কোটা সংস্কারের দাবিতে কক্সবাজারে এবার আন্দোলনে নামল বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়। ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের এক পর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগ, জাসদ ও জাপার অফিসে হামলা চালায়। অন্যদিকে ছাত্রলীগের মিছিল থেকে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালানো হয় জেলা বিএনপির অফিসে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মঙ্গলবার সকাল ১১টায় শহরতলীর লিংকরোডে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে তারা মিছিল নিয়ে কক্সবাজার সরকারি কলেজের সামনে যায়। সেখানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দেয়। পরে কলেজ গেইটের সামনে আবারও ফিরে এসে সাইনবোর্ড ও মোটরসাইকেল ভাংচুর চালায় শিক্ষার্থীরা। ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করে। এরপর মিছিল নিয়ে লিংকরোড অভিমুখে যাত্রা করে শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী পুনরায় জড়ো হয় লিংকরোড এলাকায়। এসময় সবার হাতে ছিল লাঠিসোটা। মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল পর্যন্ত গিয়ে পুনরায় লিংকরোড মোড়ে এসে সড়ক অবরোধ করে। এসময় চট্টগ্রাম–কঙবাজার ও কঙবাজার–টেকনাফ মহাসড়কের শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। পরে সদর মডেল থানার ওসি রকিবুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা এসে শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। বিকেল ৫টার দিকে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ শহরের শহীদ স্মরণী মোড়ে এলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এসময় জেলা ছাত্রলীগের দুই নেতা আহত হন।
এদিকে শহরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার খবরে হাজারো শিক্ষার্থী বিশাল মিছিল বহর নিয়ে শহর অভিমুখে রওনা দেয়। প্রায় এক ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীদের মিছিলটি শহরে প্রবেশ করে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর খবর পেয়ে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা। এসময় লালদিঘির পাড়স্থ জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা জাসদ ও জাতীয় পার্টি অফিসে হামলা ও ভাঙচুর করে তারা।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এস সাদ্দাম হোসেন বলেন, আন্দোলনকারীরা সবাই ছাত্রদল ও শিবির ক্যাডার। তারা এই আন্দোলন ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্রলীগ দফায় দফায় তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে অনেক আন্দোলনকারী আহত হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবে বলে জানান।
এদিকে দলীয় কার্যালয়ে হামলা ও ভাংচুরের প্রতিবাদে সন্ধ্যায় তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশ করেছে জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা যুবলীগ, জেলা ছাত্রলীগ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রাত ৯টার দিকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা একটি মিছিল করে। মিছিলটি শহীদ স্মরণীতে পৌঁছলে নেতাকর্মীরা জেলা বিএনপি অফিস ও আশপাশের দোকান–রেস্তোরাঁয় হামলা চালায়।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন বলেন, কোটা আন্দোলনকারীদের আমরা সমর্থন দিয়েছি। এটি কি আমাদের অপরাধ। আমরা শান্তি চাই। অহেতুক আমাদের অফিসে হামলা ও ভাংচুর করা হয়।
কঙবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি রফিকুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় সদা তৎপর আছে। হঠাৎ করে আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের অফিসে ভাংচুর চালায়। অভিযোগ পেলে আমরা সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।