অজানা এক ইতিহাস

প্রাচীন সভ্যতার দেশ মিশর

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক | মঙ্গলবার , ৯ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ

মিশরীয় পিরামিড হল-মিশরে অবস্থিত প্রাচীন পিরামিড-আকৃতির প্রস্তরনির্মিত স্থাপনাসমূহ। ২০০৮ সাল পর্যন্ত মিশরে ১৩৮ টি পিরামিড আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলির অধিকাংশই নির্মিত হয় প্রাচীন ও মধ্যকালীন ফারাওদের রাজত্বকালে তাঁদের ও তাঁদের পত্নীদের সমাধিসৌধ হিসেবে। মিসরের প্রাচীনতম পিরামিডগুলি আবিষ্কৃ হয়েছে মেমফিসের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত সাক্কারায়। এগুলির মধ্যে সবচেয়ে পুরনোটি হল তৃতীয় রাজবংশের রাজত্বকালে নির্মিত জোসারের পিরামিড (নির্মাণকাল খিষ্টপূর্ব ২৬৩০-২৬১১ অব্দ)। স্থপতি ইমহোটেপ এই পিরামিড ও পিরামিড-সংলগ্ন চত্বরের নকশা প্রস্তুত করেছিলেন। সাধারণভাবে এটিকে বিশ্বের প্রাচীনতম মসৃণ প্রস্তরনির্মিত স্থাপনা মনে করা হয়। মিসরীয় পিরামিডগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত পিরামিডগুলি দেখা যায় কায়রো শহরের উপকন্ঠে গিজা এলাকায়। গিজার বেশ কয়েকটি স্থাপনাকে বিশ্বের অন্যতম বৃহদাকার স্থাপনা বলে মনে করা হয়। গিজায় অবস্থিত খুফুর পিরামিড মিশরীয় পিরামিডগুলির মধ্যে বৃহত্তম। প্রাচীন বিশ্বের সাতটি আশ্চর্য বস্তুর মধ্যে পরিগণিত স্থাপনাগুলির মধ্যে এটিই একমাত্র অদ্যাবধি বিদ্যমান। মিসরের পিরামিড দেখার জন্য সবচেয়ে বেশী পর্যটক যাতায়াত করেন এবং পৃথিবীর বৃহত্তম পর্যটক আকর্ষণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। প্রাচীন মিসরীয়রা পিরামিড তৈরী করতেন তাদের মৃত রাজা-বাদশাদের মরদেহ সংরক্ষণ করার জন্য। তাদের বিশ্বাস, এতে অমরত্ব লাভ হয়। গিজার পিরামিড বৃহত্তর কায়রোর পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত ডাউন টাউন থেকে ১০ কি.মি দূরে। পিরামিড পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের সভ্য জাতিরা নির্মান করে থাকেন। চার হাজার বছর আগেকার পৃথিবীর বৃহত্তম স্থাপনা ছিল পিরামিড। প্রথমটি ছিল উধংযঁৎ ঘবপৎড়ঢড়ষরং এর রেড পিরামিড, পরে রাজা খুফু বৃহত্তম পিরামিড নির্মাণ করেন। দুটিই মিসরের। এটি লাইমস্টোন দিয়ে গঠিত, রেড গ্রানাইট ব্লক দিয়ে ভেতরের অংশটা। এটি ২০ লক্ষ ব্লক দ্বারা নির্মিত, এক একটির ওজন ২.৫ টন থেকে ১৫ টন পর্যন্ত, চারদিকে ১৩ একর জমি দ্বারা পরিবেষ্টিত। পিরামিডের আসল উচ্চতা ৪৮৮ ফুট কিন্তু বর্তমানে ৪৫৫ ফুট। এটি সবচেয়ে উঁচু পিরামিড, মাঝারী পিরামিড নির্মাণ করছেন কযধভৎব, রাজা খুফুর ছেলে। এটির উচ্চতা ১৩৬ মিটার, রাজা কযধভৎব এর মরদেহকে এখনও মমি করে রাখা হয়েছে। সবচেয়ে ছোট পিরামিড তৈরি করেছেন গবহশধঁৎব, এটির উচ্চতা ৬২ মিটার। নতুন রাজতন্ত্র শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৫০-১০৭০ সালে, অষ্টাদশ রাজবংশ দিয়ে- যা মিসরকে আন্তর্জাতিক শক্তিতে রুপান্তরিত করে। এ রাজত্বকালেই শাসন করেন জনপ্রিয় শাসক ফারাওগণ ঞযঁঃসড়ংব ওওও, অশযবহধঃবহ এবং তাঁর স্ত্রী নেফারতিতি, তুতানখামুন এবং দ্বিতীয় রেমেসিস। পরবর্তীতে লিবিয়ান, সিরিয়ানরা এদেশে অনুপ্রবেশ করে এবং আবার মিসরীয়রা তাদের দেশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনেন। একত্রিশতম রাজবংশ ছিল ফারাওদের, শেষ রাজবংশ হিসেবে শাসন কার্য পরিচালনা করতেন পরবর্তী খ্রিষ্টপূর্ব ৩৪৩ সালে। রাজা ঘবপঃধহবনড় ওও যুদ্ধে পরাজয়ের পর এটি পার্সিয়ান (ইরান) দের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। একত্রিশতম রাজবংশ বেশীদিন টেকেনি, পার্সিয়ানরা অনেক কাল মিশরকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন আলেক্সজান্ডার, দি গ্রেট এর অধীনে না আসা পর্যন্ত। এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম। আমাদের মিশরীয় গাইডের নাম ছিল আহমেদ-আরবী বলেন না, অনর্গল ইংরেজী বলেন, বেশ চটপটে- ঞড়ঁৎরংস এর ওপর মাস্টার্স করা আহমেদ মিউজিয়ামের ভেতরটা দেখাতে নিয়ে গেলেন-আর ব্রিফিং দিচ্ছেন। ৬ ডলার অতিরিক্ত দিয়ে মিশরের ঐতিহাসিক নিদর্শন ‘মমি’ দেখলাম। যেটা দেখার লালিত স্বপ্ন ছিল আজীবনের, আজ তা বাস্তবে পরিণত। প্রাণভরে দেখলাম-বুকভরে দেখলাম, মহান আল্লাহতা’য়ালার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা এ ঐতিহাসিক নিদর্শন কাছ থেকে দেখতে পেরে। মিশরীয় রীতি অনুযায়ী মিশরের সব রাজাকেই ফেরাউন বলেন মিশরীয়রা। তেমনি হযরত মূসা (আ:) আমলের ফেরাউনের নাম হল দ্বিতীয় নেমেসিস, যে নিজেকে খোদা দাবি করেছিল।
লেখক: সভাপতি, রাউজান ক্লাব, সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি),
জেনারেল হাসপাতাল, রাঙ্গামাটি

পূর্ববর্তী নিবন্ধনারীর এগিয়ে যাওয়া
পরবর্তী নিবন্ধসামাজিক বিধি ব্যবস্থায় সম্পদের বন্টন এবং দারিদ্র্য বিমোচন