সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও ধর্মঘটে উত্তাল হয়ে উঠেছে মিয়ানমার। রাজধানী নেপিডোতে পুলিশ গতকাল শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার করে, এবং রাষ্ট্রীয় টিভিতে সতর্ক করে দেয়া হয় যে বিক্ষোভকারীরা ‘জননিরাপত্তা ও আইনের শাসনের’ প্রতি হুমকি সৃষ্টি করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে মিয়ানমারে বিক্ষোভ চলার মধ্যে প্রথম টিভি ভাষণে নতুন করে অভ্যুত্থানের সাফাই গেয়ে ফের নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সামরিক নেতা জেনারেল মিন অং হ্লাইং। গত নভেম্বরের নির্বাচন সুষ্ঠু ছিল না উল্লেখ করে গতকাল তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন জান্তা আবার নতুন করে নির্বাচন দেবে এবং বিজয়ীর হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে।
প্রসঙ্গত, সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে মিয়ানমারে শহরগুলোর রাস্তায় গত তিন দিন ধরে বিক্ষোভ হচ্ছে। গতকাল সকালে রাজধানী নেপিডো, ইয়াঙ্গুন এবং মান্দালয় সহ নানা শহরে বহু লোক রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন সরকারী চাকুরে, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী ও ব্যাংক কর্মকর্তারা। ইন্টারনেটে কর্মচারিদের বিক্ষোভের প্রতীক হিসেবে কাজ না করার আহ্বান জানানো হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডাক্তার বিবিসিকে বলেন, ‘আজ আমরা পেশাজীবীরা এটাই দেখাতে চেয়েছি যে একনায়কতন্ত্রের পতনের দাবিতে আমরা সবাই এক।’ একজন পোশাক শ্রমিক নিন তাজিন বলেন, আমাদের বেতন কেটে নেয়া হলেও আজ আমরা কাজে যাচ্ছি না।
রাজধানী নেপিডোতে বিক্ষোভরত প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। গতকাল শহরটিতে জড়ো হওয়া কয়েক হাজার প্রতিবাদকারীর একটি দলের ওপর কিছু সময়ের জন্য তীব্র গতিতে জল কামান থেকে পানি ছুড়ে পুলিশ। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, পানির ধাক্কায় কিছু বিক্ষোভকারী মাটিতে ছিটকে পড়ছেন; তারা আহত হয়েছেন বলে মনে হয়েছে। প্রতিবাদকারীরা আবেদন জানানোর পর পুলিশ জল কামান ব্যবহার বন্ধ করে, তবে তখনও বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল।
এ পরিস্থিতির মধ্যে গতকালের ভাষণে আগের অবস্থানই জানান দিয়েছেন জেনারেল মিন অং হ্লাইং। অভ্যুত্থানের পর প্রথম মুখ খুলেই হ্লাইং এর সাফাই গেয়ে নতুন নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এবারও অনেকটা একই সুরে তিনি অভ্যুত্থান কেন ঘটানো হল সে ব্যাখ্যাই দিয়েছেন বেশি। বিক্ষোভকারীদের সরাসরি কোনও হুমকি না দিলেও হ্লাইং বলেছেন, কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়।
জেনারেলের এই ভাষণের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এসেছে জনগণের কাছ থেকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, মানুষজন টেলিভিশনের পর্দার সামনে হাড়ি-পাতিল বাজিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।