অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি গ্রহণ করতে হবে

বৃদ্ধি করতে হবে পুলিশের অভ্যন্তরীণ স্বচ্ছতা

| সোমবার , ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৭:০২ পূর্বাহ্ণ

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে অপরাধের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু তাই নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্যও ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ করে অর্থকড়ি লুটসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। ভুক্তভোগীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই অপহরণ কিংবা জিম্মি করে তাদের সর্বস্ব লুটে নেওয়া হচ্ছে। বেশি অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে পুলিশ পরিচয়ে। আবার অনেক প্রতারক ডিবি পুলিশ সেজে মানুষকে জিম্মি করে অর্থকড়ি লুটে নিচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। পুলিশের কেউ অপরাধে জড়ালে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গত ৭ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে, নগরীর বাকলিয়া থানাধীন কল্পলোক আবাসিক এলাকার একটি বাসায় ঢুকে ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে পুলিশের এএসআইসহ ৬ জন। ডাকাতদলের সদস্যরা হলো নগরীর বাকলিয়া থানার চাক্তাই পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ফারুক মিয়া, তার সহযোগী জয়নাল আবেদীন, মো. আকবর, ফজলুল করিম, মিজানুর রহমান ও সোহেল রানা। ধরা পড়া ডাকাতদের গত শুক্রবার আদালতে তোলা হলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলাম তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের প্রসিকিউশন শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার মফিজুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রাতে নগরের বাকলিয়া থানার কল্পলোক আবাসিক এলাকার একটি ভবনের ৯ তলার একটি বাসায় ১৬ জনের একটি দল ডাকাতি করতে যায়। ডাকাতরা ৮ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও ৩৫ হাজার টাকা লুট করে। এ সময় আশপাশের লোকজন বিষয়টি জানতে পেরে ডাকাত দলকে ধাওয়া দেয়। পালিয়ে যাওয়ার সময় এএসআই ফারুকসহ ছয়জনকে ধরে ফেলে স্থানীয় লোকজন। পরে পুলিশ এসে ছয়জনকে থানায় নিয়ে যায়। তিনি আরও জানান, ঘটনার পর এএসআই ফারুককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশের একশ্রেণির সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুষদুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানাবিধ বেআইনী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ সবসময়ই ছিল এবং আছে। তবে গত কয়েক বছরে একশ্রেণির পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নারীর শ্লীলতাহানি, ছিনতাই, অপহরণ, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মাদকইয়াবা চোরাচালান, মানবপাচারসহ নানাবিধ অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠতে দেখা গেছে। তবে এ সব অপরাধের দায়ে কাউকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার খবর খুব একটা জানা যায় না।

দিন দিন অপরাধ দমন না করে নিজেরা বারবার তারা জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে। এর মধ্য দিয়ে গোটা পুলিশ বাহিনীর ইমেজ বা ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। পুলিশদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি খুবই উদ্বেগজনক। গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য এটি সহায়ক নয়। যারা অপরাধে জড়ান তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি গ্রহণ করতে হবে। পুলিশের অভ্যন্তরীণ স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করতে হবে। তা না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা যতটুকু আছে সেটিও হারাবে।

অপরাধবিজ্ঞানীরা বলেন, সমাজে ক্রমবর্ধমান ও বহুমুখী অপরাধপ্রবণতা মোকাবেলা করে নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই পুলিশের জন্য এখন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে পুলিশকে তার অভ্যন্তরীণ অপরাধপ্রবণতা মোকাবেলা করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। একশ্রেণির পুলিশের ক্রমবর্ধমান অপরাধপ্রবণতা একদিকে যেমন পুরো পুলিশ বাহিনীকেই আস্থার সংকটের মুখে ঠেলে দিচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষমতাসীন সরকারকেও মাঝে মধ্যে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করছে।

সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, সামাজিক মূল্যবোধ হ্রাস, নৈতিক অবক্ষয়, সামাজিক বন্ধন ঢিলে হয়ে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও বিচারহীন সংস্কৃতির কারণে এ সংকট ক্রমাগত ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

অপরাধ বিশ্লেষকরা জানান, যারা অর্থনৈতিক ঝুঁকি ও মানসিক অশান্তিতে থাকে, তাদের একটি অংশ অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। একটি অংশ অপরাধের শিকার হয়। তাঁরা বলেন, মানুষের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা তৈরি হওয়ার অনেক কারণ আছে। কিন্তু তার মধ্যে অন্যতম নিরাপত্তাহীনতা। কাজের নিরাপত্তা, খাদ্যের নিরাপত্তা, সুস্থ সমাজের নিরাপত্তাএই বিষয়গুলো যে কোনো মানুষের মনকে প্রভাবিত করে। মানুষ মানসিকভাবে হিংস্র হয়ে ওঠছে। যা মানুষকে অপরাধপ্রবণ করে তুুলছে। দেশের গত কয়েক মাসের অপরাধ পরিসংখ্যানে সে চিত্রই স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। এ বিষয়ে সরকারসহ আমাদের সবাইকে নতুন করে ভাবতে হবে। এ নিয়ে আরও কাজ করতে হবে। সর্বোপরি বিচারের মাধ্যমে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে