অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন ‘নেহাই’

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৫ মার্চ, ২০২২ at ৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ

দোঁহা। দু’ লাইনের পঙতি। এক ধরনের মরমী কবিতা। বলা যায়, ‘অধ্যাত্ম বাণীবদ্ধ মানবিক, অসামপ্রদায়িক ও জীবন চেতনার নির্যাস, মরমী সংগীত’ হচ্ছে দোঁহা। সমকালে অনেকেই দোঁহা লিখেন। তবে সাফল্যে তাদের প্রত্যেককেই অতিক্রম করে ‘সিদ্ধির চুড়ো’ স্পর্শ করেছেন কবি ইউসুফ মুহম্মদ। এবার বইমেলায় বেরিয়েছে তার দোঁহা গ্রন্থ ‘নেহাই’। যেটা তার গ্রন্থিত দোঁহা এর চতুর্থ অংশ।
নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন বইমেলায় গতকাল দৈনিক আজাদীর সঙ্গে কথা হয় কবি ইউসুফ মুহম্মদ এর। জানালেন, দোঁহা এর মাধ্যমে এমন বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন, যে বার্তায় আছে অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন।
তিনি বলেন, ‘নেহাই’ মূলত দোঁহা গ্রন্থ। সে গ্রন্থে মানুষের মানবিকতা, মানুষের কথা এবং মানুষের প্রেম-ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে। অনেকে জানতে চেয়েছেন ‘নেহাই’ শব্দের অর্থ কি? মানুষের বিপণ্নতাও স্থান পেয়েছে কবিতাগুলোতে। অধিকাংশ কবিতাই দুই লাইনের। ‘দোঁহা’ সাধারণত দুই পঙতির কবিতা। কিন্তু বিষয়বস্তুর কারণে অনেক সময় চার, ছয় এবং বার পঙতির কবিতাও হয়। ‘নেহাই’ এ সেরকম কবিতা আছে। এ কবি বলেন, ‘নেহাই’, কামারশালার জান্তব যে যজ্ঞ সেখানে একটা লোহা সবসময় দাঁড়িয়ে থাকে। গনগনে লোহার গরম করে সেটার পিটিয়ে তৈরি করা হয় দা, ছুরি, বটি। দা, ছুরি বা বটি তৈরি হয়ে বিভিন্ন জায়গায় চলে যাচ্ছে। কিন্তু নেহাই এর নড়ার কোনো সুযোগ নাই। মানুষের জীবনও ও রকম। সামাজিক, পারিবারিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, সাস্প্রদায়িক ও বৈশ্বিক চাপ রয়েছে মানুষের উপর। সব সময় চাপ মানুষের ঘাড়ের উপর দিয়ে যাচ্ছে। মূলত মানুষ এখানে প্রধান। যে মানুষটার নড়ার কোনো সুযোগ নাই। সে কারণে বইয়ের নাম রেখেছি ‘নেহাই’। নেহাই এর মাধ্যমে মানুষের মানবিকতা, মানুষের মনের কথা তুলে ধরতে চেয়েছে। যেন অসাম্প্রদায়িক এবং সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ হয় সে চেষ্টা করেছি।
কবি ইউসুফ বলেন, দোঁহার একটা বিশেষ ভঙ্গি আছে। কবির বেনারস, বিজব অনেকে দোঁহা লিখেছেন। তাদের চেতনায় ছিল সমন্বিত সমাজ। যেখানে সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না। সমন্বয়ের মাধ্যমে একটা সুশৃঙ্খল এবং সুন্দর সমাজ বির্নিমাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন তারা। যেখানে ধর্মে ধর্মে এবং মানুষে মানুষে কোনো হানাহানি থাকবে না। সে বিষয়গুলো ‘নেহাই’ এ স্থান পেয়েছে।
নেহাই এর প্রতি আকর্ষণ কীভাবে তৈরি হয়েছে জানতে চাইলে এ কবি বলেন, কেন্দ্র শাষিত যে কবিতা সে কবিতাও আমি লিখি। এর মধ্যে কয়েকটা কাব্যগ্রন্থ বেরিয়েছে। সামনেও একসঙ্গে তিনটা কাব্যগ্রন্থ বেরুবে। কিন্তু দোঁহায় কেন এসেছি তার উত্তরে এতটুকু বলা যায়, কবির বেনারস বা তার সঙ্গে যারা দোঁহা চর্চা করেছেন তাদের দোঁহা পড়ার পর মনে হয়েছে, তারা যে সমাজের চিন্তা করেছেন সে সমাজ কিন্তু এখনো পাইনি। তাদের প্রত্যাশিত মানুষ ও সমাজ এখনো পাইনি। সে সময়টা যদি ধারণ করতে পারি অর্থাৎ মনুষকে যদি আবার ওই আলোর পথে নিয়ে যেতে পারি তাহলেই সত্যিকারের সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ হবে। যে সুন্দর সমাজের স্বপ্ন আমিও দেখি। তাই আমি দোঁহার মাধ্যমে সত্য ও সুন্দরকে তুলে ধরছি।
তিনি বলেন, অসততা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মানুষের প্রতি আহবান জানানো এবং অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণের কাজ করাই হচ্ছে দোঁহার বাণী। আমার মনে হয় দোঁহার দু’ লাইনের পদ্যের মাধ্যমে মানুষকে অনেক কিছু পৌঁছিয়ে দিতে পারি।
কবি ইউসুফ মুহম্মদ বলেন, কলকতার একটি পত্রিকায় প্রকাশিত আমার দোঁহা পড়ে কলকাতার বিখ্যাত শিল্পী অভিজিৎ মুখার্জি নিজ থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তিনি আমার বইয়ের জন্য বিনা সম্মানীতে অনেকগুলো শিল্পকর্ম দিয়েছেন। এই যে, দোঁহা পড়ে ওনার ভালোলাগা বা দোঁহার সাথে ওনি নিজেকে একাত্ম করতে পেরেছেন সেখানেই আমার আনন্দ।
সংশোধনী :
গতকাল শুক্রবার লেখকের কথায় ‘বৃক্ষ’ সকল প্রাণীর আশ্রয়স্থল’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের একাংশে ‘চট্টগ্রামে প্রথম যে নাটক প্রযোজনা আমার হাত ধরে এসেছে’ ছাপা হয়। মূলত এটি হবে, ‘চট্টগ্রামে প্রথম যে যৌথ প্রযোজনার নাটক সেখানে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছি’।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে হলুদ তরমুজের আবাদ
পরবর্তী নিবন্ধবন্ধ তিন জোড়া শাটল ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত