দুই মাস আগে পুলিশি অভিযানে গুলি ছুঁড়ে পালিয়েছিল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের তালিকায় থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘ছোট সাজ্জাদ’। এরপর থেকে পুলিশ এই আসামিকে ধরতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। খুন, চাঁদাবাজি ও অস্ত্রবাজিসহ একাধিক হত্যা মামলার আসামি এই সন্ত্রাসী। ‘ছোট সাজ্জাদ’ ছাড়াও কেউ কেউ তাকে ‘বুড়ির নাতি’ হিসেবে চিনে। এই সন্ত্রাসীকে ধরতে না পারলেও এবার ধরা পড়েছে তার ৬ সহযোগী। গ্রেপ্তাররা বায়েজিদসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই করে থাকে। তাদের আশ্রয়–প্রশ্রয় দেয় ছোট সাজ্জাদ। অস্ত্রের যোগানও দেয় ছোট সাজ্জাদ।
ছোট সাজ্জাদের নেতৃত্বে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মারধর করে বিভিন্ন পথচারীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় মোবাইল, টাকা পয়সা, ঘড়ি ও এটিএম কার্ডসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র। তাদের নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ছিনতাই করাই যেন তাদের মূল পেশা। গত সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে তাদের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার কুলগাঁও খলিল শাহ মাজার সংলগ্ন একটি বাড়ির দোতলা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় আরও কয়েকজন পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তাররা হলেন, মো. আসিফ (২২), মো. হাসান (২০), মো. ফয়সাল (১৯), মো. আজিম উদ্দিন (২৩), মো. রিফাদ (১৯) ও মো. জুয়েল (২০)।
পুলিশ জানান, গ্রেপ্তার আসিফ হচ্ছেন এই ৬ জনের দলনেতা। তার নেতৃত্বেই ডাকাতির প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করতে নজরদারি রয়েছে, তাকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। গতকাল মঙ্গলবার নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ কমিশনার (অপরাধ) মো. রইস উদ্দিন এ নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আসামিরা বায়েজিদসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন জায়গায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের নেতৃত্বে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মারধর করে বিভিন্ন পথচারীর কাছ থেকে মোবাইল, টাকা পয়সা, ঘড়ি, এটিএম কার্ডসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করে আসছিল। সোমবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই সময় একটি দেশে তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র (এলজি), ৩টি হাসুয়া, ৬টি কিরিচি, ২টি চাইনিজ কুড়াল, ২টি কাটার, ১টি ড্রিল মেশিন, ৬টি অ্যানড্রয়েড মোবাইল, ৪টি বাটন মোবাইল, ১টি ইলেকট্রিক শট, ১টি মনিটর, ৩টি হাত ঘড়ি, ৮টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়। তিনি জানান, গ্রেপ্তার ৬ জন শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদের সহযোগী। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার অভিযানের খবর পেয়ে আরো ৩ থেকে ৪ জন পালিয়ে গেছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।
সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ দিনে মোট ১৩১ জন ছিনতাইকারী এবং বিভিন্ন জুয়ার আসরে অভিযান চালিয়ে ৯৩ জন জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার এবং মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। গত ২৩ জানুয়ারি থেকে ডাকাতি, ছিনতাইয়ের বিরুদ্ধে প্রত্যেক থানা এলাকাতে বিশেষ অভিযান চলমান রয়েছে। নগরের অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোতে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে সিএমপি। চোর–ছিনতাইকারীদের ধরতে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপ–কমিশনার রইছ উদ্দিন বলেন, সাজ্জাদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। আমরা তাকে গ্রেপ্তার করতে যখন গিয়েছিলাম তখন এসব অস্ত্র ব্যবহার করেই সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা এবং তার কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্রগুলো উদ্ধার করাই আমাদের প্রথম টার্গেট। তিনি বলেন, ইতিপূর্বে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় জেলে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সে জামিন নিয়ে বেরিয়ে আবারও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। তার ওপর আমাদের নজরদারি রয়েছে।