ভর দুপুরে শহরের ব্যস্ততম রাস্তার উপর থেকে অপহৃত বীমা কর্মকর্তা মোহাম্মদ খোরশেদুল আলমকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই সাথে অপহরণকারী চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। কোতোয়ালী থানা পুলিশ রোববার গভীর রাতে নগরীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ একটি চক্রের উক্ত চার সদস্যকে গ্রেপ্তার এবং অপহৃতকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে।
অপহরণকারী চক্রটি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে শিকার ধরে। দেখতে আলাভোলা এবং সাদাসিধে টাইপের কোন অবস্থাপন্ন মানুষ দেখলে তারা অপহরণ করে নিজেদের আস্তানায় নিয়ে যায়। সেখানে তরুণীর সাথে অশ্লীল ছবি উঠিয়ে তা ছড়িয়ে দেয়ার নাম করে টাকা আদায় করে। দীর্ঘদিন ধরে তারা এই অপকর্ম করে আসছে। মানসম্মানের ভয়ে অনেকেই তাদের শিকার হলেও থানা পুলিশ করেনি বলেও পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে। পুরো চক্রটিকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
থানা সূত্রে জানা যায়, সাধারণ বীমা কর্মকর্তা মোহাম্মদ খোরশেদুল আলমকে গত রোববার দুপুর একটা নাগাদ নগরীর হাজারী গলির মুখে অবস্থান করছিলেন। এই সময় একদল দুর্বৃত্ত রাস্তার উপর থেকে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে অপহৃতের মেয়ের জামাই মোরশেদুল আলম কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা রেকর্ডের পর কোতোয়ালী থানা পুলিশ বীমা কর্মকর্তা মোহাম্মদ খোরশেদুল আলমকে উদ্ধারের অভিযানে নামে। পুলিশ ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ক্যামরার ফুটেজ সংগ্রহ, মোবাইল ট্র্যাকিং, বিকাশ নম্বরসহ তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে নিশ্চিত হয় যে, দুর্বৃত্তরা হালিশহর থানাধীন রঙ্গীপাড়া ছোট মসজিদ এলাকায় অবস্থান করছে।
পরে রাত একটার দিকে অভিযান পরিচালনা করে অপহরণে জড়িত আসামি জাহেদ আলম (১৮) ও বেলাল হোসেন ইমন (১৮)-গ্রেপ্তার করে। তাদেরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এই সময় তাদের দেয়া তথ্য মতে এসআই মুহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন সঙ্গীয় অফিসার এবং ফোর্সসহ রাত সোয়া দুইটার দিকে হালিশহর থানাধীন মুহুরী পাড়া, উত্তর আবাসিক এলাকার মান্নান ম্যানশনের ৫ ম তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে অপহৃত খোরশেদুল আলম (৫৯)-কে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। এ সময় উক্ত স্থান হতে অপহরণের ঘটনায় জড়িত অপর আসামি কাউছার (১৯) ও ইমন (১৮)-কে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামি মনোয়ার ও ইয়াছমিন আক্তার মনি পালিয়ে যায়।
অপহরণকারী চক্রের সদস্য জাহেদ আলম সন্দ্বীপ মুছাপুরের আবুল কালামের পুত্র, হালিশহর রঙ্গিপাড়ার আবুল কালামের ভাড়া ঘরে থাকে। বেলাল হোসেন ইমন কুমিল্লা মুরাদনগর মৃত আদিল হোসেনের পুত্র, রঙ্গিপাড়া ছিদ্দিক মিয়ার কলোনিতে থাকে। কাউছার কুমিল্লা লাকসামের মৃত ফজল হকের পুত্র, রঙ্গিপাড়া ব্যাংক কলোনিতে থাকে। ইমন নোয়াখালী সুবর্ণচরের হেলালের পুত্র, রঙ্গিপাড়া ব্যাংক কলোনির একটি ঘরে ভাড়ায় থাকে।
প্রাথমিক জ্ঞিাসাবাদে আসামিরা জানায়, দীর্ঘদিন যাবৎ পরস্পর যোগসাজশে তারা ভাড়ায় চালিত সিএনজি ট্যাঙি নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। রাস্তায় সাদাসিদে টাইপের পথচারীদের টার্গেট করে অপহরণ করে তাদের আস্তানায় নিয়ে যায়। আস্তানায় নিয়ে যাওয়ার পর অপহৃত ব্যক্তির সাথে মেয়ে দিয়ে অশ্লীল ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে। কোতোয়ালী থানার ওসি তদন্ত আতিক জানান, পলাতক দুইজনকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ধৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।