বাংলাদেশের আইনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে কি আমৃত্যু কারাদণ্ড, নাকি নির্দিষ্ট মেয়াদে সাজা? এ নিয়ে বিভ্রান্তি বেশ কয়েকবছর ধরে। ২০১৭ সালে একটি হত্যা মামলার আপীলের রায় দিতে গিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে আমৃত্যু কারাদণ্ড বলে বর্ণনা করার পর এই বিভ্রান্তি। ১৯৯৬ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সার্কুলারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৩০ বছর পর্যন্ত ধার্য করা হয়েছিল। তখন থেকে এটিই প্রচলিত রয়েছে। এমনকী কারাগারে ভালো আচরণের জন্য জেল কোড অনুযায়ী ৩০ বছরের আগেও অনেক কয়েদি মুক্তি পান। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের ঐ রায়ের পর সর্বোচ্চ ৩০ বছর কারাদণ্ডের মেয়াদ এবং আগাম মুক্তির প্রচলন কি বৈধ থাকবে কিনা তা নিয়েও আইনজীবীরা পরিষ্কার উত্তর দিতে পারেন নি। এমনকী সেসময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও সে প্রশ্নে খোলাখুলি বিভ্রান্তি প্রকাশ করেন। তবে এই যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের কত বছর কারাগারে রাখতে হবে তা নিয়ে বিভ্রান্তি দূর হবে আগামী ১ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের ভার্চুয়াল পূর্ণাঙ্গ আপিল বিভাগের রায়ে।
যাবজ্জীবন আসলে কত বছর?
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী সারা দেশের কারাগারগুলোতে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কারাবন্দির সংখ্যা এখন সাড়ে চার হাজারের মত । প্রতি মাসেই এই সংখ্যার হেরফের হয়। কারণ উচ্চ আদালত থেকে খালাসপ্রাপ্ত বা জামিনপ্রাপ্তরা কারাগার থেকে মুক্তি পান। আবার সারা দেশে নিম্ন আদালতগুলো থেকে রায়ের পর নতুন করে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে কারাগারে যান।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ৫৭ ধারা, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫(ক) ধারা এবং কারাবিধির ৫৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে ৩০ বছর। মেয়াদ শেষে তা দাঁড়ায় সাড়ে ২২ বছর। ভারতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হিসেবে আমৃত্যু কারাদণ্ডের বিধান করে আইন করা হয়েছে। ভারতের মতো যদি করতে হয় তবে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫(ক), ৪০১ ও ৪০২ ধারা এবং দণ্ডবিধির ৫৫ ধারা এবং কারাবিধির ৫৯ নম্বর ধারা সংশোধন করার প্রয়োজন হতে পারে।
এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুন্যালের প্রসিকিউটর ও চট্টগ্রামে প্রবীন আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত আজাদীকে বলেন, আমাদের দেশে আইনে ৩০ বছর বলা আছে। এটা যদি পরিবর্তন করতে হয় তবে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫ (এ), ৪০১ ও ৪০২ ধারা এবং দণ্ডবিধির ৫৫ ধারা সংশোধন করতে হবে। এছাড়াও কারাবিধি সংশোধন করতে হবে। যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর রায়ে ট্রাইব্যুনাল ‘ডেথ সেনটেন্স’ রায় দিয়েছেন। অর্থাৎ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড। আসামির আপিলের পর হাইকোর্ট বিভাগও ‘ডেথ সেনটেন্স’ হিসেবে একই রায় বহাল রেখেছেন। পরে আপিলেট ডিভিশনে যখন আপিল করেন তখন আপিলেট ডিভিশন সাঈদীর সাজা ডেথ সেনটেন্সের পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদন্ড রায় দিয়েছেন।