অনন্ত সিং(১৯০৩–১৯৭৯)। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণের অন্যতম নায়ক। তিনি ১৯০৩ সালের ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম অনন্ত লাল সিং। তার পিতার নাম ছিল গোলাপ সিং, এবং মাতার নাম রাজকুমারী দেবী। তার পূর্বপুরুষ ভারতের আগ্রা অঞ্চলের অধিবাসী ছিলেন। অনন্ত সিং–এর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা খুব বেশি ছিল না। বিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি মাস্টার দা সূর্য সেনের সংস্পর্শে আসেন। অনন্ত সিং ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা ও শরীরচর্চায় পারদর্শী ছিলেন। সূর্য সেন তার অসাধারণ সাহস, সাংগঠনিক দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা, কর্মোদ্যোগ দেখে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন সহকর্মী হিসেবে অনন্ত সিংকে কাছে টেনে নেন। তারই উদ্যোগে তার স্কুলের ছেলেরা অসহযোগআন্দোলনে যোগ দেয়। একবার বিপ্লবীদের জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দ্যেশ্যে আসাম–বাংলা রেলওয়ে কোম্পানীর অর্থ লুঠ করার সময় তিনি ও তার সঙ্গীরা পুলিশকে পরাভূত করে পাহাড়ে পালিয়ে যান। ১৯২৪ সালে বিপ্লবী কাজকর্মের জন্য গ্রেপ্তার হয়ে চার বছর কারাগারে থাকেন। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি বিপ্লবী সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য ও তরুণদের দলে আনার জন্য সচেষ্ট হন। তার এই অক্লান্ত পরিশ্রম, সাংগঠনিক নৈপুণ্য ও পরিকল্পনা চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণকে অনেকাংশে সফল করে তোলে। ঐ সময় চট্টগ্রাম শহর চারদিনের জন্য বৃটিশশাসনমুক্ত ছিল। ফেনী স্টেশনে ধরা পড়ার উপক্রম হলে অনন্ত সিংহ সাহসিকতার সাথে দুই হাতে গুলি চালিয়ে পুলিশ বাহিনীকে একাকী ছত্রভঙ্গ করেন। তার অন্যান্য সহকর্মীদের বিচার ও জেলে নির্যাতনের সংবাদে বিচলিত হয়ে ২৮ জুন, ১৯৩০ কলিকাতা পুলিশ কমিশনার লোম্যানের কাছে এসে আত্মসমর্পণ করেন। বিচারে অনন্ত সিং–এর এবং অন্য এগারজনের দ্বীপান্তর হয়।
১৯৩২ সালে আন্দামান সেলুলার জেলে অনশন ধর্মঘট শুরু হলে রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীজী প্রমুখের চেষ্টায় বন্দীদের আন্দামান থেকে স্বদেশে ফিরিয়া আনা হয়। অনন্ত সিং ১৯৪৬ সালে মুক্তিলাভ করেন। জেলে থাকাকালীন সময়ে তিনি মার্কসবাদী দর্শন পাঠ করে তার দিকে আকৃষ্ট হন ও বাইরে এসে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। কিছুদিন তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনার কাজ করেন। তার প্রযোজিত অন্যতম চলচ্চিত্র ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনীত যমালয়ে জীবন্ত মানুষ। অনন্ত সিং তার জীবনের বহুমূখী অভিজ্ঞতা দিয়ে যেসব গ্রন্থ রচনা করেন সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহ (দুই খণ্ড), অগ্নিগর্ভ চট্টগ্রাম (দুই খণ্ড), ‘সূর্য সেনের স্বপ্ন ও সাধনা’, ‘আমি সেই মেয়ে’, ‘কেউ বলে ডাকাত কেউ বলে বিপ্লবী’ প্রভৃতি। তিনি ১৯৭৯ সালের ২৫ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।