অভয় দিলেন তারা

টিকা নিলেন প্রধান বিচারপতিসহ যেসব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-সচিব

| সোমবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ

মহামারী মুক্তির প্রত্যাশা নিয়ে সারা দেশে শুরু হয়েছে করোনাভাইরাসের গণ টিকাদান। প্রথম দিন টিকা নিয়ে ভয়কে জয় করে সবাইকে টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল রোববার সকাল ১০টায় মহাখালী স্বাস্থ্য ভবনে ভার্চুয়ালি টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এর পরপরই সারা দেশে ১০১৫টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা দেওয়া শুরু হয়ে যায়। বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা। সবাইকে এ টিকার দুটি ডোজ নিতে হবে। খবর বিডিনিউজের।
বাংলাদেশে এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ না হওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী তাদের এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করা হয়। কারও মধ্যে গুরুতর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না যাওয়ায় পরিকল্পনা মতো গতকাল গণ টিকাদান শুরু হলো। এই টিকা নিরাপদ এবং করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর বলে প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ।
জাতীয়ভাবে কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি পরিকল্পনা অনুযায়ী তিন ভাগে (ফেইজ) মোট পাঁচ ধাপে এসব টিকা দেওয়া হবে। কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধে সামনের কাতারে থাকা মানুষ প্রাধান্য পাবেন।
সাবেক প্রধান বিচারপতি : জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গিয়ে টিকা নেওয়ার পর আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেন, এই টিকার অপেক্ষায় ছিলাম। টিকা দিতে পেরে স্বস্তিবোধ করছি।
প্রধান বিচারপতি : প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন দুপুরে সস্ত্রীক শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে গিয়ে টিকা নেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি টিকা নিয়েছি, আমার এখন পর্যন্ত কোনো অসুবিধা হয়নি। আমিসহ আপিল বিভাগের সাতজন বিচারপতি টিকা গ্রহণ করেছে। হাই কোর্ট বিভাগের ৪০ জন বিচারপতি টিকা নিয়েছেন। সবাইকে টিকার জন্য নিবন্ধন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যে বাংলাদেশে আগে দেওয়া হয়েছে। এটা প্রধানমন্ত্রীর বিশাল কৃতিত্ব।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী : শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে টিকা নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আজ আমাদের আনন্দের দিন। এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম। এই টিকা নিয়ে যেন কোনো রিউমার না হয়।
এ পর্যন্ত যত টিকা তৈরি হয়েছে তার মধ্যে অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ‘সবচেয়ে ভালো’ বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, কোভ্যাঙ থেকে আরও টিকা চলে আসবে। টিকাদান কার্যক্রম সারা বছর ধরে চলবে। আমরা চাই দেশবাসী স্বাভাবিক জীবনে চলে আসুক। টিকা নিয়ে কোনো সমালোচনা চাই না। দেশবাসীর জীবন রক্ষার্থে এই টিকা দেওয়া হচ্ছে। আমরা নিজেরা নিচ্ছি, দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ টিকা নিচ্ছেন, তাদের দেখে সাধারণ মানুষ উৎসাহিত হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের এক বছর পূর্ণ হওয়ার আরও এক মাস বাকি। সংক্রমণের হার ইতোমধ্যে ৩ শতাংশের নিচে চলে এসেছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী, এই ধারা চলতে থাকলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে বলা যায়। আমরা আশা করি করছি করোনাভাইরাস দূর হয়ে যাবে। ফাইনাল ব্লো-টা আমরা দেব ভ্যাকসিনের মাধ্যমে।
কৃষিমন্ত্রী : শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে টিকা নেওয়ার পর কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, করোনাভাইরাস মহামারী সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এর বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই পড়েছে। করোনাভাইরাসের টিকা এই মহামারীর বিরুদ্ধে মানবজাতির একটা বড় অর্জন।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী : দুপুরে সস্ত্রীক জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে গিয়ে কোভিড-১৯ এর টিকা নেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। সবাইকে অপপ্রচার থেকে দূরে থাকার অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমি ভ্যাকসিন নিয়েছি, কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
পরিবেশ মন্ত্রী : পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন সকালে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে টিকা নেন। মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গুজব ও অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিরাপদ রাখতে জনগণকে টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মন্ত্রী।
রেলমন্ত্রী : রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন দুপুরে সচিবালয় ক্লিনিকে গিয়ে টিকা নেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, এটা চমৎকার একটা ব্যবস্থাপনা। ব্যবস্থাপনা শুধু এখানে নয়, যতটুকু জানতে পেরেছি জেলা পর্যায়ে, উপজেলা পর্যায়ে এই টিকা দেওয়া হচ্ছে।
রাশেদ খান মেনন : টিকা নিয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, এটা আমাদের সৌভাগ্য যে অতি সহজেই টিকা পেয়েছি।
ঢাকার পুলিশ কমিশনার : সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারদের সঙ্গে নিয়ে করোনাভাইরাসের টিকা নেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার মুহা. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, করোনা যুদ্ধে ডিএমপির ২৭ জন পুলিশ সদস্য মারা গেছেন। অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতো আমাদেরও, বিশেষ করে নিচের স্তরের পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সংশয় ছিল টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে। সেই সংশয় দূর করার জন্যই অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারদের সঙ্গে নিয়ে প্রথম দিনই টিকা নিলেন বলে জানান তিনি।
ডা. সামন্ত লাল সেন : শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন সকালে শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে গিয়ে টিকা নেন। পরে বলেন, টিকা নিয়ে গর্বিত বোধ করছেন তিনি।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী : দুপুরে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে গিয়ে টিকা নেওয়ার পর সবাইকে টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি চৌধুরী। তিনি বলেন, খুব ভালো আছি। ভয়ের কোনো কারণ নাই। মন্ত্রিপরিষদ সচিব : শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে টিকা নেওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমার তিন বন্ধু বিদেশ রয়েছে। তারা ভ্যাকসিন এঙপার্ট, তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সুতরাং টিকা নেওয়ার বিষয়ে আমার কোনো ভয় নেই। সবারই টিকা নেওয়া উচিত।
ঢাবি উপাচার্য : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে টিকা নেওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, প্রথম দিনে টিকা নিলাম, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সবাই টিকা নিতে উৎসাহ পায়। সবার কোভিড-১৯ টিকা নেওয়া উচিত, টিকার উপর শতভাগ আস্থা রাখা উচিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএগার মাস পর ফের শুরু হচ্ছে সাক্ষ্যগ্রহণ
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে সাত মাসে শনাক্তের হার সর্বনিম্ন