অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক : শিক্ষবিদ ও জ্ঞানতাপস

| বৃহস্পতিবার , ২৮ নভেম্বর, ২০২৪ at ৬:৫৪ পূর্বাহ্ণ

অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক (১৯১৪১৯৯৯)। তিনি ছিলেন একজন দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী। রাষ্ট্র, অর্থনীতি, ইতিহাস, রাজনীতি, শিক্ষা প্রভৃতি বিষয়ে ছিল তাঁর অসাধারণ পাণ্ডিত্য। জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক সক্রেটিসের ন্যায় সারাটা জীবন অতিবাহিত করেছেন জ্ঞানার্জনে। কিংবদন্তিতুল্য জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাককে গ্রিক দার্শনিক ডায়োজিনিসের সাথে তুলনা করেছিলেন ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক খুশবন্ত শিং। আবদুর রাজ্জাকের জন্ম ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার পাড়াগ্রামে। ঢাকার মুসলিম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর পাস করেন। তিনি লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সে অধ্যাপক হ্যারল্ড লাস্কির অধীনে পিএইচডি করার জন্যে লন্ডন গমন করেন; তবে লাস্কি পরলোকগমন করায় তার থিসিস মূল্যায়ন করার মতো কেউ নেই এই বিবেচনায় তিনি থিসিস জমা নাদিয়েই (অর্থাৎ কোনো ডিগ্রি ছাড়াই) দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে এসে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবী তাঁর অনুগামী ছিলেন। আবদুর রাজ্জাক ছিলেন ‘শিক্ষকের শিক্ষক’। প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক অল্প কিছু প্রবন্ধ ছাড়া কিছুই রচনা না করলেও তার অসাধারণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞার কারণে কিংবদন্তির খ্যাতি অর্জন করেন। আহমদ ছফা তাকে নিয়ে ‘যদ্যপি আমার গুরু’ নামে একটি বই রচনা করেছেন।

এছাড়া সরদার ফজলুল করিম তার সাথে আলাপচারিতার ওপর ভিত্তি করে একটি বই লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজঃ অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের আলাপচারিতা। অধ্যাপক রাজ্জাকের পাণ্ডিত্যের জন্য দেশ বিদেশের নানা গুণীজন তার দিকে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। ডিক উইলসন তাঁকে বই উৎসর্গ করেছিলেন, খুশবন্ত সিং লিখেছিলেন তাঁকে নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসে এবং দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে দিয়েছিল সম্মানসূচক ডি লিট ডিগ্রি। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে পিএইচডি প্রদান করে। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে সম্মানিত করে। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৮শে নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধকী হতে যাচ্ছে!