অসুখের সময় শিশুর খাদ্য–পুষ্টি সঠিকভাবে রক্ষা করা কঠিন। কারণ অসুখে শিশুর খিদে লোপ পায়। অসুস্থ অবস্থায় শরীরে বেশি ক্যালরি, কখনোবা সুনির্দিষ্ট কিছু পুষ্টিগুণের চাহিদা বাড়ে। অসুস্থ শিশুর মলের সঙ্গে পুষ্টি বেরিয়ে যায় বেশি। তাছাড়া ব্যথাযুক্ত মুখের ঘা, বমি ভাব ও বমির কারণে শিশু প্রয়োজনানুযায়ী খাবার গ্রহণ করতে পারে না। এসব সমস্যা কাটিয়ে অসুস্থ শিশু যাতে অপুষ্টিতে না পড়ে, সে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। যেমন–
বুকের দুধপান অব্যাহত রাখা
খাবার খাওয়ানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া
দুই থেকে তিন ঘন্টা পর পর শিশুকে অল্প অল্প পরিমাণ খাবার খাওয়ানো
শিশু যদি একদম না খেয়ে থাকে, প্রয়োজনে ন্যাজোগ্যাস্ট্রিক নলের সাহায্যে খাওয়ানোর ব্যবস্থা
শিশুর ক্ষুধা যখন ফিরে আসবে, তখন তার শারীরিক বৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য খাবারের রুটিন সাজিয়ে নিতে হবে।
অসুখে খাবার বাছাইয়ের ধরন –
শিশুর খাবার অবশ্যই সুস্বাদু হতে হবে
নরম বা তরল খাবার ঠান্ডা করে পরিবেশন করতে হবে, যাতে সে সহজে খেতে পারে।
পুষ্টিমানসম্পন্ন , ক্যালরি ও পুষ্টিগুণে ভরপুর সহজপাচ্য খাবার। এমন খাবার পরিবেশন করতে হবে, যা পর্যাপ্ত পরিমাণ শক্তি জোগাবে এবং যাতে থাকবে উচ্চমান প্রোটিন।
শিশুকে বেশি স্নেহ বা তেলযুক্ত খাবার খাওয়ানো দরকার। ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ক্যালরি স্নেহজাতীয় খাবার থেকে পাওয়া গেলে ভালো। এছাড়া শিশুর শক্তি জোগাতে স্বল্প পরিমাণ খাবার ঘন ঘন খাওয়ানোর চেষ্টা করা।
শিশুকে কোন খাবার খেতে দেওয়া হবে তা স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত ও তার স্বাদের ওপর নির্ভর করে। দানাদার খাবার, মাছ, মাংস–এসব মিশ্র খাবার খাওয়ানো ভালো। তবে সব ক্ষেত্রে যেন তেল মেশানো হয়। অল্পবয়সী শিশুকে দেওয়া খাবার শুধু তার সামনে রেখে খেতে বলা হলে, বা অন্য শিশুর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে খাওয়াতে গেলে সে যথেষ্ট খাবার গ্রহণ করতে পারে না।
ব্যবস্থাপত্র–
শিশুর নাক জ্যাম থাকলে খাবার খেতে অসুবিধা হয়। নাসারন্ধ্র খোলা রাখতে লবণ পানির ফোঁটা নাকে ব্যবহার করা যেতে পারে
শিশু যদি গুরুতর নিউমোনিয়া, ব্রংকিওলাইটিস বা অ্যাজমার সমস্যায় ভোগে, তাহলে দ্রুত ও কষ্টকর শ্বাস–প্রশ্বাসের কারণে খেতে পারে না
এ ছাড়া খাবার শ্বাস–প্রশ্বাসতন্ত্রে ঢুকে যাওয়ার মতো বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এ অবস্থায় শিশুকে খাওয়ার জন্য কখনো জোর না করা। শিশুর জ্বর কমলে তার খিদে ফিরে
যখন কয়েক দিন ধরে শিশুকে কিছুই খাওয়ানো যায় না, যেমন মেনিনজাইটিসের অচেতন শিশু বা গুরুতর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু, তাদের নলের সাহায্যে অল্প পরিমাণে খাবার বারবার খাওয়াতে হবে।
সুস্থ হওয়ার পর– অসুখ থেকে সেরে ওঠার পর শিশু যতটুকু ওজন হারিয়ে ফেলেছে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে তা পূরণ করা প্রয়োজন। এ পর্যায়ে শিশুর খিদেও বেড়ে যায়। এ সময় শিশুকে আগের চেয়ে বেশি করে খাওয়াতে হবে। এবং অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য সারাদিনে অতিরিক্ত এক বেলা খাবার খেতে দিতে হবে।
লেখক : সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ,
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।











