চট্টগ্রাম মহানগরীর ট্রাফিক সিস্টেমে এখনো আধুনিকতা আসেনি। ইতোপূর্বে নেওয়া সমস্ত উদ্যোগ ভণ্ডুল হয়ে গেছে। বিপর্যস্ত হয়েছে নগরীর ট্রাফিক সিস্টেমকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা। গত ৬ই জুন দৈনিক আজাদীতে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ‘নগরীর অটো ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা অচল’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থায় অটো সিগন্যাল ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। কার্যত ভণ্ডুল হয়ে গেছে নগরীর ট্রাফিক সিস্টেমকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগও । মোড়ে মোড়ে দীর্ঘদিন ধরে জ্বলা লাইটগুলোও চুরি হয়ে যাচ্ছে। যে কোন সময় লাইট স্ট্যান্ডের লোহাগুলোও খুলে নিয়ে বিক্রি করে দিতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। কোন কোন স্ট্যান্ডে রাত-দিন জ্বলছে লাইটগুলো। গাড়ি চলছে হাত ইশারায়। চট্টগ্রাম মহানগরে অটো ট্রাফিক সিগন্যাল সিস্টেম গড়ে তোলা অসম্ভব একটি ব্যাপার বলেও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন। তাঁরা জানান, বিশ্বমানের বাসযোগ্য একটি নগরে রাস্তার পরিমাণ থাকতে হয় অন্তত ৩০ শতাংশ। কিন্তু চট্টগ্রাম নগরীর রাস্তার পরিমাণ ৯ শতাংশ। প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে অপ্রতুল। রাস্তায় যানবাহনের চাপ অত্যধিক।
উন্নত সব শহরেই স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল পদ্ধতি কার্যকর সম্ভব হলে আমাদের দেশে তা কেন সম্ভব না? পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় ত্রুটিই এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন না হওয়ার মূল কারণ। সবার আগে অনুসন্ধান করে বের করতে হবে সমস্যাটা কোথায়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অটো ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন রাস্তা ও ফুটপাত দখলমুক্ত করা। নগরীতে পার্কিং সুবিধা নিশ্চিত করা। একটি উন্নত শহরের জন্য ৩০ ভাগ রাস্তা থাকা দরকার। কিন্তু আছে নয় ভাগেরও কম। যা আজাদীর প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। রাস্তা যেটুকু আছে, তার মধ্যে প্রায় অর্ধেক রাস্তা ব্যবহারের অনুপযোগী। তাই রাস্তা বাড়ানোও জরুরি। পাশাপাশি পরিবহন নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। সর্বোপরি একটি সুনির্দিষ্ট সংস্থাকে সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিতে হবে। পর্যায়ক্রমে এ পদ্ধতির আওতায় আনতে হবে সকল রাস্তা। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও পরামর্শ অনেকের। সঠিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মত দিয়েছেন তাঁরা। সর্বোপরি এসব অটো ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা বাস্তবায়নের আগে দেশ বিদেশের বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগাতে হবে। আমরা যতটুকু জেনেছি, উন্নত বিশ্বের সব শহরের স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল পদ্ধতিতে চলে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ। আমাদের দেশে অপরিকল্পিত নগরায়নসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ এ কাজে বিনিয়োগ হয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। তবুও শত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আধুনিক ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির দিকে আমাদের এগিয়ে যাওয়া সময়ের দাবি। দ্রুত হাত ইশারা আর বাঁশি প্রথা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থার জটিলতার কারণে নগরীতে যানজটের চিত্র প্রত্যক্ষ করি নিত্যদিন। ট্রাফিক বিভাগের পরিকল্পনাহীনতা, অবহেলা ও লোকবলের অভাবের কারণে এই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। যানজটের কারণ খুঁজতে গেলে জানা যায়, জটিলতার মূলে রয়েছে সঙ্কেত ব্যবস্থা। নিয়ন্ত্রণহীন যানবাহনের এই শহর আধুনিক সঙ্কেত ব্যবস্থা সামলাতে না পারায় বিভিন্ন সড়কে দীর্ঘ জটের সৃষ্টি হয়েছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ১৯৮৯-৯০ সালে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে সিগন্যাল বাতি লাগানোর মাধ্যমে নগরীতে সিগন্যাল লাইট স্থাপন শুরু হয়েছিল। ইতোমধ্যে নগরীর ৪২টি মোড়ে সিগন্যাল লাইট স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারের অভাবে ট্রাফিক লাইটগুলোর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়।
ট্রাফিক সিস্টেমের বিদ্যমান পরিস্থিতির উন্নয়নে নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়। হাতের ইশারার পরিবর্তে অটো সিগন্যালিং এর মাধ্যমে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এজন্য ট্রাফিক বিভাগ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছিল। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাথে সমন্বয় করে ট্রাফিক সিগন্যালিং সিস্টেমকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি আর আলোর মুখ দেখেনি। অটো ট্রাফিক সিস্টেমের পথে কিছুটা অগ্রসর হয়েও পুরো কার্যক্রমে চলে আসে স্থবিরতা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আধুনিক বিশ্বে রাস্তায় পুলিশ থাকে না। লাল বাতি জ্বলে- গাড়ি বন্ধ হয়, সবুজ বাতি জ্বলে- গাড়ি চলে। আমাদের এখানে এটা চালু করা দরকার। তবে এই সিগন্যালের কারণেই সাময়িকভাবে যানজট দেখা দিলেও তা হবে আধুনিক ও সময়োপযোগী।