জরিপ অনুয়ায়ী কর্ণফুলী নদীর বন্দর এলাকার লালদিয়ার চরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আদালতের নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। দুই মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে আদালত বলেছে, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্টদের আদালতে উপস্থিত হতে হবে। পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৯ মার্চ তারিখ রেখেছে আদালত। বন্দর কর্তৃপক্ষের এক আবেদনের শুনানির পর বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়। আদালতে চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুরাদ রেজা। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। খবর বিডিনিউজের।
২০১০ সালের ১৮ জুলাই হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলী নদী দখল, মাটি ভরাট ও নদীতে সব ধরনের স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে নদীর প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিতে বলে আদালত। আদালতের নির্দেশের পর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর কর্ণফুলীর দুই তীরে সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করে। নেভাল অ্যাকাডেমি সংলগ্ন নদীর মোহনা থেকে মোহরা এলাকা পর্যন্ত অংশে ২০১৫ সালে জরিপের কাজ শেষ হয়। সেই জরিপে নদীর দুই তীরে প্রায় আড়াই হাজার অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসন। প্রতিবেদনটি ২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর উচ্চ আদালতে দাখিল করা হয়। এরপর ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলীর দুই তীরে গড়ে ওঠা স্থাপনা সরাতে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এক কোটি ২০ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন চট্টগ্রামের সে সময়ের জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী।
শেষ পর্যন্ত উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হলেও বাধার মুখে তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর রিট আবেদনকারী পক্ষের এক আবেদনে গত বছরের ৯ এপ্রিল কর্ণফুলী তীরে অবৈধ স্থাপনা অবিলম্বে উচ্ছেদ করতে বন্দর চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। উচ্ছেদ করে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কিন্তু পুরোপুরি উচ্ছেদ না করে বন্দর কর্তৃপক্ষ আদালতে সময় চেয়ে আবেদন করে। তখন আদালত তাদের তিন সপ্তাহের সময় বেঁধে দিয়ে বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দিতে বলে। সে সময়ের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করে ফের সময়ের আবেদন করায় গত ১১ ফেব্রুয়ারি আদালত চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যানকে তলব করে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জুলফিকার আজিজ এদিন আদালতে উপস্থিত হয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন। পরে আদালত কর্ণফুলীর তীরে বন্দর এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে তিন মাস সময় বেঁধে দেয়। ওই সময়ের মধ্যে উচ্ছেদ কাজ শেষ করে বন্দর কর্তৃপক্ষকে আদালতের আদেশের বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দিতে বলে ১২ মে পরবর্তী আদেশের জন্য রাখে।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৬ সালে রায় হলেও আংশিক উচ্ছেদ শেষে আর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এর মধ্যে বন্দর চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে বলা হলো আগের বন্দর চেয়ারম্যান বদলি হয়েছে, নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ পেয়েছেন গত এপ্রিলে। এ জন্য তিনি এক বছর সময় চান। বন্দর কর্তৃপক্ষের আইনজীবী মুরাদ রেজা বলেছেন, করোনার কারণে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। তখন আদালত একে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন।
চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, র্যাব কমান্ডার, সিডিএ চেয়ারম্যান ও সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকসহ সকল বিবাদীকে রায় বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনার পাশাপাশি সেবা সংস্থাগুলোকেও (ওয়াসা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস কর্তৃপক্ষ) এ সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিতেও আদালত নির্দেশ দিয়েছে বলে জানান রিটকারী এ আইনজীবী।