রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের একটি মুরগি খামার থেকে গত ২৮ আগস্ট রাতে নিখোঁজ হয়েছিল শিবলী সাদিক হৃদয় (২০) নামের এক যুবক। সে কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়া গ্রামের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো. শফিক ড্রাইভারের ছেলে। পরদিন ২৯ আগস্ট রাউজান থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন খামারের মালিক কদলপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার সাইফুল হক চৌধুরী।
সর্বশেষ জানা গেল, হৃদয়কে অপহরণ করেছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের সংঘবদ্ধ একটি চক্র। এই চক্রটি অপহরণের পরদিন হৃদয়ের বাবার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে মুক্তিপণ হিসাবে ১৫ লাখ টাকা দাবি করে। তিনি ছেলেকে উদ্ধারে অপহরণকারীদের সাথে যোগাযোগ করে মুক্তির শর্তে ফোনে দফারফা করেন নগদ দুই লাখ টাকার বিনিময়ে। উদ্বিগ্ন বাবা ছেলেকে পাওয়ার আশায় অপহরণকারীদের কথা মত টাকা পৌঁছে দিতে যান বান্দরবান জেলার ডাইলা পাড়ায়। ৩১ আগস্ট অপহরণকারীরা তার কাছ থেকে নগদ দুই লাখ টাকা গ্রহণও করে। এর পর হৃদয়কে টেক্সি স্টেশন থেকে নিয়ে যেতে বলে। ছেলের খোঁজে বাবা টেক্সি স্টেশনে গিয়ে তাকে পাননি। আবারও টাকা গ্রহণকারীদের সাথে যোগাযোগ করেন। তখন তারা তাকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঘুরাতে থাকে। সর্বশেষ নিরাশ হয়ে তিনি ফিরে আসেন।
হৃদয়ের মা নাহিদা আকতার বলেন, অপহরণের পর হৃদয়ের বাবার মোবাইলে একটি ফোন আসে। ফোনটি আমি ধরলে হৃদয় ফোনে বলে মা আমাকে রাত ১২টার দিকে কিছু মানুষ আটক করে নিয়ে এসেছে। আপনারা ফোন দিবেন না, ফোন দিলে আমাকে মেরে ফেলবে বলেছে। এরপর অপহরণকারীরা আবার আমার মোবাইলে কল দিয়ে বলে ছেলেকে পেতে হলে ১৫ লাখ টাকা দিতে হবে। না হলে তোর ছেলেকে জীবিত আর পাবি না। পরে তাদের বুঝিয়ে আমরা ২ লাখ টাকায় রাজি করাই। তাদের কথা মতো টাকা দিলেও তারা আমার সন্তানকে ফেরত দেয়নি।
অবশেষে এই ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাউজান থানায় অপহরণ মামলা করেন হৃদয়ের মা নাহিদা আকতার। এই মামলায় তিনি সুনির্দিষ্ট ছয়জনসহ আরো কয়েকজন অজ্ঞানতনামা সন্ত্রাসীকে আসামি করেছেন। ইতিমধ্যে পুলিশ এই মামলায় জড়িত দুইজনকে আটক করেছে বলে জানিয়েছে। আটক দুজন হচ্ছে রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সাপমারা গ্রামের উহ্লাপ্রুমং মারমার পুত্র আছুমং মারমা (২৬) ও একই জেলার কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরং ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের আমতলী পাড়া গ্রামের উষাচিং মারমার পুত্র উক্যথোয়াই মারমা (১৯)।
খবর নিয়ে জানা যায়, অপহৃত হৃদয় কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। পড়ালেখার পাশাপাশি সে বাড়ির পাশে যৌথ মালিকাধীন একটি মুরগির খামারে চাকরি করতো।
হৃদয়ের পরিবার সূত্রে জানা যায়, হৃদয়ের সাথে ওই খামারে কয়েকজন চাকমা যুবক চাকরি করতো। হৃদয়ের দায়িত্ব ছিল চাকমা যুবকদের কাজ দেখাশোনা করা। গত প্রায় ২ মাস আগে খামারে কাজ নিয়ে চাকমা যুবকদের সাথে হৃদয়ের বিরোধ সৃষ্টি হয়। পরে তা মিটমাটও হয়। সেই বিরোধের জেরে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি হৃদয়ের পরিবারের।
রাউজান থানার ওসি আবদুল্লাহ আল হারুন এ প্রসঙ্গে বলেন, ঘটনার পর থেকে অপহৃত যুবকের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করেছি। এর আগে মামলা করার জন্য তাদের অনুরোধ করা হলেও তারা ছেলের ক্ষতি হতে পারে এই আশংকা মামলা করেননি। তিনি জানান, আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মূল আসামিসহ জড়িতদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।