দেশের সবচাইতে ধনী ক্রীড়া সংস্থা চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে যেন বিরাজ করজ করছে উৎসবের আমেজ। গত আট বছরে দুই মেয়াদের নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলরা। কারন তখন সমঝোতার মাধ্যমেই কমিটি গঠিত হয়েছিল। এবারে অবশ্য তেমনটি হচ্ছেনা। যেহেতু কাউন্সিলরদের মাঝে নির্বাচনের একটি আকাঙ্ক্ষা পরিলক্ষিত হয়েছে প্রবলভাবে তাই নির্বাচনের পথেই হাটছে জেলা ক্রীড়া সংস্থা। আর সে নির্বাচনে এবারে রেকর্ড সংখ্যক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছে বিভিন্ন পদে। যা অতীতে কখনোই দেখা যায়নি। যদিও নির্বাচনের আগেই চতুর্থবারের মত সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে গেছেন আ.জ.ম নাছির উদ্দিন। তাই তিনি এখন নির্ভার। এখন তিনি নির্বাচনে রেফারীর ভুমিকা পালন করতে চান। যদিও তিনি বারবার বলেছেন এই নির্বাচনে তিনি কেবলই রেফারীর ভুমিকা পালন করবেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর অফিসার্স ক্লাবে নির্বাচনের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে তেমনটি বললেন আরো একবার। তিনি বলেন যারা নির্বাচন করছে তারা সবাই আমার মানুষ্ তাই আমি দেখতে চাই কারা নির্বাচিত হয়ে আসতে পারে।
তবে সে প্রার্থী পরিচিতি অনুষ্ঠিানে আ.জ.ম নাছির পরিষ্কার করে দিয়েছেন তার আগামী চার বছরের পরিকল্পনা। কি করতে চান তারও একটি ফিরিস্তি তিনি দিয়ে দিয়েছেন কাউন্সিলরদের সামনে। খুব বেশি পরিকল্পনার কথা না বললেও আগামী চার বছরে তিনি যে বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিতে চান তা হচ্ছে অন্তত চারটি মাঠ সৃষ্টি করা। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠ বলতে সবেদন নীলমনি একটাই। আর তা হচ্ছে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম। ছোট বড় সব খেলাই আােজন করতে হয় এখানে। তাই তার মাঠ দরকার। আর সে পথে তিনি হাটতে চান। যদিও গত ১২ বছরে তিনি কোন মাঠ সৃষ্টির কাজে হাত দিতে পারেননি। এই চার বছরে কিভাবে নতুন মাঠ সৃষ্টি করবেন সেটাও প্রশ্ন সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে তিনি জানিয়েছেন মাঠ সৃষ্টির কোন বিকল্প নেই। আউটার স্টেডিয়ামের সংষ্কারের কাজ চলছে। এটি হয়তো এ বছরের মধ্যেই খেলার উপযোগী মাঠে পরিনত হবে। তার বাইরেও অনুশীলন এবং খেলার জন্য আরো দুটি মাঠ অন্তত দরকার। সে দিকে নজর দিয়েই এগুতে চান তিনি।
মাঠের পাশপাশি তিনি আরো একটি লক্ষ্যের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। তা হচ্ছে মান সম্মত খেলার আয়োজন করা। গত ১২ বছরে চট্টগ্রামে অনেক গুলো ইভেন্ট আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু বারবার এসব আয়োজনের মান নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। তাই তিনি এবারে সেদিকে নজর দিতে চান। প্রয়োজনে কম ইভেন্ট আয়োজন করে হলেও খেলাধুলার মান বাড়াতে হবে। যাতে প্রত্যাশিত মানের খেলোয়াড় বেরিয়ে আসে। গত ১২ বছরে চট্টগাম থেকে তেমন জাতীয় মানের ক্রীড়াবিদ বেরিয়ে আসেনি। তার প্রধান কারন হিসেবে দেখা হচ্ছে মান সম্মত খেলাধুলার অভাব। তাই এ বিষয়ে তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে চান।
চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের ফ্লাড লাইটগুলো বেশ পুরানো। আর এই ফ্লাড লাইটে যে সব বাতি গুলো ব্যবহার করা হয়েছে এখন সেগুলো আর ব্যবহার করা হয়না কোথাও। তাই এই ফ্লাড লাইটের সংষ্কার করতে চান তিনি। আর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের ফ্লাড লাইটের টাওয়ার গুলো প্রচুর জায়গা দখল করেছে। তাই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সাথে সমন্বয় করে এই লাইটকে আধুনিক করতে চান তিনি। যাতে রাতে অন্তত কিছু খেলা আয়োজন করা যায়। বিশেষ করে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের উপর চাপ কমাতেই চেষ্টা করছেন তিনি। এর বাইরে আরো একটি কাজ করার ঘোষনা তিনি দিয়েছেন। আর তা হচ্ছে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম ভবনটিকে দশ তলা বিশিষ্ট মালটি পারপাস জিমনেসিয়ামে পরিণত করা। যাতে একই ছাতার নিচে নিয়ে আসা যায় সবগুলো ইনডোর গেমসকে। কাজটা কঠিন হলেও তিনি এই কঠিন কাজগুলো করতে চান আগামী চার বছরে। আর সে সব কাজগুলোতে এগিয়ে নিতে তিনি দক্ষ, যোগ্য, অভিজ্ঞ, কর্মঠ এবং সুদূরপ্রসারী নেতৃত্ব নির্বাচনের অনুরোধ জানান কাউন্সিলরদের প্রতি। কারণ চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচনে দীর্ঘ সময় ধরে দেখা গেছে এমন সব নেতৃত্ব নির্বাচিত কিংবা মনোনীত হয়ে আসেন যাদের কাজ মিটিংয়ে তালি দেওয়া কিংবা আসা যাওয়া করা। আর কোন কাজ বলতে গেলে নাই। কারন তাদের মধ্যে দেখানোর মত দক্ষতা নেই। তাই এবারে যোগ্যদের নির্বাচিত করার আহবান আ.জ.ম নাছিরের। যাদের উপর তিনি ভরসা করতে পারবেন। যাদের দিয়ে তিনি কাজ গুলো আদায় করে নিতে পারবেন। শুধু মিটিংয়ে হাত তালি দেওয়ার লোকদের আর সংস্থায় চাননা তিনি এবং কাউন্সিলররা। তাই এবারের নির্বাচনে তিনি বল ছেড়ে দিয়েছেন কাউন্সিলরদের কোর্টে। যারা গত আট বছর তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি।
এবারের নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক ব্যতীত আরো ২৪টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর এই ২৪ পদের বিপরীতে ৪৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যেখানে সহ সভাপতি পদে ৪টি পদের বিপরীতে প্রার্থী ১০ জন। আর এরা সবাই চট্টগ্রামের প্রবীণ ক্রীড়া সংগঠক এবং যারা নানা সময়ে দীর্ঘ ধরে জেলা ক্রীড়া সংস্থায় নানা পদে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। এই দশ জন হলেন আলহাজ্ব আবুল হাসেম (বীর মুক্তিযোদ্ধা), এ কে এম এহেছানুল হায়দর চৌধুরী, মোহাম্মদ তাহের উল আলম চৌধুরী, দিদারুল আলম চৌধুরী, মকসুদুর রহমান বুলবুল, মফিজুর রহমান, এ্যাডভোকেট শাহীন আফতাবুর রেজা চৌধুরী, মো: শাহজাদা আলম, সৈয়দ আবুল বশর এবং মো: হাফিজুর রহমান। অতিরিক্ত সাধারন সম্পাদক পদে প্রার্থী তিজন। নির্বাচিত হবেন একজন। তারা হলেন এস এম শহীদুল ইসলাম, মশিউর রহমান চৌধুরী এবং সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম। যুগ্ম সম্পাদক পদে প্রার্থী তিনজন। নির্বাচিত হবেন দুজন। তারা হলেন অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন, মোঃ আমিনুল ইসলাম এবং সরোয়ার আলম চৌধুরী মনি। কোষাধ্যক্ষ পদে লড়াইটা সরাসরি। একটি পদের বিপরীতে এখানে প্রার্থী দুইজন। তারা হলেন আ.ন.ম.ওয়াহিদ দুলাল এবং শাহাবুদ্দিন মোঃ জাহাঙ্গীর।
তবে ১৩ টি সাধারন সদস্য পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ২৮ জন। তারা হলেন অনুপ বিশ্বাস, আকতারুজ্জামান, মো: আলমগীর পারভেজ, এ.কে.এম আবদুল হান্নান (আকবর), এ.এস.এম. ইকবাল মোরশেদ, এ.এস.এম সাইফুদ্দিন চৌধুরী, মো: এনামুল হক, এম.এ মুছা বাবলু, কল্লোল দাশ, গোলাম মহিউদ্দিন হাসান, জহির আহমেদ চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার জসিম উদ্দিন, মোহাম্মদ দিদারুল আলম, দিদারুল আলম মাসুম, নাসির মিঞা, ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, প্রবীন কুমার ঘোষ, মো: মুজিবর রহমান, মো: রাশেদুর রহমান মিলন, রায়হান উদ্দিন রুবেল, মোহা: শাহজাহান, শওকত হোছাইন, সাইফুল আলম খাঁন, সৈয়দ মোহাম্মদ তানসীর, মিসেস সাহেলা আবেদীন (রিমা), সুমন দে, হাসান মুরাদ বিপ্লব এবং মো: হারুন আল রশীদ। উপজেলার সংরক্ষিত দুটি সদস্য পদের জন্য প্রার্থী হয়েছেন তিনজন। তারা হলেন প্রদীপ কুমার ভট্টচার্য্য, মোহাম্মদ জাফর ইকবাল এবং মোঃ জাহিদুল ইসলাম। এছাড়া মহিলা সংরক্ষিত দুটি সদস্য পদের দুজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। তারা হলেন রেখা আলম চৌধুরী এবং রেজিয়া বেগম ছবি। আগামী ২৫ নভেম্বর এই বিশাল বহর থেকে কারা যুক্ত হন জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহি কমিটিতে সেটাই এখন দেখার।