অর্থাভাবে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে গৃহীত চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকল্প। আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের মাঝে সিডিএ মাত্র ছয়শ কোটি টাকা পেয়েছে। বাকি টাকার সংস্থান না থাকায় কালুরঘাট-শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত সাড়ে আট কিলোমিটারের মেরিন সড়ক এবং ১২টি স্লুইচগেট নির্মাণের কাজ মাঝপথে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সরকারি বরাদ্দের টাকা না পাওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ১শ কোটিরও বেশি টাকার বিল আটকা পড়েছে। প্রকল্পটিকে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করায় অর্থ প্রাপ্তি নিয়ে এই সংকট তৈরি হয়েছে। প্রকল্পটিকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করতে সিডিএ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নগরীর আবাসন ও শিল্পায়নের পাশাপাশি যান চলাচলে গতি আনতে কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত নদীর পাড় ধরে একটি রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত প্রকল্পের আওতায় কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত সাড়ে আট কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৮৬ ফুট প্রস্ত চার লেনের সড়ক রয়েছে। বর্তমানে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে চার মিটার উচু বেড়িবাঁধকে ৯.৫ মিটার বা ৩১ ফুট উঁচু করে নির্মাণ করা হচ্ছে। শুধু সড়ক নয়, নদীর জোয়ারের পানি ঠেকাতে সাড়ে আট কিলোমিটার রাস্তায় ১২টি খালের মুখে স্লুইচগেট নির্মাণ করা হচ্ছে। ১২ স্লুুইচগেটের চারটিতে নৌকা পারাপারের বোট পাস রাখা হয়েছে।
২০১৮ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটিতে মোট ৫৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। চলতি বছর বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৯৫ কোটি টাকা। কিন্তু এক টাকাও পাওয়া যায়নি। করোনাকালে প্রকল্পটিকে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করায় বরাদ্দের টাকা ছাড় স্থগিত হয়ে গেছে। ‘সি’ ক্যাটাগরির কোনো প্রকল্পকে আপাতত বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। ‘এ’ ও ‘বি’ ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলোতে সরকারি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড নির্মাণ কাজ করছে। ইতোমধ্যে রাস্তা নির্মাণের পাশাপাশি ৭টি স্লুইচগেটের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। করোনাকালেও দ্রুত গতিতে প্রকল্পটির কার্যক্রম চলছে। সাতটি স্লুইচগেট আগামী বর্ষার আগে চালু করার কথা। বাকি ৫টির নির্মাণ কাজ আগামী মাসে শুরু করার কথা রয়েছে। আগামী বর্ষার আগে স্লুইচগেটগুলোর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত না হলে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সুফল পাওয়া সম্ভব হবে না। এই প্রকল্পের সফলতার ওপর মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত ৫ হাজার ৬শ ১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকার প্রকল্পটির সুফল নির্ভর করছে। কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত নগরী থেকে নদীতে পড়া ১২টি খাল রয়েছে। সেগুলোর ওপর স্লুইচগেট চালু না হলে নগরীকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করা কঠিন হবে। অর্থ সংকটের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে স্লুইচগেটগুলো নির্মাণ সম্পন্ন করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পটিকে জরুরি ভিত্তিতে ‘সি’ ক্যাটাগরি থেকে ‘এ’-তে উন্নীত করা না হলে প্রয়োজনীয় অর্থ পাওয়া যাবে না। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পত্র পাঠিয়ে বিষয়টি জানান। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেও অনুরোধ করেন। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত প্রকল্পটির ক্যাটাগরি পরিবর্তিত হয়নি।
এ বিষয়ে সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস বলেন, আমরা বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে বুঝানোর চেষ্টা করছি। এই প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হলে নগরীকে জলাবদ্ধতামুক্ত করা সম্ভব হবে না। শীতকালেও জোয়ারের পানিতে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তাই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।