অধিগ্রহণের ভূমিতে দখলের প্রতিযোগিতা

আনোয়ারায় ৬ লেইন টানেল সড়ক যানজট ও নানা অপরাধ, সওজ বলল শীঘ্রই উচ্ছেদ

এম নুরুল ইসলাম, আনোয়ারা | সোমবার , ১১ মার্চ, ২০২৪ at ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের ৪ মাস না যেতেই গুরুত্বপূর্ণ টানেল সড়কের জন্য অধিগ্রহণ করা ভূমি দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। এসব জমি দখল করে ভাসমান দোকান বসিয়ে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। অনেক জায়গা দখল করে তৈরি করছে স্থাপনা। ৬ লেইন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগে সড়ক দখলের প্রতিযোগিতায় বাড়ছে দুর্ঘটনা, যানজট, চুরিছিনতাইসহ নানা অপরাধ। স্থানীয়দের মাঝে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

দক্ষিণ চট্টগ্রাম সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও বঙ্গবন্ধু টানেল ছয় লেন সড়কের প্রকল্প পরিচালক সুমন সিংহ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শীঘ্রই অধিগ্রহণের ভূমি থেকে অবৈধ দখলদারদের স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু টানেল ছয় লেন সংযোগ সড়ক ও বঙ্গবন্ধু টানেল ছয় লেন সড়কের সংযোগস্থল চাতরি চৌমহনী বাজারের দক্ষিণের গোলচত্বরের আশপাশ এলাকায় সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত জমি রাতের আঁধারে দখল হয়ে ভাসমান দোকান তৈরি হচ্ছে। একইসাথে পিএবি সড়ক, সিইউএফএল সড়ক ও আনোয়ারাবরকল সড়কসহ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কের অধিগ্রহণকৃত জমি প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় স্থানীয় চিহ্নিত ব্যক্তিরা রাতারাতি দখল নিয়ে ভরাটসহ ভাসমান দোকান ঘর তৈরি করে চলেছে। যার কারণে বর্তমানে দখলের কবলে পড়ে বঙ্গবন্ধু টানেলের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল গোলচত্বর এলাকা আকারে ছোট হওয়ার পাশাপাশি যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়ে গেছে। বর্তমানে এ এলাকায় সামাজিক অপরাধও বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। এছাড়া গোলচত্বর এলাকায় সড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ গাড়ি স্ট্যান্ড। দখলের প্রতিযোগিতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না টানেল সড়কের কালাবিবি দিঘির মোড়, পিএবি সড়কের শোলকাটা, ধানপুরা রাস্তার মাথা, বরুমচড়া রাস্তার মাথা ও সরকারহাট। কালাবিবির মোড় থেকে আনোয়ারাবরকল সড়কের আনোয়ারা উপজেলা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের বিভিন্ন অংশ ভরাট করে দখলে নেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, চাতরি এলাকা, সিইউএফএল রোডের দুই পাশের বিভিন্ন অংশ দখলদারদের অধীনে চলে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মইন উদ্দীন বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হওয়ার পর চার মাস না যেতেই টানেল সড়কের গোলচত্বরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রাতারাতি ব্যাঙের ছাতার মতো ভাসমান দোকান নির্মাণ করে দখল প্রতিযোগিতার কারণে গোলচত্বরের আকার ছোট হয়ে গেছে। এতে করে এই স্থানে যানজট হয়। দুর্ঘটনা বেড়েছে। এ এলাকায় চাঁদাবাজি চলছে। টানেল উদ্বোধনের পর আনোয়ারায় জমির দাম বেড়ে যাওয়ায় এক শ্রেণীর ভূমিখেকো ছয় লেন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগে সড়কের অধিগ্রহণের জমি দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তিনি অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান।

মৌলানা মো. ইকবাল অভিযোগ করেন, সড়ক দখল করে নির্মিত ভাসমান দোকানের কারণে আমরা প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

চাতরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দীন চৌধুরী সোহেল জানান, বঙ্গবন্ধু টানেল সংযোগ সড়কের গোলচত্বরে অবৈধ স্থাপনা সরানো হয়েছে। চাতরি চৌমুহনী বাজারের সড়কের উপর থেকে দোকানপাট একাধিকবার সরানো হলেও আবার দখলে নিয়ে নিচ্ছে। বঙ্গবন্ধু টানেল সড়ক ও চাতরি চৌমহনী বাজারে যানজট নিরসন, দুর্ঘটনা রোধ ও আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

দক্ষিণ চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপথের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী ও বঙ্গবন্ধু টানেল ছয় লেন সড়কের প্রকল্প পরিচালক সুমন সিংহ বলেন, আমরা জানতে পেরেছি বঙ্গবন্ধু টানেল ছয় লেইন সড়ক প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগে অধিগ্রহণের ভূমি দখল করে রাতের আঁধারে দোকানপাট তৈরি হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু টানেল ও টানেল সংযোগ সড়কের যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচলের লক্ষ্যে সড়কের ভূমি দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে এসব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে নোটিশ প্রদান করার জন্য সার্ভেয়ারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই সড়ক থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকটি মাছেই হওয়া যায় কোটিপতি, যদি…
পরবর্তী নিবন্ধমাইক্রো ও টেক্সির সংঘর্ষে প্রাণ গেল জিসানের