এবারের বাজেটকে অতিমাত্রায় গতানুগতিক এবং কোথাও অর্থমন্ত্রীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে মন্তব্য করে একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মইনুল ইসলাম বলেছেন, আমলাদের তৈরি বাজেটে অর্থমন্ত্রী কিছু বক্তব্য জুড়ে দিয়ে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন। এতে নীতি এবং দর্শনের নেতৃত্বের কিছু নেই। নেই কোন নতুনত্ব। এ বাজেটে জনগণ কোনভাবেই উপকৃত হবে না এবং যেভাবে চলছে ওভাবে চলবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বলেন, করোনাকালে বাজেট নিয়ে মানুষের অনেক বেশি প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। স্বাস্থ্যখাতে এত বড় একটি ধাক্কার পরও তা নিয়ে বাড়তি মনযোগ দেখা যায়নি। বাজেটে স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ থেকে করোনার বরাদ্দ বাদ দিলে সেখানে আর তেমন কোন পরিবর্তন চোখে পড়বে না।
শিক্ষা খাতে বড় ধরনের প্রতারণা করা হয়েছে মন্তব্য করে ড. মইনুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা খাতের সাথে প্রযুক্তি খাতকে মিলিয়ে ফেলা হয়েছে। এতে প্রযুক্তি খাতের ব্যয় আলাদা করা হলে শিক্ষা খাতে আর তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু থাকবে না। বাজেটে শিক্ষা খাতে ১২ শতাংশেরও কম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা এ খাতে পরিবর্তন আনার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে অপ্রতুল।
কর্পোরেট ট্যাঙ ২.৫ শতাংশ কমানোর ফলে রাজস্ব ঘাটতি বেড়ে যাবে। এটা কেন করা হলো তা বোধগম্য নয়। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখার মাধ্যমে অনৈতিক এবং অসাংবিধানিক কাজ করা হয়েছে। নিয়মিত ট্যাঙ দেন এমন একজন মানুষ কষ্ট করে আয় করে ১৫, ২০ এবং ২৫ শতাংশ ট্যাঙ পরিশোধ করবেন, আর কালো টাকার মালিক তার অনুপার্জিত অর্থ মাত্র ১০ শতাংশ ট্যাঙ দিয়ে টাকা সাদা করার সুযোগ পাচ্ছেন-এটা অন্যায়। কালো টাকার মালিকদেরকে ট্যাঙ নেটের আওতায় আনা না গেলে অনৈতিক এ কার্যক্রম ঠেকানো যাবে না। তিনি কালো টাকার মালিকদের ট্যাঙ নেটের আওতায় আনার ব্যাপারে বাজেটে গুরুত্বারোপ করা দরকার ছিল বলেও মন্তব্য করেন।
একটি দেশ অনুন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে আয়করের উপর গুরুত্ব দিতে হয়, আয়কর খাত থেকে আয় বাড়াতে হয়। কিন্তু এবারের বাজেটে তার কোন লক্ষণ দেখা যায়নি। এবারও আয়কর রাজস্ব আয়ের তৃতীয় খাত হিসেবে থেকে যাবে। এটিকে দ্বিতীয় খাতে উন্নীত করার কোন পরিকল্পনা বাজেটে নেই।
গতকাল ঘোষিত বাজেটে কোন পরিবর্তনই আসবে না বলে মন্তব্য করে ড. মইনুল ইসলাম বলেন, গতানুতিক ধারায় যেভাবে সব চলছে, এ বাজেটেও সেভাবেই চলবে। কোন ইতিবাচক পরিবর্তনের আশা এ বাজেট জাগাতে পারেনি।
পোল্ট্রি ও ডেইরি শিল্পের জিনিসপত্রের দাম কমানোর ফলে সাধারণ খামারিরা উপকৃত হবেন। জনগণ এখান থেকে কিছু সুফল পাবেন। এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার।
কোভিডের কারণে ঘাটতি বাজেট হবে এটা স্বাভাবিক ছিল। এবারও ঘাটতি বাজেট ঘোষিত হয়েছে। ৬.২ শতাংশ ঘাটতি অভ্যন্তরীণ ঋণ এবং বিদেশি সহায়তা দিয়ে মেটানো হবে। তবে সবকিছু মিলে অতি সাধারণ এবং গতানুগতিক এ বাজেট দিয়ে জনগণের কোন উপকারই হবে না বলেও খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম মন্তব্য করেন।