অধিনায়ক মিরাজের কাছে বড় অর্জন, বড় পাওয়া এই জয়

স্পোর্টস ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ

দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ শেষ হতেই মুষ্ঠিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে আনন্দে লাফিয়ে ওঠেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। পরে যোগ দেন সতীর্থদের উদযাপনে। এমনিতেই প্রাণচঞ্চল চরিত্র মিরাজ। মাঠে নিজের উপস্থিতি জানান দেন তিনি নানাভাবেই। তবে এবার তার উচ্ছ্বাস যেন একটু বেশিই। মিরাজ এই সিরিজে বাংলাদেশের অধিনায়ক! নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত চোটের কারণে দলে না থাকায় এই সফরে অধিনায়ক মিরাজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজে সবশেষ তিন সফরের অভিজ্ঞতা বলে, ক্যারিবিয়ান সফর বাংলাদেশের জন্য ভীষণ কঠিন। এবারও ২০১ রানে হেরে শুরু হয় বাংলাদেশ ও মিরাজের।

দ্বিতীয় টেস্টেও টস জিতে আগে ব্যাটিং নিয়ে ১৬৪ রানে গুটিয়ে যান মিরাজরা। তবে এরপরই ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। অভাবনীয় সেই লড়াইয়ের পথ ধরে চতুর্থ দিন বিকেলে দল পৌঁছে যায় জয়ের ঠিকানায়। নেতৃত্বের দ্বিতীয় টেস্টেই এমন একটি জয়, সেটিও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে, মিরাজের কাছে এটা বিশাল প্রাপ্তি। ‘খুবই ভালো লাগছে। প্রথম ম্যাচে হারার পর দ্বিতীয় ম্যাচ জিততে পেরেছি, এটা অবশ্যই আমার জন্য বড় একটা অর্জন। যেহেতু আমি প্রথম অধিনায়কত্ব করছি, এটা আমার জন্য বড় একটি পাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে। ক্রিকেটাররা সবাই খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছে। সবাই আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছে। এজন্য কৃতিত্ব দিতে চাই সব ক্রিকেটারকে। আমি যেভাবে পরামর্শ দিয়েছি, সবাই মেনে নিয়েছে। এজন্য আমার কাছে খুব ভালো লাগছে।’ উইকেট ও নানা পারিপার্শ্বিকতা বাংলাদেশের জন্য কঠিন থাকলেও দলের ভেতর জয়ের তাড়না দেখতে পেয়েছিলেন অধিনায়ক। ‘যেহেতু এই কন্ডিশন খুব সহজ ছিল না, প্রতিটি ক্রিকেটারের জন্য অনেক কঠিন ছিল, সবাই মানসিকতা এরকম করে নিয়েছিল যে, ম্যাচটা জিততে হবে। সবাই মন থেকে চেয়েছে ম্যাচটি জেতার জন্য। এজন্যই আমরা জিততে পেরেছি।’

এই জয়ের পথে বাংলাদেশের চমকপ্রদ ঘটনা ছিল দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং। প্রথম ইনিংসে ১৬৪ রানের পুঁজি নিয়েও নাহিদ রানার দারুণ বোলিংয়ে ১৮ রানে লিড পায় বাংলাদেশ। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে শাহাদাত হোসেন, সাদমান ইসলাম, স্বয়ং মিরাজ, সবাই আগ্রাসী সব শট খেলা শুরু করেন। সিরিজের ধারার বিপরীতে দ্রুত বাড়তে থাকে দলের রান। প্রথম ১৫ ওভারে ১৬ বাউন্ডারিতে রান আসে ৯৯। পরেও অন্যরাও তাকে অনুকরণ করার চেষ্টা করেন। মিরাজ বললেন, তাদের পরিকল্পনারই অংশ ছিল এটি। ‘যখন আমরা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমেছি, তার আগে নিজেদের মধ্যে কথা বলেছি। বিশেষ করে, আমি একটা কথা বলেছিলাম যে, এই উইকেটে ইতিবাচক ছাড়া খেললে অনেক কঠিন। যেহেতু আমরা লিড পেয়েছি ১৮ রানের, আমাদের জন্য রান করাটা গুরুত্বপূর্ণ। জানতাম যে, এই উইকেটে আড়াইশর বেশি করতে পারলে আমাদের জন্য ম্যাচটা জেতা সহজ হবে।’ একটা ঝামেলা অবশ্য দেখা যায় তখন। অসুস্থতার কারণে ব্যাটিং করার মতো অবস্থায় ছিলেন না মোমিনুল হক। তিন নম্বরে ব্যাট করা নিয়ে তাই দলে ছিল খানিকটা দুর্ভাবনার ছোঁয়া। এখানেও দলকে উজ্জীবত করার পথ বের করেন তিনি। ‘বার্তাটা তাই এই ছিল যে, ইতিবাচক খেলতে হবে। সৌরভ ভাই (মোমিনুল) অসুস্থ হয়ে পড়ার পর দলের সবাই একটু পাজলড হয়ে যাচ্ছিল, কারণ ওই জায়গাটায় ব্যাট করা কঠিন। দিপুকে (শাহাদাত হোসেন) আমি বলেছিলাম, ও রাজি হয়েছে (তিনে খেলতে)। ওকে একটা কথা বলেছিলাম যে, ‘এই উইকেটে তুমি ইতিবাচক ব্যাটিং করো। প্রথম বলটিই মারার মতো পেলে মেরে দাও। কেউ তোমাকে কিছু বলবে না।’ ওইভাবেই খেলেছে ও, ওর ২৮ রান খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি যখন চার নম্বরে গেলাম, একই মানসিকতা নিয়ে খেললাম। কারণ এই উইকেট রানটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং ক্রিকেটারদের প্রতি এই বার্তা ছিল যে, একটি রানও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ব্যাটসম্যান যেন রানের জন্য খেলে। আমরা এই পরিকল্পনাতেই খেলেছি।’ এই ইনিংসে বাংলাদেশের ওভারপ্রতি রান ছিল শেষ পর্যন্ত ৪.৪৭, গোটা সিরিজের যা সর্বোচ্চ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচা বাগানে টি-টোয়েন্টি ট্রফি উন্মোচন বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড অধিনায়কের
পরবর্তী নিবন্ধওটিটিতে ‘শরতের জবা’ আসছে শীতে