অপরাধীদের দেশে ফেরানোর উপায় বললেন ফলকার টুর্ক

| বৃহস্পতিবার , ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের সাবেক সরকার জনতার প্রতিরোধের মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে পরিকল্পিত ও সমন্বিত কৌশলের মাধ্যমে নৃশংসতা চালিয়েছিল। রাজনৈতিক নেতৃত্ব জানত এবং তাদের সমন্বয় ও নির্দেশেই চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে অপরাধীরা দেশের বাইরে থাকলে তাদের ফেরানোর বিষয়ে সর্বজনীন এখতিয়ার (ইউনিভার্সাল জুরিসডিকশন) প্রয়োগ করা যেতে পারে। গতকাল বুধবার দুপুরে জেনেভায় বাংলাদেশে জুলাইআগস্টের অভ্যুত্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক।

ইউনিভার্সাল জুরিসডিকশন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনে গুরুতর অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনতে পারে কোনো দেশের আদালত। এ ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটনের স্থান কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে না। ওই আইনের আওতায় অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার বা প্রত্যর্পণ চাওয়ার সুযোগ থাকে।

প্রতিবেদন প্রকাশের শুরুতে জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার প্রারম্ভিক বক্তৃতা করেন। তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের এশিয়াপ্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রোরি মুনগোভেন ও দপ্তরের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি।

মানবাধিকার লঙ্ঘনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে ফলকার টুর্ক বলেন, প্রতিবেদনে এটা স্পষ্ট যে সাবেক সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিল। প্রকৃতপক্ষে গুম, নির্বিচার গ্রেপ্তার, সহিংস পদ্ধতিতে বিক্ষোভ দমনের মতো নানা ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল।

মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযুক্ত শেখ হাসিনা এখন ভারতে অবস্থান করছেন। এ ক্ষেত্রে কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, জানতে চাইলে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনার বলেন, যদি অপরাধী দেশের বাইরে থাকে, তখন ইউনিভার্সাল জুরিসডিকশন ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে যে দেশে অপরাধী অবস্থান করছে তাদের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধের বিচার করতে সম্মত হতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) এ বিষয়ে তদন্তের জন্য বলতে পারে। তবে তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করেছে। অভ্যন্তরীণ বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আইসিসিতে যাওয়ার বিষয়টিকে বিবেচনায় রাখা যেতে পারে।

তার মতে, দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার কাজ শুরু হয়েছে এবং অনেকগুলো মামলা করা হয়েছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও মামলা করা হয়েছে। বাংলাদেশের আইনি কাঠামোতে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে এবং এটিকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

এক প্রশ্নের উত্তরে রোরি মুনগোভেন বলেন, বিচারপ্রক্রিয়ার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ না করলে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী দলের পাওয়া তথ্যউপাত্ত বাংলাদেশের কাছে দেওয়া হবে না। প্রতিবেদনে অপরাধীদের চিহ্নিত করা হয়নি। কিন্তু আমরা প্রচুর তথ্য সংরক্ষণ করেছি। সর্বোচ্চ মান অনুযায়ী এসব সংরক্ষণ করা হচ্ছে যাতে করে পরে ব্যবহার করা যায়।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়ে বাংলাদেশের বিচারিক প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করার বিষয়ে রোরি মুনগোভেন বলেন, জাতিসংঘের নীতিমালা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি আমাদের জন্য একটি সমস্যা। আমরা এমন বিচারে সহযোগিতা করতে পারি না যেটা মৃত্যুদণ্ডের দিকে নিয়ে যায়। তবে বিচারপ্রক্রিয়া বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলার বিষয়ে জোর দেন তিনি।

মুনগোভেন বলেন, আমাদের প্রত্যাশা বাংলাদেশ মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে। কারণ, এটি প্রতিশোধের একটি স্থায়ী চক্র তৈরি করে দেয়। মৃত্যুদণ্ড বিভিন্ন দেশে লুকিয়ে থাকা অপরাধীদের প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। অনেক সদস্য রাষ্ট্রের জন্য প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে সহযোগিতায় মৃত্যুদণ্ড একটি প্রতিবন্ধকতা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তিনটি পক্ষ
পরবর্তী নিবন্ধআ. লীগ সরকার দেশে আইয়্যামে জাহেলিয়া প্রতিষ্ঠিত করে গেছে