নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত মেগা প্রকল্পের বর্ধিত অর্থের ৫০ শতাংশ সরকারি তহবিল থেকে দেয়া হবে। বাকি অর্থের ২৫ শতাংশ সরকার থেকে ঋণ হিসেবে দেয়া হবে প্রকল্প গ্রহীতা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ)। অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ অর্থ সিডিএ’র তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে।
সম্প্রতি এমন সিদ্ধান্ত দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এরপর প্রকল্পটির প্রস্তাবিত সংশোধিত ডিপিপি (আরডিপিপি) যাচাই–বাছাই করছে পরিকল্পনা কমিশন। এর অংশ হিসেবে আজ শনিবার পরিকল্পনা কমিশন এর ভৌত অবকাঠামো বিভাগের উপ–সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম এর প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের কথা রয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের এ প্রতিনিধির পরিদর্শন রির্পোট ইতিবাচক হলে প্রকল্পের আরডিপিপি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি’র (পিইসি) সভায়। পিইসি সভায় অনুমোদন পেলেই তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি’র (একনেক) সভায়। জানা গেছে, একনেক সভায় অনুমোদন না পেলে প্রকল্পটির কাজ একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে। অবশ্য অর্থ সংকটে বর্তমানে প্রকল্পের কাজ থমকে আছে। অথচ প্রকল্পভুক্ত ৩৬ খালের ২০টির কাজ এখনো শেষ হয়নি। এর মধ্যে শহরের সিংহভাগ এলাকার পানি নিষ্কাশন হওয়া চাক্তাই খালও রয়েছে। প্রকল্পের কাজ শুরু করা না গেলে শহরের জলাবদ্ধতা সমস্যা দূর না হওয়ার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, গত জুন মাসে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাই চলতি অর্থ বছরে প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ থাকা ৫৮০ কোটি টাকা ছাড় করছে না মন্ত্রণালয়। তাই এ বছর এখনো প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। এদিকে আরডিপিপি একনেকে অনুুমোদন না পেলে প্রকল্পের মেয়াদও বৃদ্ধি বাড়ানো যাবে না। সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর প্রকল্পের আকার বৃদ্ধি করে ১০ হাজার ৪২০ কোটি টাকার সংশোধিত ডিপিপি প্রস্তাব করে সিডিএ। তবে ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি প্রস্তাবিত ব্যয় কমিয়ে ৮ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করে। পরবর্তীতে অনুমোদনের জন্য অর্থ বিভাগে পাঠানো হলে বর্ধিত ৩ হাজার ১২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে। শেষে বর্ধিত অর্থের ৫০ শতাংশ সিডিএ’র নিজস্ব তহবিল থেকে এবং বাকি টাকা ২০ বছর মেয়াদে সরকার থেকে ঋণ নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের শর্তে অনুমোদন দেয়। এরপর গত মে মাসে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণ অর্থ সরকারি তহবিল থেকে দেয়ার জন্য অর্থ বিভাগে চিঠি দেয়। তবে অর্থ বিভাগ সম্প্রতি সিদ্ধান্ত দেয়, বর্ধিত অর্থের ৫০ শতাংশ সরকারি তহবিল থেকে, ২৫ শতাংশ সিডিএ’র ফান্ড থেকে এবং ২৫ শতাংশ সরকার থেকে ঋণ নিয়ে সিডিএ’কে পরিশোধ করতে হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী আজাদীকে বলেন, চলতি অর্থ বছরে এখনো অর্থ ছাড় করেনি। আরডিপিপি অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত ছাড় করারও সুযোগ নেই। তবে আশা করছি দ্রুত প্রকল্পটি পিইসি হয়ে একনেকে অনুমোদন পাবে। তবে শেষ পর্যন্ত অনুমোদন না পেলে প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। চাক্তাই খাল, চাক্তাই ডাইভার্শন খাল, গয়নাছড়া খাল, হিজরা খাল ও মির্জা খালসহ গুরুত্বপূর্ণ খালের কাজ এখনো শেষ হয়নি। তা শেষ করা না গেলে শহরের বড় একটা অংশের জলাবদ্ধতা সমস্যা দূর হবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্পের বড় একটি অংশ ভূূমি অধিগ্রহণ। টাকা না পেলে ভূমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। তাছাড়া ইতোপূর্বে অনেক জায়গায় খাল প্রশস্ত করেছি মানুষের জায়গা নিয়ে। তাদের আমরা আশ্বস্ত করেছিলাম ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হলে তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এখন টাকা না পেলে তাদের ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করা নিয়েও জটিলতা তৈরি হবে। তবে আশা করছি, শেষ পর্যন্ত প্রকল্পের আরডিপিপি অনুমোদন হবে।
জানা গেছে, পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকায় ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সমপ্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক সিডিএ’র মেগা প্রকল্পটি অনুমোদন পায় ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট। ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সিডিএর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছিল। পরবর্তীতে নানা প্রক্রিয়া শেষে একই বছরের ২৮ এপ্রিল নগরীর চশমা খাল ছাড়াও মুরাদপুর এলাকার সুন্নিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন খাল ও বহদ্দারহাট মোড়ের বড় নালা পরিষ্কার করার মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। শুরুতে প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এ সময়ে প্রকল্পের বিপরীতে মন্ত্রণালয় ছাড় করে ৩ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা। প্রকল্পটির এ পর্যন্ত ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৮৬ শতাংশ।