চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে যে কয়জন ক্রীড়া সংগঠক সদা হাস্যোজ্জল, কাজের প্রতি দায়বদ্ধ, ক্রীড়াঙ্গনের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ তাদের মধ্যে অন্যতম মোহাম্মদ ইউসুফ। একজন ক্রীড়াবিদ থেকে ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে শীর্ষে আরোহণ করেছিলেন মোহাম্মদ ইউসুফ। তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন নিজের যোগ্যতা এবং কর্ম দক্ষতা দিয়ে। একাধারে একজন হকি খেলোয়াড়, ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম মোহামেডানের যুগ্ম সম্পাদক, অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার একাধিকবার নির্বাহী সদস্য, ফুটবল সম্পাদক, বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এবং সবশেষ হকি ফেডারেশনের সহ সভাপতি ছিলেন মোহাম্মদ ইউসুফ। গতকাল শনিবার সকালে তিনি চলে গেছেন ইহকালের মায়া ত্যাগ করে। মাত্র ৬০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন তিনি। মৃত্যুকালে স্ত্রী, এক ছেলে এক মেয়েসহ অনেক আত্নীয় স্বজন রেখে যান তিনি। গতকাল বাদ আসর মেহেদীবাগ মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে গরীবুল্লাহ শাহ মাজার কবরস্থানে দাফন করা হয় তাঁকে। মোহাম্মদ ইউসুফের মৃত্যুতে চট্টগ্রাম তো বটেই দেশের ক্রীড়াঙ্গনে অপূরনীয় ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁর সহযোদ্ধা ক্রীড়া সংগঠকরা। মোহাম্মদ ইউসুফকে যখনই যে দায়িত্ব দেওয়া হতো সেটা সফল করতে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাতেন। পেশাগত কারনে প্রায়শই কথা হতো ইউসুফ ভাইয়ের সাথে। যখনই কথা হতো তখনই নানা বিষয়ে আলোচনা করতেন, পরামর্শ নিতেন কিভাবে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নেওয়া যায়। গতকাল বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকার মধ্যকার টেস্ট কাভার করতে আসা ঢাকার সাংবাদিকরা ভূয়সী প্রশংসা করছিলেন ইউসুফের। তাদের মতে ইউসুফ যতদিন হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ততদিন সফলতা এবং দক্ষতার সাথে ফেডারেশন পরিচালনা করেন। তাদের মতে ইউসুফ ছিলেন একজন সফল হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। যতদিন চট্টগ্রামে ফুটবলের সম্পাদক ছিলেন বা হকি কমিটির সম্পাদক ছিলেন ততদিন এই দুই কমিটি ছিল অত্যন্ত সফল। যখনই দেখা হতো বা কথা হতো তখনই একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলতেন বদ্দা দোয়া করবেন যেন দায়িত্ব যেটুকু অর্পিত হয় সেটা যেন পালন করতে পারি। কিন্তু এমন একজন দক্ষ, সৎ এবং কর্মঠ ক্রীড়া সংগঠকের জায়গা হয়নি জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটিতে। সিজেকেএস এর গত নির্বাচনে যুগ্ম সম্পাদক পদে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন ইউসুফ। কিন্তু একরকম চাপ দিয়ে তাঁকে সে পদে নির্বাচন করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছিলেন ইউসুফ। নির্বাচনের পরে যখনই দেখা হত স্বভাবসুলভ সে হাসি দিয়ে বলতেন বদ্দা নিজের ক্লাব নিয়ে বেশ ভালো আছি। কিন্তু হাসির সে আড়ালে একটা চাপা অভিমান যেন কাজ করতো তার ভেতর। বলতেন বদ্দা নিজেকে কোরবানি দিয়ে দিলাম আর কি। সে ক্ষোভ আর ক্ষত নিয়েই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন বরেণ্য এই ক্রীড়া সংগঠক। প্রায়শই বলতেন ভাই মিটিং এ হাততালি দেওয়ার জন্য কর্মকর্তা হয়ে কোন লাভ নেই। নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে না পারলে কমিটিতে থেকে লাভ কি। নিজের মনে কতটা ক্ষোভ আর বেদনা থাকলে যে প্রতিষ্ঠানে জীবনের সিংহভাগ সময় কাটিয়ে দিয়েছেন মৃত্যুর পর নিজের মরদেহ সেই স্টেডিয়ামে না নিতে অছিয়ত করে যান। তাঁর সন্তানরা গতকাল বলেছেন স্টেডিয়ামে নেওয়া হবে না তাঁদের বাবার মরদেহ। অনেকটা অভিমান নিয়েই যেন চলে গেলেন মোহাম্মদ ইউসুফ। গতকাল তাঁর সতীর্থরা বলছিলেন ইউসুফের মত সংগঠক যখন অভিমান নিয়ে বিদায় নেন তখন বুঝতে হবে আমরা কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছি। সত্যিকার অর্থে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গণে যেন গুণির কদর কমে যাচ্ছে দিন দিন। যার জ্বলন্ত প্রমাণ মোহাম্মদ ইউসুফ। এদিকে মোহাম্মদ ইউসুফের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গণে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি, জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, সহ–সভাপতি মো. হাফিজুর রহমান, সহ–সভাপতি ও রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম এহেছানুল হায়দর চৌধুরী বাবুল, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সহ–সভাপতি আলহাজ আলী আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুদ্দিন মো. আলমগীর, চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম শহীদুল ইসলামসহ সিডিএফএ নির্বাহী কমিটি ও কাউন্সিলরবৃন্দ, চট্টগ্রাম মোহামেডানের সভাপতি শাহ আলম বাবুল, সহ–সভাপতি মনজুর আলম মনজু, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের স্টেডিয়াম প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম, মশিউর রহমান চৌধুরী, সরোয়ার আলম চৌধুরী মনি, সৈয়দ মোহাম্মদ তানসীর, জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলরবৃন্দ, সিজেকেএস কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সকল সদস্যসহ ক্রীড়াঙ্গনের কর্মকর্তারা গভীর শোক প্রকাশ করেন।