অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে নৌকায় ভোট দিন

মাতারবাড়িতে সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ।। মহেশখালীতে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে যারা গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায় তাদের বয়কট করুন সোনার বাংলায় একজনকেও গৃহহীন থাকতে হবে না

মহেশখালী প্রতিনিধি | রবিবার , ১২ নভেম্বর, ২০২৩ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান সরকারের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে নৌকায় আবার ভোট চেয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় একজনকেও গৃহহীন থাকতে হবে না। আওয়ামী লীগ সরকার জনবান্ধব সরকার, গণমানুষের উন্নয়নের সরকার। বাংলাদেশ এখন গরিব রাষ্ট্র নয়। মানুষের ঘরে ঘরে মোবাইল হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হয়েছে। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজার এবং মহেশখালীতে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প দিয়েছি। মহেশখালীতে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। আপনাদের লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা হয়েছে। আগামী দিনে আপনারা নৌকায় ভোট দিন। জ্বালাও, পোড়াও রাজনীতির সাথে যারা জড়িত তাদেরকে বয়কট করুন।

গতকাল শনিবার বিকাল ৩টায় মহেশখালীর মাতারবাড়িতে স্থাপিত গভীর সমুদ্র বন্দর ও কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের টাউনশিপ মাঠে স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠান শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর ও মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কুতুবদিয়া সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনসহ ১৪টি প্রকল্প উদ্বোধন এবং ৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি জনসভাস্থলে পৌঁছালে মুহুর্মুহু স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। জনসভা মঞ্চে উঠে তিনি হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনের জবাব দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপকূলবাসীর পাশে ছিলেন। তিনি কক্সবাজারের লবণ শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে চাষিদের কল্যাণে কাজ করেছেন। আমি সেই পথ অনুসরণ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ যেকোনো সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, লবণ অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ একটি পণ্য। তাই লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করেছি। আগে কয়লা বিদ্যুতের এই স্থানে লবণ চাষ হতো। লবণ চাষ অব্যাহত থাকবে। লবণ চাষে আরো আধুনিক পদ্ধতির সুযোগসুবিধা করে দেওয়া হবে। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

এ সরকারের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে নৌকায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন তা গড়তে যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত রয়েছি। বাংলাদেশের মানুষকে আমি পরিবার হিসেবে নিয়েছি। আপনাদের মাঝেই ফিরে পেয়েছি বাবার স্নেহ, মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ। আপনাদের কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য আমি যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। শুধু আপনাদের কল্যাণ করাই আমার একমাত্র কাজ। আপনাদের কাছে দোয়া ও সমর্থন চাই। বাবার মতো রক্ত দিতে হলেও পিছপা হব না। তিনি আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানান।

দেশে চলমান অবরোধের নামে সড়কে সন্ত্রাস ও বিশৃক্সখলার জন্য বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের প্রতি ন্যূনতম মানবতা বোধ ও দরদ থাকলে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানোর মতো কাজ করতে পারে না। তাই এদের প্রতি আপনারা সজাগ থাকুন, এদেরকে বয়কট করুন।

জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ বছর আগের বাংলাদেশ আর এখন যে বাংলাদেশআমরা পরিবর্তন করেছি; আজকে যার বয়স ১৫ বছর সে মনে করবে, এটা তো এমনই ছিল, কিন্তু তা না। এমনকি ২০২৫ বছরের যে সন্তান, সে চিন্তা করে দেখুক, বাংলাদেশ এখন কোন জায়গায় আছে? কারণটা হলো আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই হয়েছে।

তিন দশক আগে ঘূর্ণিঝড় দুর্গত মাতারবাড়ির বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়ানোর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, কক্সবাজারে যা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর সময়ে। ৯১ সালে ঘূর্ণিঝড় হয়, তাতে পুরো এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলোচ্ছ্বাসে কত মানুষ জীবন হারায়, কত জীবন নষ্ট হয়। তখন ক্ষমতায় খালেদা জিয়া, তিনি কিন্তু আসেননি। এসেছিলাম আমি আর আমার নেতাকর্মীরা। আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই। সেই দিন কেউ আপনাদের পাশে দাঁড়ায়নি। এ কথা চিন্তা করে এই এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হাতে নিয়েছি। এসেছি আপনাদের কিছু উপহার দিতে।

তিনি বলেন, একানব্বইয়ের ঘূর্ণিঝড়ে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কক্সবাজারে, তারা বস্তি করে থাকত। তাদের জন্য খুরুশকুলে সকলের জন্য বহুতল ভবন করে ফ্ল্যাট করে দিচ্ছি। কেউ ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না।

দ্বীপ এলাকায় সরকার এখন সাবমেরিনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশেষ করে দ্বীপ অঞ্চলগুলো, অনেকেই ভেবেছিল এখানে কিছুই হবে না। এখন আলোকিত মহেশখালী, আলোকিত কুতুবদিয়া, আলোকিত মাতারবাড়ি।

সাক্ষরতার হার বাড়াতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিনা বেতনে শিক্ষা ও বৃত্তি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিভিন্ন ধরনের ভাতা দেওয়া হচ্ছে, যাতে মানুষ ভালো থাকে। কৃষক যাতে সহজে চাষাবাদ করতে পারে, সেজন্য সারে ব্যাপক ভর্তুকি, বীজ কেনা সহজীকরণ করেছে সরকার।

রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেটাও আমরা নিয়ন্ত্রণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ সেটাও খুব শিগগিরই হ্রাস পাবে। মানুষ আরও ভালোভাবে চলতে পারবে। এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখবেন না, যে যা পারেন চাষ করবেন। আমাদের দেশকে আমরাই এগিয়ে নিয়ে যাব। আজকে দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে, আমরা উপকারভোগী কার্ড দিচ্ছি। ভিজিএফভিজিডির মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি। যখন সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে, আমরা জেলেদের কার্ড দিয়েছি, খাদ্য সহায়তা দিয়ে থাকি, বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করে দিয়ে থাকি; যাতে মানুষ কষ্ট না পায়।

কক্সবাজারের উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, কক্সবাজারে সম্পূর্ণ একটা ক্রীড়া কমপ্লেক্স হবে। এরই মধ্যে ক্রিকেট স্টেডিয়াম করেছি, ফুটবল স্টেডিয়ামও করব। প্রতিটি এলাকায় মিনি স্টেডিয়িাম করেছি, যাতে সবাই খেলাধুলা করতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। মানুষের জন্য আমরা কাজ করি। আর অন্য একটি দল আছে, এরা মানুষের সম্পদ লুটে খায়। খুনহত্যাবোমাবাজিগ্রেনেড হামলাচোরাকারবারিঅস্ত্র চোরাকারবারি এইগুলো তারা জানে। মানুষের কল্যাণে তারা কাজ করতে পারে না। সেটাই হচ্ছে বাস্তবতা।

সম্প্রতি সৌদি আরব সফরে গিয়ে দেশের মানুষের সুন্দর জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের জন্য আমার বাবা সারাজীবন কষ্ট করেছেন। আমি তার কন্যা, আমার একটাই দায়িত্ব, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ঘর পাবে, রোগে চিকিৎসা পাবে, লেখাপড়া শিখবে। বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ হবে, বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলবে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার পাশা চৌধুরী। সাধারণ সম্পাদক তারেক বিন ওসমান শরীফের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক এলাহী চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, চীফ হুইপ নুরে আলম চৌধুরী লিটন, মহেশখালী কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুল রহমান সোহাগ, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা শেখ ফজলে নাঈম, ছাত্রলীগের সভাপতি মুহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি প্রশান্ত ভুষন বড়ুয়া, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান, সংসদ সদস্য জাফর আলম, সাইমুম সরওয়ার কমল, কানিজ ফাতিমা মোস্তাক ও শাহীন আক্তার চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন সিআইপি, মহেশখালী পৌর মেয়র মকসুদ মিয়া, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী, পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আনছারুল করিম, মহেশখালী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান, সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল করিম প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাঁদলেন প্রধানমন্ত্রী, কাঁদলেন এমপি আশেক
পরবর্তী নিবন্ধযেসব প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তি স্থাপন