অবশেষে শুরু হচ্ছে এক লাখ প্রি-পেইড মিটার স্থাপন কাজ

নগরীর গ্রাহকদের দ্রুত লাইন ঠিক করার পরামর্শ ।। কমবে গ্যাস সেক্টরে নানা অনিয়ম ও অপচয়

হাসান আকবর | শুক্রবার , ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে শুরু হচ্ছে গ্যাসের এক লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ। আগামী দিনকয়েকের মধ্যে কর্ণফুলী গ্যাসের গ্রাহকদের লাইনে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হবে। এই এক লাখ মিটারের পুরোটাই নগরীর গ্রাহকদের দেয়া হবে। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশিন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) ২৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ইতোপূর্বে স্থাপিত ৬০ হাজার প্রিপেইড মিটারের সুফল পাওয়ার পর নগরীর হাজার হাজার গ্রাহক প্রিপেইড মিটারের জন্য অপেক্ষা করছেন। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর অবশেষে অপেক্ষার অবসান হচ্ছে।

কর্ণফুলী গ্যাসের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, গ্যাস সেক্টরে নানা অনিয়ম ও অপচয়ের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আবাসিক খাতে গ্যাস চুরি, অবৈধ এবং চোরা সংযোগ বন্ধ এবং সর্বোপুরি অপচয় ঠেকাতে সরকার ঢাকা ও চট্টগ্রামের গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তত আট বছর আগে। নানা প্রক্রিয়া শেষে ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৬০ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হয়। বছর দেড়েক সময়ের মধ্যে নগরীর জামালখান, হালিশহর, চান্দগাঁও, কোতোয়ালী, খুলশী, নাসিরাবাদ, লালখান বাজার, আন্দরকিল্লা, চকবাজার, কাজীর দেউড়ি, পাঁচলাইশসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকার ৬০ হাজার আবাসিক গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হয়।

জাপান সরকারের সাথে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সহায়তায় এসব মিটার স্থাপন করা হয়েছে। কর্ণফুলী গ্যাসের প্রায় ৬ লাখ আবাসিক গ্রাহকের মাঝে প্রথম দফায় ৬০ হাজার গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার দেয়া হলে বেশ সাড়া পড়ে। জাপান থেকে আনা উন্নতমানের প্রিপেইড মিটার স্থাপনের পর নগরীর আবাসিক খাতে গ্যাসের খরচ বহুলাংশে কমে যায়। কমে যায় গ্যাসের অপচয়। চুলা হিসেবে নির্দিষ্ট হারে যে বিল পরিশোধ করা হচ্ছিল তার চেয়ে অনেক কমে পুরো মাসের রান্নার কাজ সেরে যাওয়ায় প্রিপেইড সিস্টেম জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এতে চট্টগ্রামে গ্যাসখাতে কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে বলে উল্লেখ করে সূত্র জানায়, চুলা না জ্বালালে কোন বিল আসে না। আবার নিজেরাও ইচ্ছে করলে বিল সাশ্রয় করতে পারছে। পোস্টপেইড চুলা থেকে প্রিপেইড মিটারে খরচ প্রায় অর্ধেক হয়ে যাওয়ায় গ্রাহকেরা এই সিস্টেমের আওতায় আসার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠে।

গ্রাহকদের ব্যাপক আগ্রহের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামে নতুন করে আরো ১ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের জন্য পৃথক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২৪১ কোটিরও বেশি টাকার একটি প্রকল্পটির নানা আনুষ্ঠানিকতা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। জাপানের টয়োকিকি কোম্পানি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান নগরীর বিভিন্ন এলাকায় উক্ত ১ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপন করবে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের বাসাবাড়ির লাইনগুলো প্রিপেইড মিটার স্থাপনের উপযোগী হলেই রাইজারে মিটার স্থাপন করে দেয়া হবে। লাইন ঠিক না থাকলে রাইজার থেকে রান্নাঘরের চুলা পর্যন্ত নিজ খরচে লাইন ঠিক করে নেয়ার পরই প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রিপেইড মিটারের সুফল পেতে হলে রাইজার থেকে চুলা পর্যন্ত লাইন ঠিকঠাক থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে লাইনে কোন লিক থাকলে চুলা না জ্বালালেও মিটারের টাকা শেষ হয়ে যাবে। তাই লাইনে কোন লিক না থাকা খুবই জরুরি। তাছাড়া রাইজার থেকে রান্নাঘরে একটি লাইন নিতে হবে। অনেক বাসায় রাইজার থেকে একটি লাইন নিয়ে তা থেকে পুরো বিল্ডিং এর সবগুলো চুলাতে সাব লাইন দেয়া হতো। প্রিপেইড মিটার স্থাপনের আগে এই ধরণের লাইনগুলো ঠিকঠাক করে নিতে হবে। নগরীতে অচিরেই প্রিপেইড মিটার স্থাপন করার কাজ শুরু হবে। তাই যে সব গ্রাহক প্রিপেইড মিটারের জন্য আবেদন করেছেন তাদেরকে দ্রুত নিজেদের লাইনগুলো ঠিকঠাক করে মিটার স্থাপনের উপযোগী করে রাখার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। গ্যাস লাইন ঠিকঠাক না থাকলে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হবে না বলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিচার বিভাগে আস্থা হারালে আসবে সর্বনাশা দিন
পরবর্তী নিবন্ধচার মাস ১২ দিন পর কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার শুরু