বাংলাদেশে ‘দুই ব্যক্তির অপরিচিত এক প্রতিষ্ঠানের’ ২৯ মিলিয়ন ডলার সহায়তা পাওয়ার যে তথ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দিয়েছেন, তা ‘সত্য নয়’ বলে দাবি করেছে ঢাকা। গতকাল সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ২৯ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প বাংলাদেশের দুজন ব্যক্তির মালিকানাধীন কোনো সংস্থাকে দেওয়ার অভিযোগটি সত্য নয়।
ট্রাম্পের অভিযোগের পর ‘জনমনে বিভ্রান্তি’ সৃষ্টি হওয়ার প্রেক্ষাপটে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চালানো অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে আসার কথা বলা হয় বিবৃতিতে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নানা তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে সেখানে। খবর বিডিনিউজের।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে দেশটির গভর্নরদের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করতে দুই কোটি ৯০ লাখ ডলার দেওয়া হয়। এটা এমন এক প্রতিষ্ঠান পেয়েছে, যার নাম আগে কেউ শোনেনি। ট্রাম্পের ওই বক্তব্য নিয়ে নানা মহলে নানা আলোচনা শুরু হয়। কেউ কেউ সোশাল মিডিয়ায় দাবি করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আইনুল ইসলামের প্রতিষ্ঠান মাইক্রোগভর্নেন্স রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (এমজিআর) এই অনুদান পেয়েছে। বদিউল আলম মজুমদারের সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এই অর্থ পেয়েছে বলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় কেউ কেউ অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য দেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। গত শনিবার তিনি সংবাদকর্মীদের বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সুজন কোনো নিবন্ধিত সংগঠন নয়। সুজন কোনো বিদেশি সাহায্য নিতে পারে না; সংগঠনটি পরিচালিত হয় বিভিন্ন ব্যক্তির সহায়তায়।
২৯ মিলিয়ন ডলারের অর্থায়নের বিষয়ে আরও তথ্যের অপেক্ষায় থাকার কথা গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বলেছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। আর গতকালের বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশে ইউএসএআইডির অর্থায়নে ২৯ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প ‘স্ট্রেংদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ (এসপিএল) ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। সমপ্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এ প্রকল্প নিয়ে কিছু তথ্য দিয়েছেন, যা নিয়ে জনমনে ব্যাপক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুসন্ধান করেছে। অনুসন্ধানের ফল সম্পর্কে বিবৃতিতে বলা হয়, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইউএসএআইডি যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালকে (ডিআই) নির্বাচিত করে। প্রকল্প প্রস্তাবনা আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে এবং একটি স্বচ্ছ প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া অনুসরণের মধ্য দিয়ে ইউএসএআইডি সিদ্ধান্তটি নেয়। ২০১৭ সালের মার্চে চুক্তির পর ডিআই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু করে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, শুরুতে এসপিএল প্রকল্পটি ছিল ৫ বছর মেয়াদি এবং বরাদ্দ ছিল ১৪ মিলিয়ন ডলার। ব্যবস্থাপনায় ছিল ইউএসএআইডি, অর্থায়নে ছিল ইউএসএআইডি ও যুক্তরাজ্যের উন্নয়ন সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান ডিএফআইডি (বর্তমানে এফসিডিও)। এই প্রকল্পে ডিএফআইডির অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি ছিল ১০ মিলিয়ন ডলার। এসপিএল প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক সহিংসতা হ্রাস করে শান্তি ও সমপ্রীতি বৃদ্ধি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান তৈরি, দলগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চার উন্নয়ন এবং প্রতিনিধিত্বমূলক নেতৃত্বের বিকাশে উৎসাহ দেওয়া। প্রকল্পের অধীন ডিআই বাংলাদেশে জরিপ কার্যক্রমও পরিচালনা করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ইউএসএআইডির প্রকল্পের ক্ষেত্রে মার্কিন সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা নীতি অনুসরণ করাটা বাধ্যতামূলক। এতে আর্থিক নিরীক্ষার প্রক্রিয়াটি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়। প্রকল্প শেষ হওয়ার কয়েক বছর পরও এ সংক্রান্ত নথিপত্র সংরক্ষণ করা হয়। প্রয়োজনে পুনর্নিরীক্ষা হয়। অনুসন্ধান থেকে দেখা যায় যে, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে এসপিএল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু করে। তাই এটি বাংলাদেশের দুজন ব্যক্তির মালিকানাধীন কোনো সংস্থাকে দেওয়ার অভিযোগটি সত্য নয়।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগিতা চুক্তির মাধ্যমে বস্তুত এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষের কোনো কিছু করার ক্ষমতা থাকে না।