অন্য ইভেন্টগুলোর জন্যও কার্যকর ব্যবস্থা চান চট্টগ্রামের সংগঠকরা

এম এ আজিজ স্টেডিয়াম বরাদ্দ ফুটবলের জন্য

ক্রীড়া প্রতিবেদক | সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

গত শনিবার হঠাৎ করেই একটি খবর চাউর হয় ক্রীড়াঙ্গনে। তা হচ্ছে ১০ বছরের জন্য এম এ আজিজ স্টেডিয়াম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে)। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এমন ঘোষণায় হয়তো ফুটবল সংশ্লিষ্টরা খুশি হয়েছেন। কিন্তু সামগ্রিক ক্রীড়া সংগঠকদের কাছে বিষয়টি বিস্ময়কর বলে মনে হয়েছে। কারণ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এই চট্টগ্রাম। ঢাকার পরে যদি খেলাধুলা হয়ে থাকে সেটা এই চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা প্রায় ২৫টি ইভেন্ট আয়োজন করে থাকে। আর এসব ইভেন্ট আয়োজনের স্থান হচ্ছে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম। বাংলাদেশ জেলা কিংবা বিভাগীয় ফুটবল এসোসিয়েশন (ডিএফএ) গঠিত হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রামেই কেবল ফুটবল লিগ হয়েছে নিয়মিত। অন্য কোনো জেলায় হয়েছে তেমন নজির নেই। চট্টগ্রামে ডিএফএ এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার মধ্যে সুসম্পর্কের কারণে তারা রুটিন করে নিয়মিত ফুটবল, ক্রিকেট, হকির মত বড় ইভেন্টগুলো ছাড়াও নিয়মিত বাকি প্রায় ২৫টি ইভেন্ট আয়োজন করেছে। কিন্তু জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এমন ঘোষণায় চট্টগ্রামের খেলাধুলায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটবে বলে মনে করছেন ক্রীড়া সংগঠকরা। যদিও কেউ কেউ মনে করছেন আলোচনা আর সমঝোতার ভিত্তিতে হয়তো খেলাধুলা চালিয়ে নেওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে আউটার স্টেডিয়ামকে প্রস্তুত করতে হবে।

চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সহ সভাপতি হাফিজুর রহমান বলেন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদও ভাল করে জানে আমরা কতগুলো ইভেন্ট নিয়মিত আয়োজন করি। আর আমাদের সম্বল এই একটি স্টেডিয়াম। আমাদের মধ্যে সুন্দর সমঝোতা রয়েছে বলেই ফুটবল সহ সব ইভেন্ট নিয়মিত হয়েছে। এখন হঠাৎ করে ফুটবল ফেডারেশনকে ১০ বছরের জন্য একটি স্টেডিয়াম দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই চট্টগ্রামের খেলাধুলা আয়োজনে সহায়ক হবে না। তবে বাফুফেকে কি শর্তে এই স্টেডিয়াম দেওয়া হয়েছে সেটি এখনো খোলাসা করা হয়নি। তাই সঠিক মতামত দেওয়া সম্ভব নয়। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চিঠি পেলেই আমরা বুঝতে পারব আসলে সেখানে কি আছে। তবে এ

ধরনের সিদ্ধান্ত চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকদের সাথে

আলোচনা করে নিলেই ভাল হতো। তিনি বলেন, যেহেতু চট্টগ্রামে সারা বছরই খেলাধুলা হয়। সেহেতু চট্টগ্রামের মাঠটি এভাবে না দিয়ে দেশে অনেক স্টেডিয়াম রয়েছে যেগুলোতে খুব কমই খেলাধুলা হয়, সেখান থেকে একটা মাঠ বেছে নিলে সেটা সংস্কারও হতো খেলাধুলাও হতে পারতো।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার আরেক সহ সভাপতি সৈয়দ আবুল বশর বলেন, আমি জানি না কেন এই সিদ্ধান্ত। এর ফলে চট্টগ্রামের খেলাধুলা এক রকম বন্ধই হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বলা হচ্ছে ক্রিকেট জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হবে। কিন্তু সেটা প্রকৃত অর্থেই সম্ভব নয়। কারণ জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম বছরের বেশিরভাগ সময় জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আর একটা আন্তর্জাতিক সিরিজ হওয়া মানে প্রস্তুতির জন্য লম্বা সময় লেগে যায়। আর চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেটেই রয়েছে চারটি লিগ। তিন মাঠ নিয়েই আমরা লিগ শেষ করতে হিমশিম খাই। সেখানে কিভাবে ক্রিকেট চলবে সেটা আমরা বুঝতে পারছি না। তিনি বলেন, ফুটবলসহ সবগুলো আমাদের ইভেন্ট। আমার ক্লাব ফুটবল যেমন খেলে তেমনি আরো ১২ টা ইভেন্ট খেলে। কাজেই এভাবে এককভাবে ফুটবলের জন্য এম এ আজিজ স্টেডিয়াম বরাদ্দ দিয়ে দেওয়া মানে অন্য ইভেন্টগুলো মুখ থুবড়ে পড়া।

চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আ ন ম ওয়াহিদ দুলাল নিজে ফুটবল সংস্থার কর্মকর্তা হয়েও এই সিদ্ধান্তে হতাশ হয়েছেন। তিনি বলেন, যেহেতু চট্টগ্রামের মত খেলাধুলা আর কোথাও হয় না সেহেতু বাফুফেকে দেওয়ার ফলে অন্য খেলাগুলো বাধাগ্রস্ত হয়ে গেল। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন তাদের ক্যালেন্ডার বাস্তবায়নে বছরে কতদিন ব্যবহার করবে, কতদিন বাকি থাকবে সেটাও নিশ্চিত নয়। যেহেতু মাঠ চলে যাবে বাফুফের কাছে তখন অন্য খেলা আয়োজনে জেলা ক্রীড়া সংস্থার যে শিডিউল সেটা সাংঘর্ষিক হয়ে যাবে। তখন হয়তো দেখা যাবে সে ইভেন্টটা আর আয়োজন করা সম্ভব হবে না। তাই বিকল্প মাঠ তৈরির আহ্বান জানান ডিএফএ কর্মকর্তা।

সাবেক ফুটবলার এবং কে এম স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি মশিউল আলম স্বপন মনে করেনবাফুফেকে স্টেডিয়াম দিয়ে দিলেও বাকি ইভেন্টগুলো আয়োজন করতে হয়তো আমাদের কষ্ট হবে, তবে অসম্ভব হবে বলে মনে করেন না তিনি। এই সংগঠক বলেন, আমাদের একটা জায়গায় আলোচনায় বসতে হবে। কিভাবে সবগুলো খেলাধুলা চালানো যায় সেরকম একটা কার্যকর সমাধান বের করতে হবে। কারণ সবগুলো আমাদেরই। আমরাই খেলব এসব খেলা। তাই আলোচনায় বসে সমাধান বের করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে হয়তো আমাদেরকে আউটার স্টেডিয়ামকে প্রস্তুত করতে হবে। অন্য কোথাও কোনো মাঠ থাকলে সেটা কিভাবে ব্যবহার করা যায় সে চেষ্টা চালাতে হবে।

বঙিরহাট ইয়ংম্যান্স ক্লাবের স্টেডিয়াম প্রতিনিধি আলি হাসান রাজু বলেন, বাফুফেকে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম দশ বছরের জন্য দেওয়া হলে আমাদের বাকি ইভেন্ট গুলো মারাত্নক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, যেহেতু মালিকানা চলে যাবে বাফুফের হাতে সেহেতু অন্য কোনো ইভেন্ট আয়োজন করতে গেলে তখন বাফুফে থেকে অনুমতি নিতে হবে। তখন যদি বাফুফের কোনো ইভেন্ট থাকে তখন আমাদের ইভেন্টটা বন্ধ করে দিতে হবে। সব মিলিয়ে আমরা এক রকম নিজের ঘরে পরবাসীর মত হতে হবে। যেহেতু অনেক ইভেন্ট আয়োজন করতে হয় চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে তাই আগে নতুন ভেন্যু তৈরি করতে হবে। যেহেতু দেশে ঢাকার পরে একমাত্র চট্টগ্রামেই খেলাধুলা হয়।

৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর সারা দেশের সব জেলা এবং বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে পাঁচমাস পার হয়ে গেলেও এখনো সরকার ঘোষিত ফরম্যাট অনুযায়ী এডহক কমিটি গঠিত হয়নি। ফলে এখন অনেক খেলাধুলা জমা হয়ে আছে। যখন আবার কমিটি হবে তখন এতগুলো খেলা কিভাবে সম্পন্ন করা হবে সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার উপর যদি মূল ভেন্যু এম এ আজিজ স্টেডিয়াম ব্যবহার সীমিত হয়ে পড়ে তাহলে চট্টগ্রামের খেলাধুলা বাধার মুখে পড়বে। তাই চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকদের দাবি অন্য ইভেন্টগুলোর জন্য যথাযথ ভেন্যুর ব্যবস্থা করা হোক। যাতে খেলাধুলায় কোনো ছেদ না পড়ে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাউজানে ইটভাটায় সশস্ত্র হামলা সাড়ে ২৩ লাখ টাকা লুট
পরবর্তী নিবন্ধসড়কের পাশে দোকানে পান খেতে গিয়ে লাশ হলেন দুই পথচারী