‘জরুরি কাজে আগ্রাবাদ যেতে হবে। তাই বৃষ্টির মধ্যেও বের হয়েছি। গলিতে এক হাঁটু পানি ছিল। কিন্তু রাস্তায় এসে দেখি প্রায় এক বুক পানি। জলাবদ্ধতা নিরসনে হাজার হাজার কোটি খরচ করা হচ্ছে। কিন্তু জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলছে না।’
গতকাল মঙ্গলবার সকালে নগরের মুরাদপুরে আজাদীকে এ কথা বলেন পথচারী মামুন। তার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তখন মুরাদপুর থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত সড়ক ছিল পানির নিচে। এ সময় বহদ্দারহাটের দিক থেকে একটি ভ্যানগাড়ি আসতে দেখা যায়। ওই ভ্যানে ছিল তিনজন মহিলা এবং একজন পুরুষ। গাড়ি বাদ দিয়ে ভ্যানে কেন? এমন প্রশ্নে এক মহিলা বলে উঠেন, ‘অবুক! রাস্তাত এক বুক পানি। গারি ত ন চলের, ভ্যান ছাড়া উপায়ও ত নাই’। (অবুক! রাস্তায় এক বুক পানি। গাড়ি চলছে না। ভ্যান ছাড়া তো উপায় নেই)।
নিজের নাম বলতে অপারগতা প্রকাশ করা এ গৃহিণী জানান, তার বাসা রাহাত্তারপুল। অসুস্থ বোনকে দেখার জন্য যাবেন মির্জারপুলের একটি হাসপাতালে। বাসা থেকে বের হয়ে দেখেন পানি। কোনো সিএনজি না পেয়ে সিদ্ধান্ত নেন রিকশায় করে যাবেন। কিন্তু রিকশাচালক অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করেন। শেষে আরো কয়েকজনকে ভ্যানগাড়িতে করে মুরাদপুর আসতে দেখে তিনিও তাদের সঙ্গী হন। এ মহিলার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, গতকালের জলাবদ্ধতায় তীব্র দুর্ভোগ ও ভোগান্তি হয়েছে নগরবাসীর।
জানা গেছে, সোমবার দিবাগত রাতে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। যা থেমে থেমে সকাল পর্যন্ত পড়ে। তবে সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রায় একটানা বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আবার এ সময় কর্ণফুলী নদীতে ছিল জোয়ার। ফলে টানা ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় নগরের নিম্নাঞ্চল। প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি ডুবে ছিল হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে। পানি ঢুকে যায় অনেক বাসা–বাড়ির নিচতলায় এবং বিভিন্ন দোকানপাটে। এতে দুর্ভোগ ও চরম ভোগান্তি হয়েছে নগরবাসীর।
প্রধান সড়ক ডুবে যাওয়ায় সকালে অফিস–আদালতসহ অন্যান্য কর্মস্থলমুখী লোকজনের দুর্ভোগ হয়েছে। এছাড়া স্কুল খোলা থাকায় শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের ভোগান্তি হয়েছে বেশি। জলাবদ্ধতায় শহরের প্রধান বা মূল সড়কগুলোতে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এতে সৃষ্টি হয় যানজট। তাই বাধ্য হয়ে অনেকে হেঁটেই কর্মস্থলে পৌঁছান। সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জিইসি, ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, মোহাম্মদপুর, শুলকবহর, চকবাজার, ডিসি রোড, একে খান ইস্পাহানি গেট, বহদ্দারহাট, কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকা, কাতালগঞ্জ বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে, পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, কাপাসগোলা, ষোলশহর, বাকলিয়া ও হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি উঠেছে। সন্ধ্যার পরও কাতালগঞ্জ বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে পানি দেখা গেছে।
বৃষ্টির পরিমাণ : পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বিকাল ৩টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১২৩ মিলিমিটার।
আজ ও আগামীকাল বৃষ্টি হতে পারে : গতকাল সকাল ১০টায় ভারী বর্ষণের সতর্কবাণী প্রকাশ করে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এতে বলা হয়, পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা অথাৎ আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রাম, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। ভারী বর্ষণজনিত কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম আজাদীকে জানান, আজও অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ অধিকাংশ জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সে সাথে কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের ফলে কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমানে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তায় বলা হয়, লঘুচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি অব্যাহত রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কঙবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।