সক্ষমতা হারাবে।
অন্যদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ও কন্টেনার জট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে পোশাক শিল্পের আমদানিকৃত পণ্য চালান দ্রুত খালাসে বিজিএমইএ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদানসহ জোর মনিটরিং অব্যাহত রেখেছে। এছাড়াও বর্তমানে পোশাক শিল্পের আমদানিকৃত পণ্য চালান খালাসে কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকার কারণে বন্দর থেকে পণ্য চালান খালাস দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বন্দরে কোন জাহাজ ও কন্টেনার জট নেই, স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসজনিত উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। অনেক ক্রেতা অর্ডার বাতিল অথবা স্থগিত করেছেন। এর মধ্যে স্বনামধন্য অনেক ক্রেতা নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করছে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির ব্যাপক বিপর্যয় ঘটেছে। দেশের রপ্তানিকারকরা এই ভাইরাসের বৈরী প্রভাব অতিক্রম করে অর্থনীতির চাকা চলমান রাখার জন্য এবং প্রতিকূল পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে।
করোনা ভাইরাসের প্রাথমিক প্রভাব শেষ না হতেই দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর ফলে ক্রেতাদের কাছ থেকে পেমেন্ট পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রপ্তানিকৃত পণ্যের পেমেন্ট না পাওয়ার কারণে শিল্প খাত চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। পোশাক শিল্পের মালিকরা শিল্পের ভবিষ্যত ও শ্রমিকদের মজুরি প্রদানসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে গভীর উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। বর্তমানে জাতি গভীর সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। তাই পোশাক শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষার্থে সময়ক্ষেপণ রোধ ও অতিরিক্ত চার্জ প্রদান ব্যতীত আমদানিকৃত পণ্য চালান চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি খালাস অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা যাচ্ছে।