চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কর্ণফুলী নদীর তীর এবং চাক্তাই খালের মোহনা সংলগ্ন এলাকায় অবৈধ স্থাপনা দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য অবৈধ স্থাপনাগুলো অপসারণ ও দখল ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৪৭ দখলদারকে ৩০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গত ২৩ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয় (রাজস্ব শাখা) কর্ণফুলীর নদীর তীর এবং চাক্তাই খালের মোহনা সংলগ্ন এলাকায় ৪৭ জন অবৈধ দখলদারের নামে উচ্ছেদ নোটিশ জারি করে। গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের জারিকাররা ভেড়া মার্কেটসহ একাধিক বস্তি ও কলোনির দখলদারদের নোটিশ প্রদানের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় উচ্ছেদের নোটিশ টাঙান। নোটিশে বিএস খতিয়ান ৮৬৫১ দাগে ত্রিশ একর জায়গায় বেড়াযুক্ত টিনশেড ঘর, সেমিপাকা ঘর ও বিভিন্ন স্থাপনার কথা উল্লেখ রয়েছে।
হাই কোর্টের নির্দেশে গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করেছিল জেলা প্রশাসক। এ সময় দুই দফা উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পর মাঝপথে এসে উচ্ছেদ কার্যক্রম গতি হারায়। একই সময় কর্ণফুলীর চাক্তাই খাল সংলগ্ন অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হলেও মাঝপথে থেমে যায়।
দূষণ ও দখলের মুখে রয়েছে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী কর্ণফুলী। নদী রক্ষায় নানা সময়ে রাজনীতিবিদরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নির্দেশনা এসেছে আদালত থেকেও। এছাড়াও এটি দখল ও দূষণমুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় নদী সংরক্ষণ কমিশন। এসবের জেরে গত বছর কর্ণফুলীকে দূষণ ও দখলমুক্ত করতে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়।
এখনও বাস্তবায়িত হয়নি ওইসব প্রতিশ্রুতি ও মহাপরিকল্পনা। আর এ সুযোগেই নির্বিঘ্নে নদীতে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য এবং দখল করা হচ্ছে নদীর জমি। ফলে দূষণ ও দখল হুমকির মুখেই রয়েছে কর্ণফুলী।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠিক উপকমিটির অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, দেশের জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) এ নদীর অবদান ৩৬ শতাংশ। অথচ, এ নদীতেই দৈনিক ২২ হাজার টন শক্ত ও তরল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। সাধারণত ঘরবাড়ি, কল-কারখানা ও বিভিন্ন হাসপাতালের বর্জ্য সেখানে ফেলা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে কর্ণফুলীকে বাঁচানোর জন্য নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। তাঁদের দাবি, কর্ণফুলীর দুই পাড়ে ২ হাজার ১৮১টি সরকারি-বেসরকারি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দিতে হবে। খালগুলো দিয়ে যাতে গৃহস্থালি বর্জ্য, পলিথিন নদীতে পড়তে না পারে, বেলে মাটির পাহাড় বৃষ্টিতে ক্ষয়ে যাতে নদীতে পলি জমতে না পারে সে জন্য মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী সিলট্রেপ তৈরি করতে হবে।
তাঁরা বলেন, নদী জীবন্ত সত্তা। মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে যেমন চিকিৎসা দরকার তেমনি নদীরও শাসন, পরিচর্যা দরকার। কর্ণফুলী এখন মুমূর্ষু, বিপন্ন, অরক্ষিত। বড় সুনামি বা জলোচ্ছ্বাস হলে চট্টগ্রাম বন্দরসহ এ নগরকে চড়া মূল্য দিতে হবে। তাই জরিপ অনুযায়ী নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দিতে হবে। সেখানে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কর্ণফুলী নদীর পাড় ঘিরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অধীনে খাস খতিয়ানভুক্ত যেসব জায়গা অবৈধ দখলে ছিল গত বছর সেগুলোর অধিকাংশই উচ্ছেদ করা হয়েছিল। হাই কোর্টের রিট আদেশ থাকায় সেখানে কিছু জায়গা উচ্ছেদ করা যায়নি। হাই কোর্টের রিটগুলো খারিজ হলে অবৈধ দখলদারদের বাকি অংশগুলো উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমরা আশা করবো, জেলা প্রশাসন ৩০ দিনের বেঁধে দেওয়া সময়সীমাকে এবার ডেটলাইন হিসেবে ধরে কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। দু পাড়ের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের মাধ্যমে শুরু হোক কর্ণফুলীকে বাঁচানোর পদক্ষেপ। আর প্রতিশ্রুতি নয়, এবার প্রকৃত অর্থে কাজ চাই। চট্টগ্রাম বন্দর, নগর, কর্ণফুলী, হালদা এবং নদীপাড়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বাঁচাতে হলে লোক দেখানো কাজ নয়, আন্তরিকতা দিয়ে বাস্তবায়নযোগ্য পদক্ষেপ চাই।