হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর চাপ ফের বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে গত ১০/১২ দিন ধরে রোগীর ভিড় হঠাৎ বেড়েছে হাসপাতালগুলোতে।
নগরীর সরকারি-বেসরকারি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন- ২ সপ্তাহ আগেও করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত কেবিন/শয্যা বেশির ভাগই খালি ছিল। কিন্তু গত ১০/১২ দিন ধরে এ চিত্র পাল্টে গেছে। হঠাৎ রোগীর চাপ বেড়ে গেছে
হাসপাতালগুলোতে। কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যার একটিও খালি নেই। কেবিন/শয্যা খালি না থাকায় অনেক রোগীকে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে বলে জানালেন বেসরকারি ন্যাশনাল হাসপাতালের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আমজাদ হোসেন ও পার্কভিউ হাসপাতালের জিএম জিয়াউর রহমান। ন্যাশনাল হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য বর্তমানে নির্ধারিত ৩১টি শয্যার সবকয়টিতে রোগী ভর্তি জানিয়ে পরিচালক ডা. আমজাদ হোসেন বলেন, ১০/১২ দিন আগেও রোগীর সংখ্যা কম ছিল। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে একটি শয্যাও খালি থাকছে না। শয্যা খালি না থাকায় অনেক রোগীকে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। ৩ জন করোনা রোগী আইসিইউতে ভর্তি রয়েছে বলেও জানান ডা. আমজাদ। একই তথ্য দিলেন পার্কভিউ হাসপাতালের জিএম জিয়াউর রহমান। হাসপাতালটিতে করোনা রোগীদের জন্য বর্তমানে ২৯টি কেবিন নির্ধারণ করা আছে। এর একটি কেবিনও খালি নেই। অর্থাৎ সবকয়টি কেবিনে এখন রোগী ভর্তি। খালি না থাকায় গত কয়েকদিনে বেশ কয়জন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি নেয়া সম্ভব হয়নি, ফিরিয়ে দিতে হয়েছে বলে জানান হাসপাতালের জিএম জিয়াউর রহমান। আইসিইউতে ৭ জন করোনা রোগী ভর্তি আছে বলেও জানান তিনি। বেসরকারি মা ও শিশু হাসপাতালে বর্তমানে ৮৯ জন করোনা রোগী ভর্তি রয়েছেন বলে জানালেন হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. নুরুল হক। মেট্রোপলিটন হাসপাতালে নির্ধারিত ৩৫টি কেবিনের মধ্যে বর্তমানে ২৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছে বলে জানান হাসপাতালের জিএম মোহাম্মদ সেলিম। ২ সপ্তাহ আগেও রোগীর সংখ্যা ১০/১২ জনের বেশি ছিল না বলে জানান তিনি।
বেসরকারি ম্যাঙ হাসপাতালে বর্তমানে ১৫ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. লিয়াকত আলী খান। সিএসসিআর হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত ৭ জন রোগী ভর্তি রয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির আরএমও ডা. এমজাদ হোসেন। আইসিইউতেও একজন রোগী চিকিৎসাধীন বলে জানান তিনি।
বেসরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি রোগী বেড়েছে সরকারি হাসপাতালগুলোতেও। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে বৃহস্পতিবার ২২ জন করোনা আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে আরো ৪৫ জন রোগী ভর্তি ছিলেন বলে জানান হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর। এছাড়া করোনা আইসিইউতে আরো ২ জন রোগী চিকিৎসাধীন বলেও জানান হাসপাতাল পরিচালক। একই দিন ওয়ার্ডে ৩৬ জন ও আইসিইউতে ৭ জন করোনা রোগী ভর্তি ছিলেন বলে জানান চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা টিমের ফোকাল পারসন ডা. আব্দুর রব মাসুম। যদিও ফৌজদারহাট
বিআইটিআইডি হাসপাতালে মাত্র ৩ জন রোগী ভর্তি বলে জানান বিআইটিআইডি হাসপাতালের করোনা টিমের ফোকাল পারসন ডা. মামুনুর রশীদ।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আক্রান্তদের অনেকেই বাসায় বসে চিকিৎসা নেন। প্রথম দিকে হাসপাতালে আসছেন না। অনেকেই একদম অন্তিম মুহূর্তে হাসপাতালে আসছেন। ততক্ষণে কিন্তু ওই রোগীর ফুসফুস অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত। বাসায় থেকে ফুসফুস বেশির ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর যারা হাসপাতালে আসছেন, বিশেষ করে তাদের রিকভার করার চান্স কম। এ ধরণের রোগীদের বাঁচানোটা খুবই কঠিন।
উদাসীনতা ও অবহেলায় বাড়ছে সংক্রমণ : কয়েকমাস কমলেও করোনা সংক্রমণের হার এখন ফের ঊর্ধ্বমুখি। চট্টগ্রামে দৈনিক সংক্রমণের হার ৭/৮ শতাংশ দেখালেও বিদেশগামীদের পরীক্ষাকৃত নমুনার সংখ্যা বাদ দিয়ে হিসাব করলে দৈনিক সংক্রমণের এ হার প্রকৃতপক্ষে ২০ শতাংশের বেশি।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা বলছেন, টিকাদান শুরুর পর করোনা নিয়ে মানুষের উদাসীনতা আরো বেড়েছে। যেন এক ধরণের অবহেলা কাজ করছে মানুষের মাঝে। যার কারণে স্বাস্থ্য বিধি মানা তো দূরের কথা, অধিকাংশের মুখে মাস্কটিও দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া বিয়ে-গায়ে হলুদ, উৎসব, সংবর্ধনা-সম্মাননাসহ সব ধরণের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান হচ্ছে হরহামেশাই। এসব অনুষ্ঠানে শারীরিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্য বিধি মানছে না কেউ। এতে করে সংক্রমণ আবারো বাড়ছে হু হু করে। মানুষের উদাসীনতা ও অবহেলার কারণেই করোনার সংক্রমণ আবারো বাড়ছে বলে মনে করেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। আর মুখে মাস্ক পরার পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিধি মেনে না চললে সংক্রমণের হার ফের আশংকাজনক পর্যায়ে পৌঁছতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
করোনার টিকা নিলেও মুখে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্য বিধি অবশ্যই মেনে চলার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের উদ্যোক্তা ও প্রধান নির্বাহী ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। করোনাকালীন বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে অল্প সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে তুলে সেখানে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেন বিদ্যুৎ বড়ুয়া। তিনি বলেন, করোনা নিয়ে মানুষের মাঝে এক ধরণের উদাসীনতা ও অবহেলা দৃশ্যমান। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি আবারো আগের মতো হয়ে যেতে পারে। তাই সকলকে সতর্ক হয়ে করোনা নিয়ে অবহেলা না করার পরামর্শ দেন তিনি।