অনুমতি ছাড়াই অনুপস্থিতি

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৫:৪৬ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) পরিচ্ছন্ন বিভাগের অস্থায়ী শ্রমিক মো. শাহীন আলম। ৩৫ নং বক্সিরহাট ওয়ার্ডে কাজ করেন। মাসিক হাজিরা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন তিনি। এতে ব্যাঘাত ঘটছে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে। অথচ অনুপস্থিতির বিষয়ে তিনি সিটি কর্পোরেশন থেকে কোনো অনুমতি নেননি বা দরখাস্তও দেননি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে। শুধু পরিচ্ছন্ন কর্মী শাহীন নয়। দৈনিক আজাদীর অনুসন্ধানে পরিচ্ছন্নসহ সংস্থাটির বিভিন্ন বিভাগে কর্মরতদের এভাবে অনুমতি ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। অনুপস্থিতির দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরতরা। এছাড়া শিক্ষা, রাজস্ব ও নিরাপত্তা বিভাগের কর্মচারীরাও অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে যারা অনুপস্থিত থাকেন তাদের অব্যাহতি দিয়ে বিভিন্ন সময়ে অফিস আদেশও জারি করেছে চসিক। এদিকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় ব্যাঘাত ঘটছে চসিকের স্বাভাবিক কার্যক্রমে। সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন নগরবাসীও। অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত থাকায় ভেঙে পড়ছে অফিসের শৃঙ্খলাও।
এ বিষয়ে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন দৈনিক আজাদীকে বলেন, অনুপস্থিত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। অনেককে অব্যাহতি দিয়েছি। পরিচ্ছন্ন বিভাগে অনুপস্থিতির হার বেশি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিভিন্ন অনিয়ম আছে এ বিভাগে। ইতোমধ্যে ডোর টু ডোর প্রকল্পের বিষয়ে তদন্ত করে ঘাপলা পেয়েছি, সেখানে শুভংকরের ফাঁকি আছে। এছাড়া একসময় অনেক ভিক্ষুককে পরিচ্ছন্ন বিভাগে চাকরি দেয়া হয়েছিল। দেখা গেছে তারা কাজে আসছে না। আবার ভিক্ষা করাও বন্ধ করেনি।
প্রশাসক বলেন, অনেকে অস্থায়ী চাকরি করে। তাদের ইচ্ছে হলে আসে, না হলে আসে না। না আসলে চাকরি চলে যাচ্ছে। আবার স্বাস্থ্য বিভাগে অনেক চিকিৎসক কাজ করেন; কিন্তু অস্থায়ী হওয়ায় তাদের বেতন কম। তাদের মধ্যেও অনীহা থাকে। এরপরও কোথাও অনিয়ম দেখলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
অনুপস্থিতিতে এগিয়ে পরিচ্ছন্ন বিভাগ : দৈনিক আজাদীর অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৮ নভেম্বর থেকে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন পরিচ্ছন্ন সুপারভাইজার মিন্টু তালুকদার। গত ১৫ ডিসেম্বর চাকরি থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়ে অফিস আদেশ জারি করেন চসিকের সচিব আবু শাহেদ চৌধুরী।
গত ২৩ নভেম্বর সকালে ৩৫ নং বঙিরহাট ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্ন বিভাগের একজন প্রতিনিধি গোপনে পরিদর্শনে গিয়ে ২১ জন শ্রমিককে অনুপস্থিত পান কর্মস্থলে। অথচ পরিদর্শনকালীন সময়ে সেখানে ৩৬ জন শ্রমিক কর্মস্থলে থাকার কথা। শ্রমিক অনুপস্থিত থাকায় ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্ন সুপারভাইজার মো. মাহফুজুল হককে ২৪ নভেম্বর শোকজ করা হয়েছিল।
গত ৬ অক্টোবর আরেফিন নগর টিজিতে অবস্থিত পয়: বর্জ্য শোধানাগারে পরিদর্শনে যান চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এসময় কর্মস্থলে পাওয়া যায়নি সুপারভাইজার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলামকে। এ জন্য তাকে ১২ অক্টোবর শোকজ করেন প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা। নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ‘সপ্তাহে দুয়েক দিন আবার কোনো সপ্তাহে কর্মস্থলে আসেননি অভিযুক্ত সুপারভাইজার। এজন্য পূর্বে তাকে মৌখিকভাবে সর্তকও করা হয়েছিল।’
প্রশাসকের নির্দেশে গত ৪ ও ৫ নভেম্বর ৪০ নং উত্তর পতেঙ্গা এবং ৪১ নং দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডে পরিদর্শন করেন পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব কুমার। এর মধ্যে ৪ নভেম্বর ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে ৯ জন ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে ১৫ জন শ্রমিককে অনুপস্থিত পান তিনি। পরদিন ৫ নভেম্বর ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে ৯ জন এবং ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে ১৮ জন শ্রমিক অনুপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে ওয়ার্ড দুইটির সুপারভাইজার আবুল কালাম আজাদ এবং খোরশেদ আলমকে শোকজ করা হয়েছিল।
পরিচ্ছন্ন বিভাগ মনে করে, একসঙ্গে অধিক সংখ্যক শ্রমিক অনুপস্থিত থাকায় ওয়ার্ডের সার্বিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। এতে এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হয়েছে এবং জনসমক্ষে সিটি কর্পোরেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিভাগে অনুপস্থিত সাত জন :
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২ জুলাই থেকে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত ডা. রাজিব বিশ্বাস। তিনি নুরুল ইসলাম বিএসসি মাতৃসদন হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার। গত ২৫ নভেম্বর তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে অফিস আদেশ জারি করা হয়।
চসিক পরিচালিত ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি এন্ড ম্যাটস এর প্রভাষক ডা. সংহিতা দেব। ২০১৯ সালে ছয় মাস ছুটিতে ছিলেন তিনি। এরপর চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আরো এক বছরের ছুটির আবেদন করেন তিনি। এতে শারীরিক ও পারিবারিক কারণ উল্লেখ করেন। বিষয়টি গ্রহণযোগ্য মনে না করায় তাকে আবারো আবেদন করতে বলেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। কিন্তু তিনি আবেদন করেননি। সর্বশেষ গত ৬ সেপ্টেম্বর তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারী থুই সাই প্রু মার্মা। তাকে গত ২৬ আগস্ট অব্যাহতি দেয়া হয়। মেমন মাতৃসদন হাসপাতালের মিডওয়াইফ জ্যোতিকা চাকমা গত ১২ এপ্রিল থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। তাকে ২৩ আগস্ট চাকরিচ্যুত করা হয়। মেমন মাতৃসদন হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. রিনি সাহা কর্মস্থলে অনুপস্থিত গত ২ এপ্রিল থেকে। তাকে গত ১৭ আগস্ট চাকরিচ্যুত করা হয়।
মোস্তফা হাকিম সিটি কর্পোরেশন মাতৃসদন হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় মো. সৈয়দ ২০১৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পূর্ব বাকলিয়া হাজী ওয়াইজ খাতুন সিটি কর্পোরেশন মাতৃসদন হাসপাতালের লন্ড্রি ওয়াসম্যান মিন্টু দাশ ২০১৯ সালের ১৫ আগস্ট থেকে অনুপস্থিত ছিলেন। তাকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
অন্যান্য : গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন রাজস্ব শাখার কর আদায়কারী সৈয়দ তফাজ্জল হোসেন। ১৭ সেপ্টেম্বর তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে অফিস আদেশ জারি করে চসিক।
গত ১৭ মার্চ থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন নিরাপত্তা প্রহরী মো. আবু বক্কর। অস্থায়ী এ কর্মচারীকে গত ১০ নভেম্বর চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
শিক্ষা বিভাগের অধীন সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত কম্পিউটার ইনস্টিটিউটের অফিস সহকারী পদে মাসিক সর্বসাকুল্যে বেতনে কর্মরত ছিলেন রাব্বী রাজা চৌধুরী। ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিনাবেতনে ছুটিতে ছিলেন তিনি। ছুটি শেষ হলেও কর্মস্থলে যোগ দেয়নি। সর্বশেষ গত ৫ নভেম্বর তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে অফিস আদেশ জারি হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশেই টিকা উৎপাদনের আশা
পরবর্তী নিবন্ধজেটিঘাট ভেঙে দুর্ভোগ