অপরাধ না করেও দেড় বছর কারাবাসের পর অবশেষে সেই হাসিনা বেগম (৪০) মুক্তি পেয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে আদালতের নির্দেশে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান। এর আগে সকালে কারাগার কর্তৃপক্ষ হাসিনা বেগম নির্দোষ মর্মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে ৪র্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁইয়ার আদালত তা আমলে নেন এবং নিরপরাধ হাসিনা বেগমকে মুক্তির নির্দেশ দেন। একই সাথে আদালত প্রকৃত আসামি হাসিনা আক্তারকে (৩০) গ্রেপ্তার করতেও সংশ্লিষ্টদের আদেশ দেন। এসব বিষয় আজাদীকে নিশ্চিত করেন আদালতের পেশকার ফুয়াদ, হাসিনার আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খান। এদিকে হাসিনা বেগম কারাগার থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছেন এমন সংবাদে কারাগার ফটকের সামনে ছুটে আসে তার ১৪ বছরের ছেলে মো. শামীম নেওয়াজ। দীর্ঘক্ষণ মায়ের জন্য অপেক্ষা করে সে। একপর্যায়ে হাসিনা বেগম বেরিয়ে আসলে ছেলেকে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ভুক্তভোগী হাসিনা বেগমের আইনজীবী বেগমের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ আজাদীকে বলেন, আমার দাখিলকৃত কাগজপত্র, কারাগার কর্তৃপক্ষ ও টেকনাফ থানা পুলিশের পাঠানো কাগজপত্র পর্যালোচনা করেই আমার মক্কেল হাসিনা বেগমকে মুক্তি দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সাথে আদালত প্রকৃত আসামি হাসিনা আক্তারকে গ্রেপ্তার করতে তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি এবং তা টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর পাঠাতে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরেও দিব এবং তার ক্ষতিপূরণ দাবিসহ ঘটনার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টদের বিচার চেয়ে আবেদন করব।
এদিকে হাসিনা বেগমের বিনা দোষে হাজতবাসের বিষয়টি নজরে দিলে মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান আজাদীকে বলেন, বিনা দোষে হাজতবাস কোনোভাবেই কাম্য নয়। সংশ্লিষ্টদের গাফেলতির জন্যই এমনটি হয়েছে। এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সাথে হাসিনা বেগমকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সামাজিক, পারিবারিক ও আর্থিকভাবে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মহানগর পিপি ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রথমত এটি ইচ্ছাকৃত নাকি ভুল সেটি দেখতে হবে। এরপর গাফেলতি খুঁজে বের করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, এখানে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করার সুযোগ রয়েছে ভুক্তভোগীর। আশা করছি রাষ্ট্র বিষয়টি বিবেচনায় নিবে।
২০১৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী এলাকা থেকে হাসিনা আক্তারকে মাদকসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় প্রথমে মামলা দায়ের ও পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ৬ মাসের মতো কারাগারে থেকে তিনি জামিনে মুক্তি পান। একপর্যায়ে ২০১৯ সালের ১ জুলাই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯ (১) এর ৯ (খ) ধারার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ৬ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ১ মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত। একই সাথে আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। সেই পরোয়ানা মূলে হাসিনা আক্তারকে গ্রেপ্তার করার কথা থাকলেও ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর টেকনাফ থানা পুলিশ নামের প্রথম অংশ মিল থাকায় গ্রেপ্তার করে হাসিনা বেগমকে। সেই থেকে অপরাধ না করেও বিনা দোষে চট্টগ্রাম কারাগারে দিন কাটছিল হাসিনা বেগমের।