একবার গোপাল ভাঁড়ের খুব পেটে ব্যথা হয়েছিল। সহ্য করতে না পেরে তিনি মায়ের কাছে প্রার্থনা করে বললেন, ‘মাগো, যদি ভালো করে দিস তবে জোড়া পাঁঠা বলি দেব’। কিছুক্ষণ পরেই গোপালের পেটে ব্যথা কমে গেল। সে এবার বলল, ‘মাগো, ব্যথা তো এমনিতেই কমে যেতো। শুধু শুধু পাঁঠা বলির কথা বলেছিলাম’। কাকতালীয়ভাবে গোপালের আবার ব্যথা শুরু হয়ে গেল। গোপাল দেখলো এবার আর রক্ষা নেই। সে তার চিরাচরিত নিয়ম অনুসারেই বললো, ‘মাগো, তুই মা হয়েছিস, আর সন্তানের ঠাট্টা বুঝিস না? আমি তো সত্যিই জোড়া পাঁঠা বলি দিতাম’। হাসির রাজা, রসিক রাজা, জ্ঞানের রাজা গোপাল ভাঁড়ও কিন্তু সুযোগ বুঝে দেবীর সাথে তামাশা করতে ছাড়েন না। তার সেই ঠাট্টা – তামাশাগুলো আমাদের জীবন্ত করে তোলে।
অন্যদিকে আমাদের সৃষ্ট ঠাট্টা তামাশাগুলো আমাদের সবাইকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নয়তো বিশ্বজুড়ে মহামারির এই একবছরেও আমাদের কোনো শিক্ষা হয়নি। গেল বছর মৃত্যুর বিভীষিকা দেখে সবাই এতটা আতঙ্কিত ছিলাম, দিন রাত যে যেভাবে পেরেছি সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে গেছি। মৃত্যু কখন, কার দুয়ারে হানা দেয় এই ভেবে অনেক সচেতন ছিলাম সবাই। সবাইকে সুস্থ ও ভালো রাখার প্রার্থনা ছিলো অবিরাম। মানুষ তার কৃতকর্মের জন্য অনেক অনুতাপ করেছিল। পৃথিবী রোগ মুক্ত হলে আবার সৎ ও ভালো হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা জানিয়েছিল। শুধু সময়ের ব্যবধান! সেই আমরাই আমাদের শর্ত, সচেতনতা, প্রার্থনা ভুলে গিয়ে ভাঁড় সেজে বসলাম। ফলশ্রুতিতে আজকের এই পরিণতি! চারিদিকে আবার মৃত্যুর পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে! লাভ ও লোভের নেশা মানুষকে এমন জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে, যেখানে মানব সভ্যতার অস্তিত্ব আজ অধঃপতনের দিকে। সব সময় ঠাট্টা – তামাশায় জীবন চলে না। এখনো সময় আছে। সবাই এবার সচেতন হই। জীবন ও জীবিকার তাগিদে একে অপরকে বাঁচিয়ে রাখার মন্ত্রে দীক্ষিত হই। নতুবা আসন্ন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রচণ্ড বেগ পেতে হবে।