আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া ঋণের শর্তের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, কিছু বিষয় সরকার পরিপালন করতে চায় না। নিজের সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, কেবল আইএমএফ নয়, অনেকগুলো কাজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলাম। আইএমএফের সঙ্গে যে সমঝোতা চলছিল, সেটা অব্যাহত রাখতে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনি বলেন, আইএমএফের কিছু কিছু ইস্যু আছে, যেগুলো আমরা পরিপালন করতে চাই না। বাংলাদেশে ম্যাক্রো ইকনোমিক স্ট্যাবিলিটি অনেক ভালো। আইএমএফ থেকে কোনো টাকা পয়সা না নিয়েই কিন্তু ফরেন রিজার্ভ স্থিতিশীল। খবর বিডিনিউজের।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এ সরকার আসার পর আইএমএফ থেকে আর টাকা পাওয়া যায়নি। তাদের সহযোগিতা ছাড়াই আমরা স্থিতিশীল আছি। অতএব তারা যে শর্ত চাপিয়ে দেবে, সেটা পারবে না। ওরা ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেটকে উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা বলেছে। আমরা বলেছি একেবারে ওপেন করে দেওয়া যাবে না। পাকিস্তানের মতো ২৮০ টাকা, শ্রীলংকার মতো ৪০০ টাকায় পৌঁছে যাবে, সেটা আমি পারব না। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী ডলারের মান উন্মুক্ত করা হবে না জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমরা যদি রিজার্ভের বাজার টালমাটাল করে ফেলি, তাহলে সেটা বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও দেখে। বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা মনে করবে, আইএমএফের কাছে ভিক্ষা করে শর্ত দিয়ে টাকা পয়সা নিয়ে আসছে। এটা কোনো ভালো বার্তা হবে না। তারা ডলার দিলেই আমরা রাজি হয়ে যাব, বিষয়টা তা না। পাকিস্তানে ৭ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। ডলারের দাম উঠে গেছে ২৮০ রুপিতে। আর্জেন্টিনাকে ২০ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। আমরা ঋণের বোঝা নিতে চাই না।
যুক্তরাষ্ট্র সফর প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, সফর সার্বিকভাবে সফল হয়েছে। এআইআইবি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ, আইওএম, ইউএস কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এনার্জি ডিভিশন, স্টেট ডিপার্টমেন্ট, লেবার ডিপার্টমেন্ট, অ্যাগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্ট, ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে কথা হয়েছে। এর বাইরে কথা হয়েছে আইএফসির সঙ্গে। সবাই আমাদের সঙ্গে খুব আগ্রহের সঙ্গে কথা বলেছে। আইএফসির সভাপতি রিকার্ডোর সঙ্গে বৈঠকে বসে দেখলাম, তার সামনে আমার জীবনবৃত্তান্ত। এর মানে তারা বাংলাদেশকে নিয়ে খুবই সজাগ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এ গভর্নর বলেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সঙ্গে তিনটা চুক্তি সই করেছি। ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের বে টার্মিনাল, ২০০ মিলিয়ন ডলারের সোশ্যাল সেইফটিনেট এবং ১০০ মিলিয়নের ওপেঙ ফান্ড, যেটা বেসরকারি খাতের জন্য। আইএফসির সঙ্গেও সফল আলাপ হয়েছে। তারা বেসরকারি খাতে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চায়। সব মিলিয়ে কোনো দুঃখ করার কারণ নেই। আইএমএফের প্রজেক্টে থাকব কি থাকব না, সে সিদ্ধান্ত আমরা নেব।