অপহরণ আতঙ্ক থেকে মুক্ত হতে পারছে না চট্টগ্রামবাসী। সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের অনেকেই দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে আছে। আবার কেউ পেশা পাল্টে রীতিমতো ব্যবসায়ী বনে গিয়ে বিদেশে অবস্থান করছে। তাদের অপহরণের উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিপণ আদায়, নয়তো অন্যের হয়ে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে টার্গেট করা ব্যক্তিকে সরিয়ে দেওয়া।
এখন অপহরণের কারণ নানাবিধ। লাখ টাকার জন্যও অপহরণ করা হচ্ছে। আবার হাজার টাকার জন্যও অপহরণ করা হচ্ছে। অপহরণ করা হচ্ছে পূর্ব শত্রুতার জেরে। কখনো আবার চাঁদার টাকার জন্য। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে অপহরণ করার পাশাপাশি শিশু অপহরণ করে ধর্ষণ করা হচ্ছে। বর্তমান সময়ের অপহরণকারীদের নিয়ে তাই শঙ্কিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাগণও। সর্বশেষ গত দুই মাসে বৃহত্তর চট্টগ্রামে ১১টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। গ্রেপ্তার হয়েছে ৯ জন।
নগরীর বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের অভিমত, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতো অপহরণ প্রতিরোধ স্কোয়াড (অ্যান্টি কিডন্যাপিং) নামে সিএমপিতে কোনো স্কোয়াড আপাতত গঠন করা না হলেও অপহরণকারীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাদের। সিএমপির কোতোয়ালী থানার ওসি জাহিদুল কবীর, বন্দর থানার ওসি জাহেদুল কবীর, পতেঙ্গা থানার ওসি কবির হোসেন, সদরঘাট থানার ওসি খাইরুল ইসলাম ও আকবর শাহ থানার ওসি ওয়ালী উদ্দিনসহ বিভিন্ন থানার ওসিরা এ সম্পর্কে প্রায় অভিন্ন অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তাদের মতে, সামপ্রতিক সময়ে নগরীতে অপহরণের যে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো পেশাদার অপরাধীদের কাজ নয়। ফলে তারা সহজেই ধরা পড়ছে পুলিশের হাতে। কমিশনার স্যারের নির্দেশে আমরা অপহরণ বা নিখোঁজ সংক্রান্ত অভিযোগগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। তাই আপাতত আলাদা স্কোয়াডের প্রয়োজন বোধ করছি না।
শিল্পপতি ও বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিনকে অপহরণ ও হত্যা এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম তথা দেশ জুড়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা। তোলপাড় সৃষ্টিকারী এ হত্যা মামলার বিচার ১৯ বছরেও শেষ হয়নি। ক্ষোভ-হতাশা আর আতঙ্কে বাড়িঘরে তালা দিয়ে এলাকা ছেড়ে অনেকটা আত্মগোপনে আছে তার পরিবার। বিচার কাজে তারা আদালতে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। বিচারক তাদের খোঁজে আদালতে হাজির করতে পুলিশকে নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হয়নি। বীরদর্পে ঘুরছে ঘাতক চক্র। ২০০৩ সালের ২৪ জুলাই রাতে নগরীর চকবাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চান্দগাঁওয়ের বাসায় ফেরার পথে অপহৃত হন জামাল উদ্দিন। ২০০৫ সালের ২৪ আগস্ট তার কঙ্কাল উদ্ধার করে র্যাব। সিঙ্গাপুরে ডিএনএ পরীক্ষার পর কঙ্কালটি জামাল উদ্দিনের বলে নিশ্চিত হয় পরিবার। দেশে এ রকম অপহরণের ঘটনা বেড়েই চলেছে।
এ সময়কালে সংঘটিত অপহরণের অর্ধেকের বেশি ঘটেছে দুই বড় বিভাগ ঢাকা ও চট্টগ্রামে। বাংলাদেশ পিস অবজারভেটরির (বিপিও) বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বিপিও ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত অপহরণের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করেছে। সেই বিশ্লেষণ ‘ক্রাইম ইন বাংলাদেশ : অ্যাবডাকশন/কিডন্যাপিং : অ্যান ওভারভিউ ফ্রম বিপিও’ শিরোনামের একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এই সময়কালে দেশে ঘটে যাওয়া অপহরণের ঘটনার মধ্যে ঢাকায় ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ, রাজশাহীতে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ, খুলনায় ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ, রংপুরে ৭ দশমিক ১ শতাংশ, বরিশালে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ, সিলেটে ৫ দশমিক ১ শতাংশ ও ময়মনসিংহে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।