অস্ট্রেলিয়ার দম্ভ চূর্ণ করে সেমির পথে থাকল আফগানরা

ক্রীড়া প্রতিবেদক | সোমবার , ২৪ জুন, ২০২৪ at ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ব ক্রিকেটে এমনিতেই অস্ট্রেলিয়ানরা বেশ নাক উচু স্বভাবের। বিশেষ করে ছোট দল গুলোর সাথে খেলতে নানা বাহানা করে। এইতো মাত্র কিছুদিন আগের ঘটনা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২০২১ এবং ২০২৩ সালে দুটি সিরিজ বাতিল করেছে অস্ট্রেলিয়া। কারন হিসেবে দেখানো হয় আফগানিস্তানের তালেবান সরকার মেয়েদের খেলাধুলা নিষিদ্ধ করেছে। সেই থেকে মাঠের বাইরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঠান্ডা লড়াই চলছে আফগান ক্রিকেট বোর্ডের। তবে আফগান ক্রিকেটাররা যেন মাঠেই তার একটি যোগ্য জবাব দেওয়ার মোক্ষম সুযোগ খুজছিল। অবশেষে এলো সে সুযোগ। চলমান টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইট পর্বের নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হয় দু দল। তবে তখন দু দলের অবস্থা ঠিক দুরকমের। আফগানরা গ্রুপ পর্বে টানা তিন ম্যাচে জেতার পর গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ এবং সুপার এউটের প্রথম ম্যাচে হেরে অনেকটাই ব্যাকফুটে। অপরদিকে অস্ট্রেলিয়ার জয় রথ যেন থামানোই যাচ্ছিলনা। টানা পাঁচ ম্যাচে জিতে ষষ্ট ম্যাচ খেলতে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া আফগানিস্তানের বিপক্ষে। আর সে ম্যাচেই ইতিহাস গড়ল আফগানরা। মাঠের এবং মাঠের বাইরের সব ক্ষোভ যেন কঠিনভাবে ঝারল আফগান ক্রিকেটাররা। সকল তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের জবাব মাঠেই দিল আফগান ক্রিকেটাররা ব্যাটে আর বলে। ইব্রাহিম জাদরান, রহমানুল্লাহ গুরবাজ, গুলবাদিন নাইব, নাবীন উল হকরা যেন এক এক আফগান যোদ্ধা হয়ে উঠলেন। আর সে যোদ্ধাদের হুংকারে লেজ গুটিয়ে পালাল মাইটি অস্ট্রেলিয়া। সহজে টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে চলে যাবে সেটা ভেবে মাঠে নামা অস্ট্রেলিয়াকে গুড়িয়ে দিল আফগানরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নস ভেলে স্টেডিয়ামে অনুষ্টিত ম্যাচে ২১ রানে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে এবারের টিটোয়েন্টি বিশ্‌্বকােেপ সবচাইতে বড় চমক দিল আফগানিস্তান। অস্ট্রেলিয়ার মত পরাশক্তিকে পরাজিত করে শুধু চমকই সৃষ্টি করেনি আফগানরা। সেমিফাইনালের পথেও রাখল নিজেদের। এখন উল্টো অস্ট্রেলিয়ার সেমিফাইনাল খেলাটা কঠিন হয়ে গেল। কারন সুপার এইট পর্বে আফগানরা শেষ ম্যাচটি খেলবে বাংলাদেশের বিপক্ষে আর অস্ট্রেলিয়া খেলবে ভারতের বিপক্ষে। তাইর খালি চোখে সেমিফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা আফগানদেরই বেশি।

এবারের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথম চমকটা দিয়েছিল আফগানিস্তান। এবার তা আরো পরিপুর্ন করল অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছয়বার মুখোমুখি হয়েছে দু দল। যেখানে চারবার ওয়ানডেতে আর দুইবার টিটোয়েন্টিতে। সবকটি ম্যাচই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। অবশেষে বিশ্বকাপের মঞ্চে এসে স্বপ্নপুরণ হলো আফগানদের। আর সে স্বপ্ন পুরনের পথে ব্যাট হাতে ইব্রাহিম জাদরান এবং রহমানুল্লাহ গুরবাজ কচু কাটা করেছে অসি বোলারদের। আর বল হাতে দুই পেসার নাবীন উল হক এবং গুলবাদিন নাইব চোখে শর্ষে ফুল দেখিয়েছেন অসি ব্যাটারদের। সে সাথে আফগানদের দুর্দান্ত ফিল্ডিংতো ছিলই। সব মিলয়ে আফগানরা ক্রিকেট ইতিহাসে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন জয়টা তুলে নিল। টসে হেরে ব্যাট করতে নামা আফগানিস্তান দারুন শুরু করে দুই ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ এবং ইব্রাহিম জাদরানের হাত ধরে। দুই ওপেনার ১১৮ রান যোগ করে বিচ্ছিন্ন হন। অসি বোলারদের পাড়া গায়ের বোলারে পরিনত করেছিল এই দুই ওপেনার। ৪৯ বলে ৬০ রান করা গুরবাজকে ফিরিয়ে এজুটি ভাঙ্গেন স্টয়নিস। চারটি কওে চার এবং ছক্কা মেরেছেন গুরবাজ। পরের ওভারে এডাম জাম্পার জোড়া আঘাত। তার প্রথম শিকার তিন নাম্বারে নামা আজমত উল্লাহ। তিন বল পর জাম্পা ফেরান ওপেনার ইব্রাহিম জাদরানকে। ৪৮ বলে ৫১ রান করেন তিনি।

চয়টি চার মেরেছেন তিনি। পরের তিন ওভারে ২৬ রান যোগ করে আফগানিস্তান। আর তাতেই আফগানদের স্কোর গিয়ে দাড়ায় ১৪৮ রানে। করিম জানাত ৯ বলে ১৩ আর মোহাম্মদ নবী ৪ বলে ১০ রান করে দলের এই ইনিংসে ভুমিকা রাখেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ৩টি উইকেট নেন প্যাট কামিন্স আর জাম্পা নিয়েছেন ২ উইকেট। ১৪৯ রানের লক্ষ্য। যা হয়তো মোটেও কঠিন হওয়ার কথা ছিলনা অস্ট্রেরিয়ার জন্য। কিন্তু সে রান তাড়া করতে নামা অস্ট্রেলিয়া প্রথম ওভারেই হারায় ওপেনার ট্রেভিস হেডকে। নাবিন উল হকের বলে বোল্ড হন এই ওপেনার। নিজের পরের ওভারে মিচেল মার্শকে ফেরান নবীন। অভিজ্ঞ ডেভিড ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে খাদের কিনারায় পৌছে দেন মোহাম্মদ নবী। ৩২ রানে ৩ উইকেট নেই অস্ট্রেলিয়ার। এরপর প্রতরোধ গড়েন মেঙওয়েল এবং স্টয়নিস। ১১ রান করা স্টয়নিসকে ফিরিয়ে ৩৯ রানের এই জুটি ভাঙ্গেন গুলবাদিন নাইব। কিন্তু কে জানতো এই আফগান পেসারের আগুনে পুড়ে মরতে হবে অসি ব্যাটারদের। সেই গুলবাদিনই শুরু করেন অস্ট্রেলিয়ার ধ্বস। নিজের পরের ওভারে টিম ডেভিসকে ফেরালেন গুলবাদিন। তখনো আফগানদের পথের কাটা হয়ে ছিলেন গ্লেন মেক্সওয়েল। পরের ওভারেই সে কাটাও সরালেন গুলবাদিন। তবে তার আগে মেক্সওয়েল হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিলেও দলকে জেতাতে পারেননি। কারন সেই গুলবাদিনের ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং। ৪১ বলে ৫৯ রান করে মেক্সওয়েল ফিরলে তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে যায় অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং। ২১ রানে শেষ ৫ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। ১২৭ রানে অল আউট হয় অস্ট্রেলিয়া ৪ বল বাকি থাকতে। ৪ উইকেট নিয়ে আফগানদের জয়ের নায়ক গুলবাদিন নাইব। ৩ উইকেট নিয়েছেন নাবীন উল হক। আর ম্যাচ সেরার পুরস্কারটি উঠেছে বল হাতে আগুন ঝরানো গুলবাদিন নাইবের হাতে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসময় হলেই অবসরের কথা জানাবেন সাকিব
পরবর্তী নিবন্ধসেমিফাইনাল নিশ্চিতে আজ মাঠে নামছে ভারত-অস্ট্রেলিয়া