অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার, নিয়ন্ত্রণ জরুরি

| শনিবার , ২ নভেম্বর, ২০২৪ at ৯:১৯ পূর্বাহ্ণ

আবারও পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। বাড়ছে কেবল বাড়ছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, তিন সপ্তাহ ধরে বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি এখন ১৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেঁয়াজের আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। বর্তমানে পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক রয়েছে। নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য এই শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন। বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে লেখা এক চিঠিতে এ সুপারিশ করা হয়। এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে পেঁয়াজ আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করে এনবিআর। নভেম্বর মাস পর্যন্ত এ সুবিধা বহাল থাকবে। এখন পণ্যটির আমদানি শুল্কও প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হলো। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। অনেক পাড়ামহল্লায় আরও ১০ টাকা বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ট্যারিফ কমিশন বলেছে, দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়ায় এবং আমদানি করা পেঁয়াজের বাড়তি দামের কারণে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। কৃষকের ঘরে পেঁয়াজের মজুত এখন শেষের দিকে। অন্যদিকে অতিবৃষ্টির কারণে মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষাবাদ ব্যাহত হয়েছে। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত এক মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম ৩০ শতাংশ বেড়েছে। আর এক বছর আগের তুলনায় দেশি পেঁয়াজের দাম এখন ৩৫ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে, দেশে আমদানি করা পেঁয়াজের দামও বেড়েছে। গত এক মাসে এ দাম প্রায় ৮ শতাংশ ও এক বছরে তা ১৭ শতাংশ বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও গত এক বছরে পেঁয়াজের দাম ১১৬ শতাংশ বেড়েছে। ট্যারিফ কমিশনের চিঠিতে বলা হয়, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৬ থেকে ২৭ লাখ টন। স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে এ চাহিদার ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হয়; বাকিটা পূরণ হয় আমদানির মাধ্যমে। পেঁয়াজ আমদানির অন্যতম উৎস হচ্ছে ভারত। উৎপাদন কম হওয়ায় প্রতিবেশি এই দেশ পেঁয়াজ রপ্তানি নিরুৎসাহিত করেছিল। সমপ্রতি ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করলেও এখনো ২০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক বহাল রেখেছে। ফলে বেশি দামে পেঁয়াজ আমদানির কারণে দেশেও পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এ অবস্থায় চাহিদার বিপরীতে ঘাটতি নিরসন ও পেঁয়াজের ঊর্ধ্বমুখী বাজার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ানো ও আমদানি ব্যয় কমানো প্রয়োজন বলে জানায় ট্যারিফ কমিশন। সে জন্য পেঁয়াজ আমদানিতে থাকা ৫ শতাংশ শুল্ক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রত্যাহারের সুপারিশ করে সংস্থাটি।

কোনোভাবেই অস্বীকারের উপায় নেই, পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। আমরা মনে করি, পেঁয়াজের দাম এভাবে বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। ধারণা করা হচ্ছে, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করলেও এখনো ২০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক বহাল রাখায় তার প্রভাব পড়েছে বাজারে। ফলে প্রায় সব জিনিসের দাম বেড়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক অজুহাতে ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করে যাচ্ছেন। বাজারে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও তারা যা করার করে যাবেন। তাদের অভিযোগ, পেঁয়াজের যথেষ্ট উৎপাদন হওয়ার পরও ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি প্রতিবন্ধকতাকে অজুহাত বানিয়ে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

পেঁয়াজসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ঘটনায় সাধারণ মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রয়ক্ষমতা না বাড়ায় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্নআয়ের শ্রমজীবীরা অসহায়বোধ করেন। অথচ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ এখনো নেওয়া হয় নি। ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোর এ প্রবণতা রোধে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্রুত বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়া হলে পেঁয়াজের বাজার পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে