অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, মাদক কারবার–সব সেক্টরে তার নাম রয়েছে। নগরীর চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ থানা এলাকায় গড়েছেন নিজস্ব সাম্রাজ্য। গোপন নেটওয়ার্কসহ রয়েছে টর্চার সেল। কথায় কথায় গুলি ছোড়েন। সন্ত্রাসী হিসেবে হয়েছে নাম–ডাক। তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে ৪২টি।
বেশ কয়েকবার ফসকে গেলেও শহিদুল ইসলাম প্রকাশ বুইস্যা নামের আলোচিত এ সন্ত্রাসী অবশেষে র্যাবের হাতে বিদেশি পিস্তলসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৯ রাউন্ড গুলি। গত শনিবার সন্ধায় নগরীর বহদ্দারহাটের ফিনলে সাউথ সিটি শপিংমল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুইস্যা ভোলা জেলার দৌলতখান এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে। নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন পশ্চিম ষোলশহর এলাকায় তিনি বসবাস করে আসছিলেন।
র্যাব জানায়, নগরীর চান্দগাঁও, পাঁচলাইশসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় বুইস্যা গ্রুপ প্রকাশ্যে গোলাগুলি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও মাদক কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধ করে আসছে। এ গ্রুপের লোকজন কথায় কথায় গুলি ছোড়ে। এই গ্রুপের সদস্যরা চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ এলাকার মানুষের কাছে আতঙ্কের। বহদ্দারহট কাঁচাবাজারের দিগন্ত খাজা টাওয়ার এলাকায় এ গ্রুপের রয়েছে নিজস্ব আস্তানা ‘টর্চার সেল’। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে গোপন নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি তারা আগেই টের পেয়ে যায়। গ্রেপ্তার–পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদে বুইস্যা র্যাবকে জানিয়েছেন, তিনি চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ এলাকায় অস্ত্র ব্যবসা, ইয়াবা ও মাদক কারবারসহ কিশোর গ্যাং দিয়ে আধিপত্য বিস্তার করে চাঁদাবাজি করে আসছেন। তার চাঁদাবাজিতে কেউ বাধা দিলে তাকে জোরপূর্বক অপহরণ করে টর্চার সেলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হয়।

র্যাব–৭ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এআরএম মোজাফ্ফর হোসেন আজাদীকে বলেন, ২১ জুলাই চান্দগাঁও থানার কাঁচাবাজার এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী শহিদুল ইসলাম বুইস্যা গ্রুপের সাথে আরেক সন্ত্রাসী ইসমাইল হোসেন টেম্পো গ্রুপের গোলাগুলি হয়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে র্যাব বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার এলাকার দিগন্ত খাজা টাওয়ারে অভিযান চালিয়ে বুইস্যা গ্রুপের ১১ সদস্যকে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, দেশীয় অস্ত্র ও বিভিন্ন থানা থেকে পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তবে সেখানে বুইস্যাকে পাওয়া যায়নি। তিনি আগেই পালিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর ৪ অক্টোবর বুইস্যার অন্যতম সহযোগী মুন্নাসহ কয়েকজন পাঁচলাইশের বাদুরতলা এলাকায় একটি গ্যারেজের সামনে চাঁদার দাবিতে প্রকাশ্যে গুলি ছোড়েন। যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচিত হয়।
তিনি বলেন, এসব ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব বহদ্দারহাটের ফিনলে সাউথ সিটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে বুইস্যাকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও ৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
র্যাব কর্মকর্তা মোজাফ্ফর হোসেন জানান, বুইস্যার বিরুদ্ধে নগরীর চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও চকবাজার থানায় অস্ত্র, চাঁদাবাজি, নাশকতা এবং মাদক সংক্রান্ত ৪২টি মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। তিনি জানান, এর আগে পাঁচলাইশ থানাধীন পশ্চিম ষোলশহর এলাকা থেকে সন্ত্রাসী ইসমাইল হোসেন টেম্পোকে গ্রেপ্তার করে যৌথবাহিনী। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।












