অনুরূপচন্দ্র সেন (১৮৯৮–১৯২৮)। ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের শহীদ বিপ্লবী। অনুরূপচন্দ্র সেনের জন্ম চট্টগ্রামের নোয়াপাড়ার এক দরিদ্র পরিবারে। পিতার নাম কমলকুমার সেন। চট্টগ্রাম মাদ্রাসা থেকে ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে আই.এ এবং ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে বি.এ পাশ করেন। অনুরূপচন্দ্র সেন এম.এ. ক্লাসের ছাত্র থাকাকালে বিপ্লবী দলের সভ্য হন। মাস্টারদা সূর্য সেন ও তিনি দুজনেই চট্টগামের নোয়াপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। তারা ছিলেন পরস্পরের সমবয়সী বন্ধু। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার বুড়ুল হাইস্কুলে শিক্ষকতাকালীন নানা সামাজিক কাজে নিজেকে ও ছাত্রদের জড়িয়ে রাখতেন। ছাত্র–ছাত্রীরা তার উৎসাহে হাতে লেখা জাতীয়তাবাদী ‘সাধনা‘ পত্রিকা বের করে। অস্ত্র প্রশিক্ষণ, লাঠি খেলা, দেহচর্চা ইত্যাদির গোপন আখড়া গড়ে তুলে স্থানীয় ছাত্র–যুবদের কাছে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। ১৯১৮ সনে যে পাঁচজনকে নিয়ে চট্টগ্রাম বিপ্লবী দলের কেন্দ্র গঠিত হয় তিনি তার অন্যতম ছিলেন। চট্টগ্রাম বিপ্লবীদের গোপন সংবিধান তারই রচিত। প্রথমে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন।
১৯২২ সালে দলের নির্দেশে চব্বিশ পরগনা জেলার বুড়ুল হাই স্কুলে শিক্ষকতার কাজ নিয়ে এসে সেখানে সমাজসংস্কারমূলক কাজের সঙ্গে সঙ্গে বিপ্লবীদের এক ঘাঁটি তৈরি করেন। সঙ্গে পান প্রিয় ছাত্র প্রভাস রায় ও মুরারীশরণ চক্রবর্তী প্রমুখকে। দক্ষিণেশ্বর বোমা মামলায় ১৯ ডিসেম্বর ১৯২৬ তারিখে গ্রেপ্তার হন বুড়ুল থেকেই। ময়নাগুড়িতে অন্তরীণ থাকাকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে কাশীতে পাঠানো হয়। সেখানে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় শ্রীরামকৃষ্ণ অনাথ আশ্রমে তিনি ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বুড়ুল হাইস্কুলসহ সমগ্র জনপদ আজও এই মহান বিপ্লবীর স্মৃতিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে বাঁচিয়ে রেখেছে। সেখানে তাঁর মূর্তি, তাঁর নামাঙ্কিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজও তাঁর স্মৃতি বহন করে চলছে।