অবশেষে রেলবহরে যুক্ত হচ্ছে সেই ১০ ইঞ্জিন

আমদানির ৮ মাস পর দ্বিতীয় দফা ট্রায়াল

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৭ এপ্রিল, ২০২১ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে দীর্ঘ ৮ মাস পর কোরিয়া থেকে আমদানিকৃত ১০টি মিটার গেজ ইঞ্জিন রেলবহরে যুক্ত করা হচ্ছে। আমদানির প্রথম সপ্তাহে পরীক্ষামূলক চালানোর পর (ট্রায়াল রান) এখন দ্বিতীয় দফায় ফের ট্রায়াল রান শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গত তিনদিনে তিনটি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) ট্রায়াল শেষে মালবাহী ট্রেনে যুক্ত করা হয়েছে। রেলওয়ের মেকানিক্যাল বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী জানান, ইঞ্জিনগুলো ৮ মাস বসিয়ে না রেখে আগে অপারেশনে নিলে রেলের যাত্রী সেবার মান যেমন বাড়তো-তেমনি অনেক টাকাও সাশ্রয় হতো। উল্লেখ্য গত ২২ এপ্রিল দৈনিক আজাদীতে ‘অলস পড়ে আছে ৩২২ কোটি টাকার নতুন ১০ রেল ইঞ্জিন’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর গতকাল সেই ১০টি ইঞ্জিন রেলবহরে যুক্ত হওয়ার সংবাদ জানা গেল। কোরিয়া থেকে আমদানি করা এসব ইঞ্জিন ৮ মাস বসিয়ে রাখায় ইঞ্জিন সংকটে থাকা রেলওয়ের উপর চাপও বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ইঞ্জিনগুলো রেলওয়ের বহরে যুক্ত করতে উদ্যোগ নেয়। আগামী মাসের মধ্যেই এসব ইঞ্জিন দিয়ে যাত্রীবাহীসহ সব ধরনের ট্রেন পরিচালনায় যুক্ত করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এই ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন আজাদীকে জানান, ইঞ্জিনগুলোর এখন ট্রায়াল চলছে। শনিবার থেকে ট্রায়াল শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা ৩টি লোকোমোটিভের (ইঞ্জিন) ট্রায়াল শেষ করেছি। ঢাকা থেকে আমাদের যেভাবে সিদ্ধান্ত দিয়েছে আমরা সেইভাবে এগুলো ব্যবহার করছি। এখন যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় এই ৩টি লোকোমোটিভ(ইঞ্জিন) মালবাহী গাড়িতে ব্যবহার করা হয়েছে।
গত রোববার লোকোমোটিভের ৩০০১ নম্বর ইঞ্জিনটি পরীক্ষামূলকভাবে ৬০১ নং ট্রেন অর্থাৎ চট্টগ্রাম বন্দরের সিজিপিওয়াই ইয়ার্ড থেকে কনটেনার নিয়ে কমলাপুর আইসিডিতে গেছে। ধারাবাহিক আরও দুটি ইঞ্জিন ট্রায়াল শেষে পণ্য নিয়ে ঢাকায় গেছে। এভাবে অপর ইঞ্জিনগুলোরও কনটেইনারবাহী ট্রেনে ট্রায়াল রান সম্পন্ন করা হবে। এই পরীক্ষায় চালক ও গার্ড প্রধানত ৭টি ত্রুটি/বিচ্যুতি কিংবা তারও অধিক সমস্যা নির্ণয় করবেন। তবে কোন ত্রুটি পাওয়া না গেলে রিপোর্ট অনুযায়ী গভর্মেন্ট ইন্সপেকশন অব বাংলাদেশ রেলওয়ের (জিআইবিআর) মাধ্যমে কমিশনিং শেষে রেলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগের কাছে এসব ইঞ্জিন সরবরাহ করা হবে।
জানা গেছে, কোরিয়া থেকে ইঞ্জিন আমদানির সঙ্গে যুক্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী নূর আহম্মদকে গত ১ এপ্রিল বদলি করে নিয়োগ দেয়া হয় মো. হাসান মনসুরকে। নতুন পিডি নিয়োগের পর প্রায় ৮ মাস বসিয়ে রাখা ইঞ্জিনগুলো রেলের বহরে যুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে রেলওয়ে।
২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রজেক্ট ইমপ্লিমেনটেশন কমিটির (পিআইসি) তৃতীয় সভায় কোরিয়া থেকে আমদানি হওয়া ইঞ্জিনগুলোর বিষয়ে বিষদ আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে ইঞ্জিনগুলো বিড ডকুমেন্ট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। জানা গেছে, আমদানি হওয়া ইঞ্জিনগুলো মিটারগেজ থেকে ব্রডগেজে রূপান্তরযোগ্য। যার কারণে ইঞ্জিন, অল্টারনেটর ও ট্রাকশন মোটর মিটারগেজ অপেক্ষা শক্তিশালী।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৭ মে ১০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ সরবরাহে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানির সাথে চুক্তি করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ২৯৭ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার ৫৬০ টাকা ব্যয়ে ক্রয় করা ইঞ্জিনগুলো চুক্তির ২৪ মাসের মধ্যে সরবরাহ করার কথা ছিল। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে দেশে পৌঁছে ১০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিশু আক্রান্ত হলে কী করণীয়
পরবর্তী নিবন্ধঅর্ধকোটি টাকার জর্দা জব্দ