অ্যাডভোকেট বদিউল আলম ছিলেন আলোকিত মানুষের প্রতিকৃতি

তাঁর লেখা বইয়ের সংকলনের মোড়ক উন্মোচন

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৭:২৭ পূর্বাহ্ণ

জেলা জজ আজিজ আহমেদ ভূঁঞা বলেছেন, আইন পেশা ডেডিকেশনের পেশা। সমাজের সর্বস্তরে আইনজীবীদের ভূমিকা রয়েছে। আইনজীবী বদিউল আলম এর বাইরে ছিলেন না। আইনজীবী সমাজে তথা আদালত পাড়ার সর্বস্তরে তার বিচরণ ছিল। এছাড়াও নানা ক্ষেত্রে তিনি যুক্ত ছিলেন। আইনজীবী সমাজে তিনি আদর্শ হয়ে হয়ে থাকবেন। তাঁর লেখা বইয়ে সমাজের সব বিষয় সম্পর্কে উপস্থিতি রয়েছে। অনেক কিছু জানা যাবে তার লেখা বই পড়ে। আশা করছি, আইনজীবীরা সম্মৃদ্ধ হবে।

গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে বরেণ্য আইনজীবী মরহুম অ্যাডভোকেট বদিউল আলমের লেখা বইয়ের সংকলনের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা জজ এসব কথা বলেন। বদিউল আলমজেবুন্নেছা বেগম ট্রাস্ট অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সালাউদ্দিন হায়দার সিদ্দিকী।

বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন, আইনজীবী বদিউল আলমের কন্যা আইনজীবী সুরাইয়া জান্নাত।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, অ্যাডভোকেট বদিউল আলম ছিলেন দেশের বিশিষ্ট আইনজীবী, লেখক রাজনীতিক ও সমাজসেবক। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৪৬ সালে আইন বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন অর্জন করেন। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের প্রতি, ভালোবাসার মূর্ত প্রতীক ছিলেন তিনি। দেশপ্রেমিক রাজনীতিক হিসেবে যেমন তার সুনাম ছিল, তেমনি ফৌজধারী আইনজীবী হিসেবে ছিল বিশেষ খ্যাতি। তিনি একজন আলোকিত মানুষের প্রতিকৃতি। মুক্তিযুদ্ধ, গ্রাম উন্নয়ন ও সমাজ সংস্কারে তার অবদান চিরস্মরণীয়। তিনি একজন লেখক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার মূল্যবোধ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রসঙ্গসহ বহু গ্রন্থের প্রণেতা তিনি।

এম এ মালেক বলেন, অ্যাডভোকেট বদিউল আলম বামপন্থী সংগঠনে জড়িত থাকলেও পরে ঐতিহাসিক পাকিস্তান আন্দোলন এবং ১৯৪৭ এর পর তমদ্দুন মজলিসের চিন্তাধারায় প্রভাবিত হন। ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এ অঞ্চলে আওয়ামী লীগের একজন হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা শাখার সহ সভাপতি ও দক্ষিণ জেলার সভাপতি নির্বাচিত হন। ছিলেন আইনজীবী সমিতি ও সম্মিলিত পেশাজীবী সংসদের সভাপতি। বঙ্গবন্ধু আগরতলা ষড়যন্ত্র মালায় অভিযুক্ত হলে বদিউল আলম ও তার সঙ্গীরা অর্থ সংগ্রহ করেন খরচ চালানোর জন্য। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে অর্থ সংগ্রহসহ বিভিন্ন কাজে তৎপর ছিলেন তিনি। অ্যাডভোকেট বদিউল আলম সাদালাপী, বিনয়ী, নম্র, ভদ্র, ধার্মিক ও মানবতাবাদী ছিলেন বলেও বক্তব্যে উল্লেখ করেন এম এ মালেক।

আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, অ্যাডভোকেট বদিউল আলম আমাদের অভিভাবক। তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। তিনি বলতেন, কোর্ট কী চাই বুঝতে হবে এবং সেইভাবে সাবমিশন দিতে হবে। একটি মামলার জেরাতে বদিউল আলমকে হায়ার করে নিয়ে গেছেন উল্লেখ করে মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, জেরায় তিনি শুধু দুটি প্রশ্ন করেছেন। আমরা অবাক হই। কিন্তু তিনি বলেছেন, আসামি খালাস পাবেন। দুই দিন পর হওয়া রায়ে ঠিকই আসামি খালাস পেলেন। তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণ আইনবিদ ছিলেন।

স্বাগত বক্তব্যে বদিউল আলমের কন্যা আইনজীবী সুরাইয়া জান্নাত বলেন, আমার বাবা অনেক গুণে গুণান্নিত ছিলেন। তিনি তার কলমের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা লিখেছেন। ইচ্ছা থাকা সত্যেও তিনি তার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে পারেননি। আমরা শুধু তার অপূর্ণ থেকে যাওয়া কাজটি করার চেষ্টা করছি। বইয়ে বাবা লিখেছেন, আইনজীবীরা একই সাথে লার্নিং এবং আর্নিং করবেন। দুটার মধ্যে সমন্বয়ের কথা বলেছেন। সমাজের বিভিন্ন বৈষম্য, হিংসা, বিদ্বেষ নিয়ে কথা বলেছেন। অতি সাধারণ থেকে কিভাবে অসাধারণ কাজ করা যায় এবং মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার কথা বলেছেন। কারো সাথে বিবাদ ছিল না বাবার উল্লেখ করে সুরাইয়া জান্নাত বলেন, রাজনীতির সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন আমার বাবা। একপর্যায়ে দূরেও সরে গিয়েছিলেন। তারপরও সর্বস্তরের মানুষের পদচারণা ছিল আমাদের বাসায়। বিনাপারিশ্রমিকে রাজনীতির সাথে যুক্তদের পাশে থেকেছেন। পারিবারিক মূল্যবোধকে তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি আমাদের নীতি নৈতিকতা শিখিয়েছেন। আম্মাকে সম্মান করতেন। ভোরে ঘুম থেকে উঠে রাত ১০ টার মধ্যে কিভাবে সব কাজ করা যায় তিনি তা আমাদের শিখিয়েছেন। আইন বা যে কোনো বিষয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে এ বই কাজে দিবে বলে প্রত্যাশাও করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সুশাসন, সুবিচারের কথা বলতেন আইনজীবী বদিউল আলম। নরম মনের মানুষ ছিলেন। সবার সাথে মিশতেন। গ্রামের বাড়িতে তিনি শিশুদের জন্য প্রাইমারি স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা করেছেন, করতেন সাধারণ জীবন যাপন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঝুলে থাকল বরিশালের প্লে অফে যাওয়া
পরবর্তী নিবন্ধমাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে যান চলাচলে সিএমপির নির্দেশনা