অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সোচ্চার স্বরলিপি

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৩ জানুয়ারি, ২০২২ at ৮:০৩ পূর্বাহ্ণ

 

 

স্বরলিপি সাংস্কৃতিক ফোরাম চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের একটি সুপরিচিত নাম। দীর্ঘ ২৯ বছরেরও বেশি সময় ধরে জাতীয় দিবসসহ সকল উল্লেখযোগ্য আয়োজনে শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চা ও বিকাশের প্রয়োজনে স্বরলিপি দাঁড়িয়েছে কন্ঠে সুর ও বাণী নিয়ে। স্বরলিপি বিশ্বাস করে অসুন্দর, অনাচার, অপসংস্কৃতিকে রুখতে এবং সুন্দরের আয়োজন তথা সুরের মোহময় পরিবেশনার একান্ত প্রয়োজন।

সমাজের সর্বস্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠন ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘সুর ও বাণীতে স্বরলিপি দেয় ডাক, অপসংস্কৃতি যাক নিপাত যাক’এই শ্লোগানে ব্রতী হয়ে শিল্পী ও সংস্কৃতিসেবী মানস শেখরের আহবানে কয়েকজন প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পী ও সংস্কৃতি কর্মীর সম্মিলিত প্রয়াসে ১৯৯২ সালের ১ নভেম্বর চট্টগ্রামস্থ আগ্রাবাদ ছোটপোলে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বরলিপি সাংস্কৃতিক ফোরাম। ছড়াকার ও শিল্পী কেশব জিপসীকে সভাপতি ও মানস শেখরকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠিত হয়।

ঐতিহ্য সচেতন জাতি হয় দেশ প্রেমিক। স্বরলিপির পরিবেশনায় তাই সব সময় প্রাধান্য পায় দেশজ কৃষ্টিজাত তথা এই দেশের শ্রেষ্ঠ কবি, সাহিত্যিক, সুরকার, গীতিকারদের বিখ্যাত সব গান। স্বরলিপির প্রতিষ্ঠাতা শিল্পী মানস শেখরের পরিকল্পনা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং শিল্পী কেশব জিপসীর গ্রন্থনায় স্বরলিপি এ পর্যন্ত ১৪টি গীতি আলেখ্য পরিবেশন করে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। বাংলা লোকগান, পঞ্চ ভাস্করের গান, দেহতত্ত্বের গান, জাগরণের গান, আধুনিক গান, দেশাত্মবোধক গান ইত্যাদি বিষয়ই গীতি আলেখ্যর উপজীব্য বিষয়। প্রতিটি গীতি আলেখ্যর সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন বেতার ও টেলিভিশন শিল্পী বনানী শেখর রুদ্র ও কেশব জিপসী, নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শরীফুল ইসলাম ও হিল্লোল দাশ সুমন। এছাড়া বিভিন্ন জাতীয় দিবসে চট্টগ্রামের সকল মুক্ত মঞ্চে নিয়মিত অংশগ্রহণ এবং স্বউদ্যোগে স্বরলিপি ভ্রাম্যমাণ সাংস্কৃতিক দল নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সব মোড়ে, শুনিয়েছে জাগরণের গান। স্বরলিপি মনে করে শুধু সঙ্গীতানুষ্ঠানের মাধ্যমে সঙ্গীতকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না। আগামী প্রজন্মকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত করতে হবে। তাই স্বরলিপি প্রতিষ্ঠাকাল থেকে অদ্যাবধি প্রতি দুই বছর অন্তর আয়োজন করে আসছে ‘স্বর্ণপদক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা’। চারটি বিভাগে মোট ১৩ বার আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় এ পর্যন্ত পুরষ্কৃত হয়েছে প্রায় ১৫০০ এরও বেশি প্রতিযোগী।

স্বরলিপি সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে আগামী প্রজন্মকে যেমন উৎসাহিত করে, তেমনি সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অবদান রাখা গুণী ব্যক্তিত্বদের সংবর্ধনাও দিয়ে থাকে। এ পর্যন্ত সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অবদানের জন্য স্বরলিপি সম্মাননা দিয়েছেন শিক্ষা ক্ষেত্রে ড. জামাল নজরুল ইসলাম, ভাষা ও সাহিত্যে শহীদ জায়া মুক্তিযোদ্ধা বেগম মুশতারী শফী, সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় কবি অরুণ দাশগুপ্ত ও কবি রাশেদ রউফ, সঙ্গীতে ওস্তাদ মিহির লালা, ওস্তাদ মিহির নন্দী, লোক সঙ্গীত শিল্পী আবদুর রহিম, কবি ও গীতিকার হিসেবে ক্যাপ্টেন (অব.) ডা. গোলাম মোস্তফা এবং সমাজসেবায় রোটারিয়ান এ আর খানকে।

চট্টগ্রামের শ্রোতাদের সঙ্গীত স্পৃহাকে তৃপ্ত করতে স্বরলিপি আয়োজন করে আসছে গুণী শিল্পীদের একক সঙ্গীতানুষ্ঠান। এ পর্যন্ত স্বরলিপির আমন্ত্রণে অতিথি হিসেবে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন শিল্পী সুবীর নন্দী, লোক সঙ্গীত শিল্পী কিরণ চন্দ্র রায় ও চন্দনা মজুমদার, লালন শিল্পী ফরিদা ইয়াসমীন ও রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী অদিতি মহসীন।

দুই বছর অন্তর স্বরলিপির সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘স্বরলিপি’ নামে একটি প্রকাশনা প্রকাশিত হয়, যাতে প্রতিষ্ঠিত লেখকদের লেখা ছাড়াও সংগঠনের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি সুবিন্যস্তভাবে দেওয়া থাকে। এ পর্যন্ত স্বরলিপির প্রকাশিত স্মরণিকা।

স্বরলিপি সাংস্কৃতিক ফোরাম চট্টগ্রামের ২৫ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী পরিষদের সভাপতি হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন স্বরলিপির প্রতিষ্ঠাতা শিল্পী মানস শেখর এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কলেজ শিক্ষক ও শিল্পী মো. ফারুক।

স্বরলিপির মুখ্য কর্মকাণ্ড সঙ্গীতকে অবলম্বন করে হলেও সামাজিক নানা প্রয়োজনে স্বরলিপি এগিয়ে এসেছে বার বার। যেমন সম্প্রতি বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে কর্মহীন ৫০টি অসহায় পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ, ডেঙ্গু আক্রান্ত দুস্থদের মাঝে বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ, প্রতি বছর তীব্র শীতে দরিদ্রদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ ইত্যাদি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবি বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী শুরু ও মুর্তজা বশীর স্মৃতি বৃত্তি প্রদান
পরবর্তী নিবন্ধউন্নয়ন অগ্রগতির অদম্য শক্তিকে থামিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা রুখতে হবে : মেয়র