বিভিন্ন গণমাধ্যমে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহর বিরুদ্ধে উঠা নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে গঠিত তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি চট্টগ্রাম ওয়াসা ভবনে এসে তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে তদন্ত কমিটির প্রধান ও স্থানীয় সরকার বিভাগের মহাপরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান (অতিরিক্ত সচিব) এর নেতৃত্বে তদন্ত টিমের সদস্যরা চট্টগ্রাম ওয়াসার দামপাড়াস্থ কার্যালয়ে আসেন। তদন্ত কমিটির সদস্যরা ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগসহ চট্টগ্রাম ওয়াসার গত ১৪ বছরের বিভিন্ন প্রকল্পের নথিপত্র পর্যালোচনা করেন এবং সংগ্রহ করেন।
এসময় সাংবাদিকরা তদন্ত কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান স্থানীয় সরকার বিভাগের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে ১৪ বছর ধরে টানা চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডিসহ ওয়াসার অনিয়ম–দুর্নীতির খবর আসার পর সরকার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। যেসব সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা তদন্ত ও পরিদর্শনের জন্য আমরা এখানে এসেছি। গত ১৪ বছরে চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডিসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের তথ্য, ঠিকাদারদেরকে দেওয়া বিভিন্ন বিল ভাউচার, প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো অনিয়ম–দুর্নীতি অনিয়ম হয়েছে কিনা। প্রশাসনিক কার্যক্রমের মধ্যে নিয়োগ, পানির বিল ইত্যাদি ব্যাপারে কোনো দুর্নীতি হয়েছে কিনা সেটা আমরা গভীরভাবে দেখছি। ব্যবস্থাপনা পরিচালক যেহেতু এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, কাজেই ওনার সম্পৃক্ততা অবশ্যই যাচাই করে দেখবো। এসব বিশ্লেষণ করে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেবেন বলে জানান তদন্ত দলের প্রধান মাহমুদুল হাসান।
অতিরিক্ত সচিব মো. মাহমুদুল হাসান আরও বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসায় যারা আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে দালিলিক প্রমাণাদির ভিত্তিতে আমরা কাজ করবো। তদন্ত কমিটির কাজের কারণে ওয়াসার চলমান স্যুয়ারেজ প্রকল্পে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চলমান প্রকল্প নিয়ে কোনো তদন্ত হচ্ছে না। আর তদন্ত কার্যক্রম চলমান প্রকল্পে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে না।
এসময় তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আনোয়ার পাশা ও পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মীর আবদুস শহীদ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম ওয়াসার সচিব শাহেদা ফাতেমা চৌধুরী, রাজস্ব কর্মকর্তা রুমন দে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা সকাল থেকে বিকেল প্রায় ৩টা পর্যন্ত ওয়াসার কার্যালয়ে নানান অভিযোগের তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করেন এবং ওয়াসার বিভিন্ন পর্যায়ের ইঞ্জিনিয়ার এবং কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন।
ওয়াসার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডির ভ্রমণের নথি, বিদেশ সফরের নথি, উগান্ডা সফরের নথি, আউটসোর্সিংয়ের তালিকা, ২০০৯ সালের পর নিয়োগের নথি, প্রকল্পের নথি, এমডির সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এছাড়াও বাস্তবায়িত প্রকল্প সমূহের নথিপত্রও যাচাই–বাছাই করে দেখেছেন। তদন্তকালে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ, প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলমসহ বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালকসহ প্রায় সকল কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদত্যাগ করেছেন। চট্টগ্রামেও বৈষম্যবিরোধী সাধারণ নাগরিক সমাজের ব্যানারে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহর পদত্যাগের দাবিতে ওয়াসা কার্যালয়ে পরপর দুইদিন আন্দোলন করেছে। ওয়াসার এমডির পদত্যাগসহ তার বিরুদ্ধে করা নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে তিন সদস্যের এই তদন্ত টিম চট্টগ্রাম ওয়াসা কার্যালয়ে এসে এসব বিষয় তদন্ত করেন।